Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রভিশন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ১১ ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ও বেসরকারি সাতটি ব্যাংক রয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে কিছু ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা ক্যুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যাতে করে খেলাপি ঋণ আদায় না হলেও ব্যাংকগুলো যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকগুলো সমপরিমাণ আমানত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এতে ওই ব্যাংকের শেয়ারে নিরুৎসাহিত হন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঋণ অনিয়মে আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের ৮৯৩ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৮৮৬ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের ৯২০ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের ১ হাজার ২১৫ কোটি, কমার্স ব্যাংকের ৫৬৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১ হাজার ৬৯৭ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ২০৩ কোটি, এমটিবির ২৪৪ কোটি, সোস্যাল ইসলামি ব্যাংকের ১৯৮ কোটি এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের সর্বশেষ অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এ হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকিং খাত আগে থেকেই চাপের মুখে ছিল। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে এই চাপের পরিমাণ আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ঝুঁকি কমানোর জন্য খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। অনেক ব্যাংক তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে নিয়ম-নীতির মধ্যে ঋণ বিতরণ করতে হবে। এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে ব্যাংকের আয় ও মুনাফা আরও কমে যাবে।
উল্লেখ্য, খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে অর্থ এনে এটি সংরক্ষণ করা হয়। ফলে পরিচালন মুনাফা বেশি হলেও নিট মুনাফা কমে যায় এবং শেয়ারহোল্ডাররা মুনাফা কম পান।#



 

Show all comments
  • আশিক ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৮:১৭ এএম says : 0
    ব্যাংক খাতের দুর্নীতি অনতিবিলম্বে বন্দে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • আমিনুল ইসলাম ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৮:১৮ এএম says : 0
    ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি রোধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ফাহাদ ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৮:১৮ এএম says : 0
    ব্যাংকগুলোকে নিয়ম-নীতির মধ্যে ঋণ বিতরণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহজালাল ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৮:২০ এএম says : 0
    তদন্ত কমিটি গঠন করে এই টাকাগুলো উদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • ইউনুস ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৯:০১ এএম says : 0
    ঋণখেলাপির ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে আরো অনেক বেশি কঠোর হতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • জুয়েল ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৯:০২ এএম says : 0
    জনগণের টাকা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে আত্মসাৎ করছে এদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত এবং এদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • মোবারক হোসেন ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৯:০৯ এএম says : 0
    যেসব বেসরকারি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি আছে সেসব বেসরকারি ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স স্থগিত করা হোক। আর সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও পরিচালকদের এক মাসের সময় দিন। যদি তারা এই সময়ের মধ্যে লাভের টাকা তুলতে পারে তাহলে তাদের চাকরি থাকবে না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৯:১০ এএম says : 0
    ঋণখেলাপির সাথে জড়িত প্রত্যেককে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Matin ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৭:৩৭ পিএম says : 0
    Loan should be assessed impartially and disbursement should be made after completion of all documentation formalities without any influence. Sometimes regulatory body should check about correct formalitirs is o.k. All related officilas should carry out their respective responsibilities accurately. There should be a impertial and confidential team to check whether any misdeed is occured.
    Total Reply(0) Reply
  • JahangirSalim ২৫ আগস্ট, ২০২০, ৯:৪৯ পিএম says : 0
    ব্যাংকিং খাত মার্জার হওয়া দরকার। জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ কমর উদ্দিন ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১০:২৯ এএম says : 0
    আমার ধারণা প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রকাশিত পরিমাণের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কারণ ব্যাঙ্কগুলো নানা কৌশলে ঋণ অশ্রেণীকৃত রাখে বা খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.mahafuz ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৬:০৮ পিএম says : 0
    ব্যাংক গুলোকে আরো সচেতন ও প্রভিশন ঘাটতি ঋণখেলাপি ব্যক্তিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেলাপি ঋণ থেকে মুক্ত করা বর্তমান সময়ে ব্যাংকের মূল কাজ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.mahafuz ২৬ আগস্ট, ২০২০, ৬:০৮ পিএম says : 0
    ব্যাংক গুলোকে আরো সচেতন ও প্রভিশন ঘাটতি ঋণখেলাপি ব্যক্তিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেলাপি ঋণ থেকে মুক্ত করা বর্তমান সময়ে ব্যাংকের মূল কাজ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্যাংক

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ