Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেপরোয়া হয়ে উঠছেন কাউন্সিলররা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের পরও ধীরে ধীরে বেপরোয়া উয়ে উঠছেন কাউন্সিলররা। করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু থেমে থাকলেও কিছু কিছু কাউন্সিলরের বেপরোয়া ভাব থামেনি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে যার যার এলাকার লাভজনক খাতগুলো অর্থাৎ সিটি করপোরেশন মার্কেট কমিটি, স্কুল-কলেজ গভার্নিং বডির কমিটি, বর্জ্য টেন্ডার, টেম্পু-অটো স্ট্যান্ড দখলে নেয়ার চেষ্টা করছেন কাউন্সিলররা। এছাড়াও চাঁদাবাজি, জমি দখলেও জড়াচ্ছেন অনেক কাউন্সিলর। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র, এমনকি প্রধানমন্ত্রী বরাবর কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অভিযোগও করছেন ভুক্তভোগীরা।

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটির ডিএসসিসির ৫৬নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মারধরসহ নির্যাতন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর দখলের বিষয়ে মেয়র শেখ তাপসের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। থানায় জিডি এবং মেজিস্ট্রেট কোর্টে মামলাও হয়েছে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
এছাড়া ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাথের হকার এবং পরিবহন সেক্টরে কাউন্সিলরের চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এছাড়া সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মার্কেট কমিটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন প্রথমবারের মত নির্বাচিত হওয়া এই কাউন্সিলর।
এদিকে গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহ নিয়েও দ্ব›েদ্ব জড়াচ্ছেন কাউন্সিলররা। বর্জ্য হলেও তা লাভজনক হওয়ায় এইদিকে চোখ অনেক কাউন্সিলরের। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬৪-৬৫ ও ৬৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই ওয়ার্ডগুলোতে গৃহস্থালির বর্জ্য সংগ্রহে নেমেছেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নিলুফার ইয়াসমিন লাকী। প্রতি পরিবার থেকে ১০০ টাকা করে আগে সংগ্রহ করা হলেও নতুন টেন্ডার পেয়ে ২০০ টাকা নেয়া হবে এমন সিদ্ধান্তে স্থানীয় রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে তৈরী হয় জটিলতা। এরফলে গত এক সাপ্তাহ ধরে বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করা বন্ধ ছিল। ভয়াবহ বিপদে পড়ে এলাকাবাসী। পরবর্তীতে স্থানীয় নেতারা বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করায় গতকাল থেকে আবারও বর্জ্য সংগ্রহ করছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের কাছে অভিযোগ ও স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫৬ নং ওয়ার্ডে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে হোসেন বাহিনীর দখল বানিজ্য ও চাঁদাবাজি থেকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ও সাংবাদিকরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছেনা। চাঁদা না পেলেই মারধরসহ নির্যাতন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর দখল করে নিচ্ছে। ওই বাহিনীকে চাঁদা দিতে অস্বীকার কারায় গত এক মাসে অন্তত ১০জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে হোসেন বাহিনী। এ নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠান বর্জন করেছে মহানগর নেতৃবৃন্দ।
৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলী আহাম্মদ কতৃক ডিএসসিসির মেয়র বরাবর দাখিলকৃত অভিযোগে জানা যায়, তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে এবং আরো ১০ লাখ টাকা চাঁদার জন্য তার ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা দখলে নিয়েছে কাউন্সিলরের লোকজন।
ডিএসসিসি ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন দেওয়ান কতৃক গত ১৯ শে জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দাখিল করা অভিযোগে জানা যায়, গত ৭ জুলাই কাউন্সিলর হোসেন ও তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা ৫২৬/১ পশ্চিম রসুলপুরের বাড়িতে এসে ভাড়াটিয়াদের জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার পর কাউন্সিলর লোকজন নিয়ে তার সামনেই বড় ছেলে মামুনকে বেধড়ক পেটায়।
কাউন্সিলর হোসেন ও তার বাহিনীর সর্বশেষ শিকার কামরাঙ্গীরচরের হুজুরপাড়া এলাকায় বসবাসকারী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য শেখ আনোয়ারের ও তার পরিবার। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দাবিকৃত চাঁদার ২০ লাখ টাকা না পেয়ে সাংবাদিকের মা সখিনা বেগম ও তার পুত্রবধূকে মধ্যরাতে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে গেটে তালা দিয়েছেন কাউন্সিলরের ক্যাডাররা। গত ২৮ জুলাই ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর কোর্টে কাউন্সিলর হোসেনসহ তার বাহিনীর ১২ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর ৪৩২০২০) করেছেন বৃদ্ধার ছেলে শেখ আনোয়ার।
ডিএসসিসি ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন অভিযোগ ভিত্তিহীন ও সাজানো দাবি করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা নেই। চাঁদাবাজি-দখলবাজির মতো কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে অভিযোগকারীরা তার একটিরও প্রমাণ দিতে পারলে আমি কাউন্সিলরশিপ ছেড়ে দেব।
এদিকে ১৩ নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ফুটপাত, মার্কেট কমিটি ও বাসস্ট্যান্ড দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৫ জুন রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাথের হকার এবং পরিবহন সেক্টরে কাউন্সিলরের চাঁদাবাজির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তারা স্থানীয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক আবুল ও তার সহযোগী জসিম উদ্দিন, মনির হোসেন মনা ও সামিউল আবেদ সুমনের হাত থেকে বাঁচার আকুতি জানান। এর আগে গুলিস্তানে চাঁদার দাবিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী উৎসব পরিবহনের কাউন্টার ভাঙচুর করে ক্যাশ বাক্স লুটের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে এনামুল হক আবুল বলেন, যুবলীগের পল্টন থানা সভাপতি দুলালসহ অনেকেই ১০-১২ বছর ধরে এই সব এলাকা থেকে নিয়মিত চাঁদা উঠায়। আমি কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে চাঁদা উঠানো বন্ধ করার উদ্যোগ নিতেই তারা আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। চাঁদাবাজদের শিকড় অনেক গভীরে, এদের গডফাদাররা তো পর্দার অন্তরালে। তারা চক্রান্ত করে আমার বিরুদ্ধে কিছু লোক জড়ো করে মানববন্ধন করিয়েছে।###

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

১৮ ডিসেম্বর, ২০২১
৪ ডিসেম্বর, ২০২০
১৯ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ