পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে। সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, বজ্রপাত ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। বাস্তুচ্যুত হচ্ছে হাজারো পরিবার। বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সম্পদ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল ক্রমেই তা দৃশ্যমান হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও বাড়তে পারে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
চলতি বছর মে মাসে বাংলাদেশে গত ১০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে। এতে লন্ডভন্ড হয় উপক‚লীয় এলাকা। এরপর জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয় বন্যা। চলমান বন্যায় ৩৩ জেলায় লাখ লাখ লোক প্রায় দুই মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। এই বন্যা চলাকালে গত কয়েকদিন যাবৎ মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সাগরে অস্বাভাবিক জোয়ারের সৃষ্টি হয়। আর তাতে পাঁচ-ছয়দিন ধরে উপক‚লীয় জেলাগুলোয় জোয়ারের পানি গ্রাম ছাপিয়ে শহরের অলিগলি, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার বড় অংশ সরাসরি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে।
গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে দেশে বন্যা বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে তিনটি মাঝারি থেকে বড় বন্যা হয়ে গেছে। মূলত, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ধকল সইতে না সইতেই গত ২৬ জুন শুরু হয় দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় দীর্ঘতম বন্যা। সাধারণত বদ্বীপ এলাকা ও হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় বাংলাদেশে প্রতি বছরই বন্যা হয়। স্বাভাবিক বন্যায় সাধারণত দেশের ২০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। এ বছর ৫৫ দিন ধরে চলা বন্যায় এরই মধ্যে দেশের ৩৭ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৯০ লাখ মানুষ।
চলমান বন্যা এরই মধ্যে ১৯৮৮ সালের বন্যাকে অতিক্রম করে গেছে। এই মাসের বাকি সময় জুড়ে বন্যা থাকলে তা স্থায়ীত্বের দিক থেকে ১৯৯৮ সালের বন্যাকেও টপকে যাবে। এছাড়া গত পাঁচ বছরে বন্যার পানি বৃদ্ধির পরিমাণও চারটি রেকর্ড ভেঙেছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি ২০১৬ সালে আগের সব রেকর্ড ভেঙে সবচেয়ে উঁচুতে ওঠে। ২০১৭ ও ২০১৯ সালে তা উপর্যুপরি রেকর্ড ভাঙা উচ্চতায় ওঠে। এ বছরের বন্যার পানি গত ১৩ জুলাই তিস্তা অববাহিকায় বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি এই অববাহিকার জন্য একটি নতুন রেকর্ড। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দীর্ঘস্থায়ী এই বন্যায় সারাদেশে এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের তথ্য অনুযায়ী বন্যায় ১ লাখ ৯০০ হেক্টর ফসলি জমি এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪৩ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এবারের দীর্ঘ বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি নদীভাঙনে ক্ষত-বিক্ষত ৩৩টি জেলা। সর্বনাশা বন্যা ও নদীভাঙনে সর্বহারা মানুষের দুঃখকষ্ট অবর্ণনীয়। পদ্মার তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বহু মসজিদ, মাদরাসা, স্কুলসহ আরও অনেক স্থাপনা। অনেকে বসতভিটা জমি-জমা সব হারিয়ে হয়েছে সর্বহারা। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে পদ্মার তীব্র ভাঙনে কয়েকটি স্কুলসহ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। গৃহহারা হয়েছে অনেক মানুষ। সিরাজগঞ্জের চৌহালিতে যমুনার ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরের মানুষ। টাঙ্গাইলেও ভাঙছে যমুনা। খুলনা এলাকায় উপক‚লের বেড়িবাঁধ ভাঙছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ। কুড়িগ্রামে ভাঙছে ধরলা নদী।
বুয়েটের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা আমরা করছিলাম, এরই মধ্যে তার ফলাফল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তবে এই পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের ধরনে বদল আনতে হবে। প্রতিটি সড়ক ও অবকাঠামোতে জলকপাট এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে। বিশেষ করে সড়কগুলোতে পানিপ্রবাহের ব্যবস্থাপনা যুক্ত না করলে বন্যার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘমেয়াদি পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির বৈরিতায় বজ্রপাত নতুন দুর্যোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে। এ দুর্যোগে এ বছর প্রায় ২০০ জন মারা গেছে। গত সাত বছরে দেশে শুধু বজ্রপাতেই মারা গেছেন ১ হাজার ৭৬০ জন। গত বছর বিশ্বখ্যাত নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোথাও তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের পরিমাণ ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। গত ৩০ বছরে বিশ্বের তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ১ ডিগ্রি বেড়ে গেছে, এ কারণে বজ্রপাতও বাড়ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের ‘বাংলাদেশের জলবায়ু’ শীর্ষক গবেষণার অন্যতম গবেষক বজলুর রশীদ বলেন, দেশে বর্ষার আগে বৃষ্টি বাড়ছে। আর বজ্রপাতের পরিমাণও বাড়ছে। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় বন্যার পরিমাণও বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন দেশে দুর্যোগের পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ঝড় জলোচ্ছ্বাসে উপক‚লীয় অঞ্চলকে রক্ষা করে বেড়িবাঁধ। দেশের ২১ হাজার কিলোমিটারের বেশি বেড়িবাঁধ সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণে কোন পরিকল্পনা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জনবল সঙ্কট, এর মনিটরিং খুবই দুর্বল। সিডর ও আইলায় যে সব বেড়িবাঁধ ভেঙে ছিল তা ঠিকমতো মেরামত করা হয়নি। এতে আম্পানেও বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। ফলে সমুদ্র সামান্য উত্তাল হলেই বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে জোয়ারের পানি সহজেই বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে।
বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস এসব দুর্যোগ প্রকৃতিগত হলেও আমরা কখনও এর দায়ভার এড়াতে পারি না। প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যে বিরূপ আচরণ করছি তারই প্রতিফলন হচ্ছে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে মূল্যবান গাছ কেটে বন উজাড় করছে। তৈরি করছে ফসলি জমি বা গড়ে তুলছে বসতি। পাহাড় কেটে তৈরি করছে বসতবাড়ি। শিল্প-কারখানার কারণে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড। এখানে সেখানে তৈরি করা হচ্ছে ইটভাটা, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর এসব কারণে দিন দিন প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে এবং সৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের দুর্যোগ- বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাত ইত্যাদি। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা। এতে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হচ্ছে উপক‚লীয় অঞ্চল। উপক‚লীয় এলাকার বাঁধ সঠিকভাবে মেরামত হয় না। উপকূলে যথাযথ বনায়ন হয় না। এগুলো সঠিকভাবে হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।