চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাওলানা দৌলত আলী খান
নারীরা হচ্ছে মাতৃকুল। তাদের জন্য এমন একটি শব্দ রয়েছেÑ যা আকারে ছোট হলেও মানে অনেক বড়। আমরা প্রতিনিয়ত নিজের মাতাকে সম্বোধন করি। আর তা হল ‘মা’। যে কোন ব্যক্তির চোখে এই শব্দটি পড়লে বা মুখে উচ্চারণ করা হলেই মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়। নারী জাতির সাথে ভাষার সম্পৃক্ততা থাকার দরুণ বলা হয়- মাতৃভাষা। শুধু তা নয়, ভৌগোলিক দিক দিয়েও তাদের সম্মান করে বলা হয়- মাতৃভূমি। তাদের এ সম্মান, বাকস্বাধীনতা ও জীবিত থাকার অধিকার দিয়েছে একমাত্র ইসলাম। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী জাতিকে জাহেলি যুগের বর্বরতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। নারী জাতিকে মহানবী (সা.)-এর সেই অবদানকে স্মরণ করা উচিত। যে সময় কন্যা সন্তানকে জীবিত হত্যা-দাফন করা হত। কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় হলো যে, মুসলিম নারীরা জাহেলি যুগের মুক্তিকে স্মরণ না করে ৮ মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে পালন করে। ৮ মার্চ নারীর নির্যাতন বন্ধ করতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না। বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল প্রদত্ত ইসলামী বিধানের অনুসরণ করতেই হবে। কারণ চৌদ্দশত বছর আগেই নারী নির্যাতন বন্ধসহ সকল প্রকার নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিল একমাত্র ইসলাম। শ্লোগান ও আন্দোলন করলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। নারীরা রাস্তায় আন্দোলন করা মানে পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা। আর পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে নারী নির্যাতন বন্ধে আন্দোলন করা হবে ‘অন্ধ ব্যক্তি আলো খোঁজা’ এর মতই। অর্থাৎ সারা পৃথিবীর আলো অন্ধ লোকের সামনে এনে দিলে যেরকম তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে না। তেমনি বেপর্দা হয়ে রাস্তায় নেমে নারী নির্যাতন বন্ধে আন্দোলন করলেও নারীর শান্তি ফিরে আসবে না। অবশ্যই নারীরা ইসলামের বিধান মেনে চললে, তাদের শান্তি ফিরে আসবে এবং আন্দোলন ছাড়াই নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে।
১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৮ মার্চ-কে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তা পালন করা হচ্ছে ১৯৯১ সাল থেকে। নারী তার ন্যায্য অধিকার অর্জনের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এ স্বীকৃতি পেয়েছিল। মূলত এই আন্দোলনের ফসল নারীর অধিকার বাস্তবায়ন করা নয়। বরং নারীকে ইসলাম বিদ্বেষী গড়ে তোলা। ইসলাম ধর্মকে পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম হিসেবে নারী সমাজের নিকট চিত্রায়ন করা। এই দিবস পালন একশ্রেণীর স্বার্থন্বেষী পরজীবীদের সুক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। অথচ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা ইসলাম নারীর যে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে বিশ্বে তা অদ্বিতীয়। কিয়ামত পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের মত অন্য কোন ধর্ম নারীর স্বাধীনতা ও ন্যায্য অধিকার দিতে পারবে না। তা একশ’ ভাগ সত্য। নিচে ইসলাম ধর্মসহ বিভিন্ন ধর্মে নারীর অবস্থা সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরেছি।
১. হিন্দুবাদ : আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে হিন্দু ধর্মের বিস্তার ঘটে। প্রাচীন ভারতের হিন্দু সমাজে নারীরা অভিশপ্ত ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। এ সমাজে নারীকে পুরুষের সেবিকা ও ভোগের সামগ্রী হিসেবে জানত। ছিল না নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা। হিন্দু সমাজে নারীকে সকল পাপের উৎস মনে করতো। তার দৃষ্টান্তস্বরূপ প্রাচীন হিন্দু সমাজের নারী বিদ্বেষমূলক কয়েকটি উদ্ধৃতি আমার লেখনীতে এনেছি। যাতে সকল পাঠকের বুঝতে সহজ হয়। হিন্দু ধর্মমতে “নারী হচ্ছে নোংরামীর জড় এবং তার অস্তিত্ব আগাগোড়া নরক”। (ঠ.ঠ.কধহঃ)
হিন্দুদের মনুশাস্ত্রে বলা হয়েছে “নারী স্বামীর সাথে খাবার গ্রহণ করবে না, বরং স্বামীর উচ্ছিষ্ট সে খাবে” (হাদ্বারাতুল হিন্দ-১৭৯)
কিন্তু ইসলাম ধর্ম নারীকে স্বামীর মত সম্মানের অধিকার দিয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহপাক এরশাদ করেন- সদারচণের বেলায় স্ত্রীদের উপর স্বামীদের যেরূপ অধিকার আছে, স্বামীদের উপরেও স্ত্রীদের রয়েছে সেরূপ অধিকার। (সূরা বাকারাহ-২২৮)
২. ইহুদিবাদ : ইহুদিরা আসমানি কিতাবধারী। তাদের মাঝে অনেক নবী-রাসূল আসেন। তাদের উপর তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ হয়। এ কিতাবে তারা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে দেয়। নারী জাতিকে তারা সেবিকা ও দাসীর পর্যায়ে নামিয়ে আনে। অভিশপ্ত ইহুদি সমাজে নারীর কোন মর্যাদা ছিল না। নারীদেরকে পণ্যের মত বেচাকেনা করতো।
৩। খ্রিস্টবাদ : খ্রিস্টান সমাজ ও সভ্যতায় নারীর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। খ্রিস্টসমাজে নারীজাতির কি মারাত্মক অধঃপতন নেমে এসেছিল তা নি¤েœাক্ত উদ্ধৃতি দ্বারা কিছুটা অনুধাবন করা যাবে। প্রখ্যাত ধর্মযাজক গৎ. ঞবৎঃঁষষরধহ নারী সমাজকে বলেছেন- সে শয়তানের আগমনের দ্বার স্বরূপ, সে নিষিদ্ধ বৃক্ষের দিকে আকর্ষণকারী, খোদার আইন ভঙ্গকারী ও পুরুষের ধ্বংসকারিনী।
৪। ইসলাম ধর্ম : ইসলাম ধর্ম নারী সমাজকে জাহেলি যুগের জীবন্ত দাফন করার মত নিষ্ঠুর কুপ্রথা থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না, আমি তাদের এবং তোমাদের জীবিকা সরবরাহ করে থাকি। নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মহাপাপ। (সূরা বনী ইসরাঈল-৩১)
আল্লাহতায়ালা নারীকে পুরুষের জোড়া হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, তাই পুরুষ যেরকম বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে, তেমনি নারীরও জীবিত থাকার অধিকার রয়েছে। কুরআন শরীফে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন- পবিত্র তিনি, যিনি জমিন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, মানুষকে এবং যা তারা জানে না এমন প্রত্যেককে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন, (সূরা ইয়াছিন-৩৬)
ইসলামী বিধান মতে, নারী তার পিতা-মাতা ও স্বামীর পক্ষ থেকে উত্তরাধিকার পেয়ে থাকে। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেনÑ পুরুষের জন্য অংশ রয়েছে যা তার পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়রা রেখে গেছে এবং নারীর জন্যও অংশ রয়েছে যা তার পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়রা রেখে গেছে, কম হোক বা বেশি হোক, নির্ধারিত অংশ। (সূরা নিসা-৭)
নারীকে গৃহের পরিচালিকা এবং শাসনকর্তী হিসেবে মর্যাদার ঘোষণা দিয়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনÑ নারী তার স্বামীগৃহের পরিচালিকা এবং এই শাসন পরিচালনার জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। (বুখারি)
অবশ্যই নারীকে সুন্দর ও শান্তিময় জীবন করতে হলে ইসলামী বিধানের অনুসরণ করতে হবে। কারণ রাস্তায় রাস্তায় শ্লোগান দিলে আর আন্দোলন করলে নারীর শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। পৃথিবী আল্লাহর সৃষ্টি। তাঁরই বিধান মেনে চলতে হবে। তিনি আমাদের মালিক আর আমরা তাঁর গোলাম। সুতরাং গোলামের শান্তি মুনিবের আনুগত্যের ভেতর নিহিত।
লেখক : সাংবাদিক, গবেষক ও শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।