পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা আর মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকান্ডের খবরের মধ্যে মিডিয়ায় প্রকাশিত দু’টি খবর পাঠকের নজর কেড়েছে। এক. ‘রাজশাহীতে ড্রেনে টাকা কুড়াচ্ছে মানুষ’। দুই. ‘দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম গ্রেফতার’।
কি আশ্চর্য! ড্রেনে ভাসছে টাকা! এক হাজার, ৫শ’, একশ’, ৫০ টাকার নোট? ভাবুন তো! ক্ষমতাসীন দল ও দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের জেলা পর্যায়ের দু’চারজন নেতা দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন? এটা নাটক-সিনেমার কোনো কাহিনী নয়। মিডিয়ার কোনো খবরও নয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে এই তথ্য বের হয়ে এসেছে। সিআইডি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের মামলায় শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ঢাকার কাফরুল থানায় দুই হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় সিআইডি একটি মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়।
শুধু এরাই নয়, ক্ষমতাসীন দলটির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের অনেকেই টাকার পাহাড় গড়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাদ দিয়ে প্রায়ই তাদের নিয়ে মিডিয়ায় খবর আসে। প্রশ্ন হলো- এতো টাকা এরা কোথায় পেলেন? এদের পাচার করা টাকা যায় কার কাছে? পর্দার আড়ালে রাঘব-বোয়াল কারা?
বিদেশে টাকা পাচারের কাহিনী নতুন খবর নয়। বাংলাদেশের অনেকের বিরুদ্ধে টাকা পাচার করে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে রাখার খবর পুরোনো। ’৯০ এর রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর এরশাদের বিরুদ্ধে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে টাকা পাচারের অভিযোগ উঠায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি ফেয়ার ফ্যাক্স নামের একটি বিদেশি কোম্পানীকে ‘এরশাদের টাকা পাচার’ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এরপর পানামা পেপারসের রিপোর্টের কথা সবাই জানেন। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) বরাদ দিয়ে পানামা পেপারসের খবরে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের ৪৩ জন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাগুজে বা ভুয়া কোম্পানি করে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। পানামা পেপারসে যাদের নাম উঠেছে, তাদের কেউ প্রতিবাদ করেছেন বলে শোনা যায়নি। এ ছাড়াও কানাডায় ‘বেগম পল্লী’ ও মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ বানানোর খবর পুরোনো।
ইংরেজ চলে যাওয়ার পর পাকিস্তানের শাসনামলে বলা হতো ২২ পরিবারের হাতে সবকিছু। এখন সেই সংখ্যা ‘২২শ’ বা ২২ হাজার পরিবার’ গল্পগুলো পুরোনো হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া, দেশে সম্পদ বানানোর পর বিদেশে টাকা পাচার করার চিত্র ভয়াবহ ভাবে বেড়ে গেছে। এতো টাকা আসে কোথা থেকে? ক্ষমতাসীন দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা ও অঙ্গ সংগঠনের তৃতীয় সারি ও জেলা, উপজেলা, থানা পর্যায়ের কিছু নেতা এতো টাকার মালিক হলেন কিভাবে? কাদের সহায়তায় তারা এতো টাকা বানালেন? বিদেশে যে টাকা পাচার করেন সেটা কার কাছে যায়?
এমন হাজারো প্রশ্ন মানুষের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু মানুষ রহস্যের ক‚ল-কিনারা করতে পারছেন না। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকদের অনেকেই দলের তৃতীয় সারির নেতা, পাতিনেতা, উপনেতাদের এতো টাকার মালিক হওয়ার খবরে আশ্চার্য হচ্ছেন। সে টাকা বিদেশে পাচার করার রহস্য তারা ভেদ করতে পারছেন না। কোটি কোটি টাকা পাচার, সিন্দুকে কোটি কোটি টাকার গাট্টির সচিত্র খবর মিডিয়ায় দেখেশুনে তারাও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ছেন।
২০১৯ সালে ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযানের পর দেশবাসির সামনে আবিষ্কার হলো ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদার ক্যাসিনো পল্লীখ্যাত ‘লাস ভেগাস’ বানানো হয়েছে। যুবলীগের এক একজন নেতা ক্যাসিনো পরিচালনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর্যায়ে চলে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিন যে টাকা-ডলার-সোনাদানার উদ্ধার হয় সচিত্র সে খবর মিডিয়ায় দেখে অনেকের কাছে রুপকথার গল্পের মতো মনে হয়েছে।
ক্যাসিনোকান্ডে ঢাকার গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা এনামুল হক এনু ও তার ভাই রুপন ভ‚ঁইয়াকে গ্রেফতারের সময় সিন্দুক থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকাসহ বিপুল স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার কয়েকদিন পর আবার তাদের ১১৯/১ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে মমতাজ ভিলায় অভিযান চালিয়ে র্যাব প্রায় ২৭ কোটি (২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা) টাকা পেয়েছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও আত্মগোপনে চলে যান যুবলীগের নেতা কাজী আনিসুর রহমান। তিনি যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পিয়নের চাকরি দিয়ে জীবন শুরু করে দলটির দপ্তর সম্পাদক হন। ৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করা যুবলীগের এই নেতা তিনশ কোটি টাকার মালিক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিডিয়ায় জানিয়েছে, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে সুরম্য অট্টালিকা ছাড়াও আনিসের ময়মনসিংহের ভালুকা, ঢাকার স্বামীবাগ, ইত্তেফাক মোড়, যাত্রাবাড়ী, শুক্রাবাদ, উত্তরায়ও বাড়ি আছে তার। এছাড়া লালমাটিয়া, ঝিগাতলা ও ধানমন্ডিতে আছে কয়েকটি ফ্ল্যাট। উত্তরা, মিরপুর ও গুলশানে মার্কেটে আনিসের নামে আছে দোকান। সে নারায়ণগঞ্জের একটি চটের মিলেরও মালিক। সে বিদেশেও টাকা পাচার করেছে।
নরসিংদী জেলার যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে হোটেল ওয়েস্টিনের ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্যুইট’ থেকে গ্রেফতারের সময় তার বিলাসী জীবন কাহিনী প্রকাশ পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত পাপিয়া ওইদিন হোটেলের বিল ৮১ লাখ ৪২ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করেন।
কয়েকদিন আগে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী শাকিলকে ১২শ’ কোটি টাকার চেকসহ গ্রেফতার করা হয়।
দেশে গত কয়েক বছরে শামীমা নূর পাপিয়া, কাজী আনিসুর রহমান, ইসমাইল হোসেন সম্রাট, জি কে শামীম, এনামুল হক এনু, রুপন ভ‚ঁইয়া, রাব্বী শাকিল, নিশান মাহমুদ শামীমের মতো শত শত সম্পদশালী গঁজিয়ে উঠছেন। তারা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। বিলাসী জীবনযাপনের পাশাপাশি বিদেশে পাচার করছেন। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে মানুষ বুঝতে পারে ওই পাতিনেতা, উপজেলা টাকার পাহাড় গড়েছেন। তার অপকান্ডের চিত্রও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মিডিয়াকে জানিয়ে দেন তাদের সহযোগীরাই।
মিডিয়ায় এইসব মনগড়া তথ্য প্রচার করছে এমন নয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধান করে এইসব তথ্য জানাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে- এদের হাতে কি ‘আলাদিনের যাদুর চেরাগ’ আছে? হঠাৎ করে এটা এতো টাকার মালিক হন এরা কিভাবে? পর্দার আড়ালে থেকে কারা এদের সৃষ্টি করছেন? এরা যে বিদেশে টাকা পাচার করে সে খবর জানা যায়। কিন্তু পাচারের সেই টাকা কার কাছে যায়? সে খবর কেউ জানতে পারে না। মানুষ পর্দার আড়ালে থাকা গডফাদার-গডমাদারদের মুখ দেখতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।