Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্বল তদন্তে অব্যাহতি পাচ্ছে মানবপাচারকারীরা

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দায়সারা তদন্তের কারণে মানব পাচারের মতো বড় অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যাচ্ছে জড়িতরা। মানবপাচারকারী চক্রের কবলে পড়ে একদিকে বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়ছে অন্যদিকে নি:স্ব হচ্ছে বহু পরিবার। একই সাথে আন্তজাতিকভাবে দেশের সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছে। মানবপাচারকারী মামলার সঠিক তদন্ত না হওয়ায় ১৪ শতাংশ মামলায় আসামির সাজা হয়েছে। বাকি ৮৬ শতাংশ বিচারে আসামি খালাস পেয়েছে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১০২৬টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে খালাস পেয়েছেন ৯১২টি মামলার আসামি। অব্যাহতি পেয়েছেন ৮৩টি মামলার আসামি। আর সাজা হয়েছে ৩১টি মামলার আসামিদের। সংশ্লিষ্ট্র সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫৭৬টি মামলা নিষ্পত্তি করেন ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১৪টি মামলায় সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ৫১৪ মামলার আসামিরা। ২০২১ সালে ৪১৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে ১৭টি মামলায় সাজা হয়। খালাস পেয়েছেন ৩৬১ মামলার আসামিরা। ২০২০ সালের ১২ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালত ৩৭টি মামলা নিষ্পত্তি করেন। নিষ্পত্তি হওয়া কোনো মামলায় সাজা হয়নি। বরং সবাই খালাস পেয়েছেন।
অধিকাংশ মামলার অব্যাহতির আদেশে বিচারক উল্লেখ করেন, আসামিদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর অধীনে অভিযোগ গঠনের উপাদান বিদ্যমান নেই। অভিযোগ গঠনের উপাদান না থানায় মামলার দায় হতে আসামিদের অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, মানবপাচার মামলাগুলোর তদন্তে পুলিশকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। সময়ের অভাবে সঠিকভাবে মামলা তদন্ত করা সমস্যা হয়। দায়সারা তদন্ত থেকে দূরে থাকতে হবে। সঠিক তদন্তে প্রকৃত অপরাধীরা চিহ্নিত হবে। প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতায় এলে অবশ্যই মানবপাচার অনেকটা কমে আসবে। একই সাথে জড়িতরা মামলা থেকে খালাস পাবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, দুর্বল চার্জশিটের অন্যতম কারণ হচ্ছে মামলার ঘটনা দেশের বাইরে থাকে। সেখানে গিয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনা পান না। থানা পুলিশ বা তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তের বাইরে আরও অনেক কাজ থাকে। সে কারণে মানবপাচার মামলার তদন্তে এত বেশি সময় দিতে পারেন না। মামলার যে ডকুমেন্ট সেগুলোও আনা হয় না।
তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা কঠিনভাবে মামলাগুলো তদন্ত করতে চান। তদন্তের সময়সীমা থাকায় তারা সময়ের অভাবেও অনেক সময় দুর্বল চার্জশিট দাখিল করেন। ফলে চার্জগঠনের মতো উপাদান না থাকায় আসামিদের খালাস প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, একটা মানবপাচার মামলার আসামি ২০ জন থাকলে সেখানে বিশ জেলার হয়ে থাকে। দালালরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিকটিমদের নিয়ে আসেন। দালালদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়া কষ্টসাধ্য। মামলা তদন্তের একটা সময়সীমা রয়েছে। সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।
ডিএমপির ডিসি মো. ফারুক হোসেন বলেন, দালালরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিকটিমদের নিয়ে আসেন। দালালদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়া কষ্টসাধ্য। মামলা তদন্তের একটা সময়সীমা রয়েছে। সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। সমন্বয়ের অভাবের কারণে অনেক সময় দুর্বল চার্জশিট দাখিল করা হয়। সব মামলায় দুর্বল চার্জশিট দাখিল করে না পুলিশ। মানবপাচার মামলা তদন্তে আমাদের যথেষ্ট সাকসেস রেট আছে। তদন্তে যেসব দুর্বলতা আছে ভবিষ্যতে সেটা আমরা পূরণ করার চেষ্টা করবো।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার কথা বলে রাজধানীর সবুজবাগের জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে ছয় লাখ টাকায় সাজিদ হোসেন, শাহজাহান দেওয়ান ও আফরোজা বুলবুলের চুক্তি হয়। চুক্তির অংশ হিসেবে তিন লাখ টাকা নিয়ে জাহিদুলকে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ বিমানে কাতার পাঠান তারা। সেখানে পৌঁছার পর কোনো চাকরি না পেয়ে অতিকষ্টে দিন পার করতে থাকেন জাহিদুল। দুই মাসের মাথায় কাতার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এরপর কাতার থেকে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর জাহিদুলের মা ঝর্ণা বেগম সবুজবাগ থানায় সাজিদ হোসেন, শাহজাহান দেওয়ান ও আফরোজা বুলবুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেন। ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সবুজবাগ থানার এসআই রবীন্দ্রনাথ সরকার। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের উপাদান না থানায় মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেন মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানবপাচারকারী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ