বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শেরপুর জেলা শহরের পৌরসভার উপকণ্ঠে উত্তর নৌহাটা গ্রামের রিক্সাচালক আনসার আলী হত্যা মামলায় এক আসামীর জুতার সূত্রধরে পর্যায়ক্রমে তিন আসামীকে গ্রেফতার করেছে শ্রীবরদী থানার পুলিশ। ধৃত তিন আসামীরা হলেন- শ্রীবরদী উপজেলার শৈলার পাড় গ্রামের রহুল আমিনের ছেলে সাগর (১৮), একই উপজেলার পূর্বঘোনাপাড়া গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে মোঃ বিল্লাল মিয়া (২৫) ও চৈতাজানি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাইম মিয়া (১৮)।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর জেলার সদর উপজেলার উত্তর নৌহাটা (তাতালপুর) এলাকার রিক্সাচালক আনসার আলীর মৃত দেহ গত ২৯/০৭/২০২০ তারিখ বিকেল অনুমান ৩ টার দিকে শ্রীবরদী থানা পুলিশ শ্রীবরদী থানাধীন গড়জরিপা ইউনিয়নের শৈলারকান্দা গ্রামে শৈলার বিল হতে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলের পাশে রাস্তার কিনারা থেকে ভিকটিম এর পায়ের জুতা ও তার পাশে আরেক জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়। ভিকটিম এর লাশ সনাক্তের পর তার স্ত্রী মোছাঃ জরিনা বেগম অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে তার স্বামীকে হত্যা ও লাশ গুম করার অভিযোগ দায়ের করে। এঘটনায় ৩০ জুলাই ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ দঃবিঃরুজু করা হয় যার শ্রীবরদী থানার মামলা নং- ৩০। মামলাটি রুজু হওয়ার পর শ্রীবরদী থানা পুলিশ মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের সনাক্তকরণসহ গ্রেফতারের জন্য তদন্তে মাঠে নামে পুলিশ। প্রথম অবস্থায় উদ্ধারকৃত জুতা ব্যতিত আর কোন ক্লু না থাকায় সেই জুতার সূত্র ধরেই ঘটনাস্থলের আশপাশের গ্রাম গুলোতে জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় খোজার জন্য চেষ্টা চলতে থাকে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকে। পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম তাৎক্ষণিক জেলার সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। মামলা রুজুর প্রায় এক সপ্তাহ পর পুলিশ জুতা ব্যবহারকারীর পরিচয় সনাক্তের জন্য একটি ক্লু খুজে পায়।
পুলিশ জানতে পারে যে, একই রকম নতুন একজোড়া জুতা বর্তমানে একজনের পায়ে রয়েছে। সেই ব্যক্তিকে সনাক্ত করার জন্য সোর্সের সাথে সাক্ষাতের লক্ষ্যে শ্রীবরদী থানা পুলিশ শৈলারপাড় যাওয়ার প্রাক্কালে বিকেল অনুমান সাড়ে ৫ টার দিকে শ্রীবরদী থানাধীন শৈলার বিলের রাস্তার ফাকা জায়গায় ব্রীজের উপর পৌছে একজন তরুণকে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তার কাছাকাছি পৌছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার নাম সাগর (১৮), পিতা-রুহুল আমিন, সাং-শৈলারপাড়। তার সাথে কথা বলার প্রাক্কালে তার পায়ে পরিহিত জুতার দিকে তাকিয়ে দেখা যায়, মামলার ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার হওয়া জুতার ডিজাইন এবং তাহার পরিহিত জুতার ডিজাইন একই রকম। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাৎক্ষণিক সোর্সের সাথে কথা বললে সোর্স জানায়, এই ব্যক্তিই সেই ব্যক্তি। তখন তার জুতা কবে কিনেছে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, তার আগের জুতাগুলো পুরাতন ও ছিয়ে যাওয়ায় গত ২৯/০৭/২০২০ তারিখে সে নতুন জুতা ক্রয় করেছে। তার সাথে কথা বলার প্রাক্কালে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করা হয়। তার পুরাতন জুতাগুলো দেখার জন্য কৌশলে তাকে নিয়ে তাদের গ্রামে তার বাড়ীতে যাওয়া হয়। তাদের বাড়ী যাওয়ার কথা বলে সে ইতস্ত ও বিব্রত বোধ করে। তখন তাকে নিয়ে তাদের বাড়ীতে গেলে তার বৃদ্ধা দাদী এগিয়ে আসেন। পরে তার পুরাতন জুতা গুলো আনার জন্য সন্দিগ্ধ সাগরকে বলা হলে সে জুতা আনতে ভিতরে যায়। এর মধ্যে শ্রীবরদী থানা পুলিশ সন্দিগ্ধ সাগরের দাদীর সাথে কথা বলে জানতে পারে যে, সাগরের মা নেই, তারা খুব গবির বিধায় তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা।
সাগরের নতুন জুতার ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তার দাদী জানান, তাদের পুরাতন জুতা গুলো নিজেরাই সেলাই করে পায়ে দেন। পুরাতন জুতাগুলো ছিড়ে যাওয়ায় ঈদের আগে সাগরকে এক জোড়া জুতা কিনে দেয়া হয়েছে। এদিকে সাগর পুরাতন জুতা আনতে গিয়ে পালিয়ে যায়। তখন তাকে খোঁজাখুজি না কেের তার দাদীর সাথে সাগরের পড়াশোনার বিষয়ে কথা বলে শ্রীবরদী থানা পুলিশ কৌশলে চলে আসে। আসার সময় শ্রীবরদী থানা পুলিশের মোবাইল নাম্বারও দিয়ে আসা হয়। যেন প্রয়োজনে তারা যোগাযোগ করেন। এরপর সন্দিগ্ধ সাগরের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারের কললিস্ট সংগ্রহ করা হয়। কললিস্ট পর্যালোচনায় ঘটনার দিন সাগরের অবস্থান মামলার ঘটনাস্থল শৈলার বিলের রাস্তার দেখা যায়। সাগরের দাদির ভাষ্য মতে তাদের পুরাতন ও ছেড়া জুতাগুলো নিজেরাই সেলাই করে ব্যবহার করেন। মামলার ঘটনাস্থল হতে উদ্ধার হওয়া জুতা পর্যবেক্ষণেও দেখা যায় যে, উক্ত জুতাগুলো কোন মুচি দ্বারা সেলাই করা নয়। বরং নিজ হাতে সেলাই করা। এদিকে সাগর তার পুরাতন জুতা আনতে গিয়ে পালিয়ে যাওয়া, তার ব্যবহৃত মোবাইল অবস্থান ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে হওয়ায় এবং উদ্ধার হওয়ার জুতার ডিজাইন ও সাগরের পায়ে থাকা নতুন জুতার ডিজাইন একই হওয়া উক্ত সাগরকে সন্দিগ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
শ্রীবরদী থানা পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত হয় যে, উক্ত সাগরকে পাওয়া গেলে মামলার জট ও মূলরহস্য উদঘাটিত হবে। তখন বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। সেই চেষ্টা থেকেই স্থানীয় বিট পুলিশিং এর সদস্যদের মাধ্যমে সাগরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে অভিযান পরিচালনা করে গত ১৭/০৮/২০২০ তারিখ সাগরকে শ্রীবরদী থানা পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়। শ্রীবরদী থানা পুলিশের উপর্যুপরী জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সাগর ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনা সাথে জড়িত অন্যান্যদের নাম প্রকাশ করে। তার দেওয়া তথ্য মতে পুলিশ ঘটনা সাথে জড়িত মোঃ বিল্লাল মিয়া (২৫), পিতা-মোঃ মনু মিয়া, সাং-পূর্ব ঘোনাপাড়া ও মোঃ সাইম মিয়া (১৮), পিতা ইসমাইল হোসেন, সাং চৈতাজানি দ্বয়কে ধৃত করে। উক্ত আসামীগণ ঘটনা সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং ধৃত সকলেই বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ আইনের ১৬৪ ধারা তে স্বেচ্ছায় তাদের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
উক্ত আসামীগণ ঘটনা সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জানায় যে, আসামীদের মধ্য হতে দুজন ব্যক্তি শেরপুর সদর থানাধীন তাতালপুর বাজার হতে ভিকটিম আনসার আলীর অটো রিক্সা ভাড়া নিয়ে তাতালপুর বাজার হতে কালিবাড়ী বাজারের কথা বলে নিয়ে যায়। কালিবাড়ী বাজারে যাবার পর নির্ধারিত ভাতার চেয়ে কম ভাড়া দিতে চাইলে রিক্সা চালক আনছার আলী কম ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে তাদর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তখন ঐ দুই ব্যক্তি তাদেরকে আরেকটু এগিয়ে দিতে বলে এবং সেখানেতাদের লোকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দিবে বলে জানায় একপর্যায়ে অটোরিক্সাওয়ালাকে ঐ দুই ব্যক্তি কালিবাড়ী হতে কুরুয়া রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় শৈলের বিলের মাঝামাঝি বড় ব্রীজের নিকট এসে ভিকটিম আনসার আলীকে তার ভাড়া না দিয়ে উল্টো তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। তখন সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা ধৃত আসামীসহ অন্যরা ভিকটিম আনসার আলীকে উপর্যুপরী কিলঘুষি মারতে থাকে এবং তার পকেটে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে একজন আনসার আলীর গলা চেপে ধরে ধাক্কা দিলে আনসার আলী ব্রীজ হতে পানিতে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন ৫/৬ জন আসামী আনসার আলীকে পানিতে চুবিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর আরও ৪/৫ জন আনসার আলীর শরীর হতে শার্ট এবং লুঙ্গী খুলে তার লাশ বিলের কচুরী পানার নিচে লুকিয়ে রাখে। ধৃত আসামীদের দেয়া তথ্যে ঘটনার সাথে মোট ১২ জন্য জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।