মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রেকর্ড সময়ের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করে মস্কো। গতকালই ভ্যাকসিনে ছাড়পত্র দেয় রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু একই সঙ্গে উঠে আসছে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে ভ্যাকসিনের দৌড়ে থাকা আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষত, যেভাবে তড়িঘড়ি ভ্যাকসিন আনা হচ্ছে, তাতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যথোচিতভাবে হয়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়া এত তাড়াতাড়ি করোনার ভ্যাকসিন বের করে ফেলায় বিশেষজ্ঞদের একাংশ রীতিমতো সন্দিগ্ধ। তাঁদের মতে, ভ্যাকসিন নিয়ে দীর্ঘদিন ট্রায়াল দিতে হয়। তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে হয়। বিভিন্ন ধরনের মানুষের ওপর তা প্রয়োগ করতে হয়। লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডানকান ম্যাথুজের বক্তব্য, ''ভ্যাকসিন তৈরির খবর অবশ্যই স্বাগতযোগ্য। কিন্তু এর সুরক্ষার দিকটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।'' জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ল বিশেষজ্ঞ লরেন্স গস্টিন বলেছেন, ''আমি উদ্বিগ্ন। রাশিয়ার ভ্যাকসিন শুধু যে অকার্যকর হতে পারে তাই নয়, নিরাপদ নাও হতে পারে। পরীক্ষা করা সবচেয়ে জরুরি।'' অ্যামেরিকার প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি গত সপ্তাহেই বলেছিলেন, ''আমার আশা যে চীন ও রাশিয়া মানবদেহে ভ্যাকসিন দেয়ার আগে তা ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখবে।'' আরেক বিশেষজ্ঞ পিটার ক্রমসনারের মতে, ''এই ভ্যাকসিন নিয়ে দীর্ঘ পরীক্ষা দরকার। তা না করে বাজারে ছাড়া হলে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ হবে।''
পশ্চিমা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মানবদেহে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছাড়া ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছে না। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স’র এক প্রতিবেদনে এখবর জানা গেছে।
করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের চেষ্টায় এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এসব দেশের ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট কোথাও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। মঙ্গলবার অনুমোদন দিলেও রাশিয়ার ভ্যাকসিনটির তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে বুধবার। যুক্তরাষ্ট্রের হেল্থ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের সচিব অ্যালেক্স অ্যাজার বলেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রথম হওয়া নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে সেই টিকা কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাবেক কর্মকর্তা গডলিয়েবও রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরাও দাবি করেছেন, রুশ ভ্যাকসিনের উপযুক্ত পরীক্ষা হয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সপ্তাহে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালনের জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। অনুমোদন দেওয়ার পর সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা ‘স্পুটনিক ভি’ সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে রুশ প্রশাসনের আলোচনা করছে।
সোমবার ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্গানাইজেশনগুলির অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লেখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরীক্ষা সম্পূর্ণ না করে যেনও সাধারণ জনগণকে ভ্যাকসিন দেওয়া না হয়। কারণ তাতে মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এ ব্যাপারে স্পষ্ট নিয়ম রয়েছে, তা যেন লঙ্ঘন করা না হয়।
এদিকে রাশিয়ার করোনা ভ্যাকসিন ‘স্পুটনিক ৫’ ব্যবহারে এ মুহূর্তে অনুমোদন দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কানাডা। রাশিয়ার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও।
কানাডার উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাওয়ার্ড এনজু গতকাল মঙ্গলবার দাবি করেন, রাশিয়ার ভ্যাকসিন-সংক্রান্ত অনেক তথ্যই পাওয়া যায়নি। তাই এ মুহূর্তে রাশিয়ার ভ্যাকসিন ব্যবহারে তাঁরা অনুমোদন দিচ্ছেন না। যে দ্রুততার সঙ্গে রাশিয়া নিজেদের ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়েছে, তাতে বিস্ময় প্রকাশ করেন এনজু। সংবাদ সংস্থা এএনআই এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার বক্তব্য, তাদের গবেষণা নিয়ে এই প্রথম প্রশ্ন তোলা হচ্ছে না। কিন্তু তারা বরাবরই গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে, সেটা ১৭৬৮ সালে গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার হোক কিংবা ১৯৫৭ সালে মহাকাশযান স্পুটনিকের উৎক্ষেপণ।
ক্রেমলিন সূত্রে খবর, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে ভ্যাকসিনের উৎপাদন। অক্টোবরে রাশিয়ায় গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে পারে। চলতি বছরের শেষে দুই কোটি টিকার ডোজ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী রুশ গবেষকরা। আগামী এক বছরে তৈরি হবে প্রায় ৫০ কোটি ডোজ। এপি, এএফপি, রয়টার্স
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।