পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
যুদ্ধ-মহামারি পৃথিবীতে ছিল, থাকবে। আবহমান কাল ধরে মানুষ এসব মোকাবেলা করেই সভ্যতা ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়েছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। চলমান করোনা মহামারি পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিলেও মানুষ বসে নেই। মহামারি মোকাবেলা করেই নতুন উদ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে জীবনযাপন চলমান রাখতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এ মহামারি আমাদের জন্য বড় ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি করলেও তা স্বীকার করে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখন যেমন বসে থাকার সময় নেই, তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুরোদমে শুরু করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। করোনার শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদৃষ্টির মাধ্যমে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের বিষয়টি চিন্তায় নিয়েই তা সচল করার বিভিন্ন উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার কথা বলে আসছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি আবারও বলেছেন, করোনা একটা ধাক্কা হিসেবে এসেছে ঠিকই, তবে তা সুযোগও সৃষ্টি করেছে। তিনি এ কথা বিশেষভাবে বলেছেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে। অনস্বীকার্য, অর্থনীতি সচল এবং পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগের বিকল্প নেই। যত বেশি বিনিয়োগ হবে, তত বেশি অর্থনীতির চাকা সচল হবে। করোনার শুরু থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলে যাচ্ছেন, তা ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে নতুন সৃষ্টির প্রেরণা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। অকুতভয়, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতার পরিচয় তো এই যে, তিনি বিপর্যয়ের মধ্যেও দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, মহামারির বাস্তবতা স্বীকার করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরাও এ কথাটিই বারবার বলে আসছি।
যে কোনো দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড হচ্ছে বিনিয়োগ। বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনীতি দৃঢ় ও টেকসই হতে পারে না। তবে এ জন্য যথোপযুক্ত পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা থাকা অপরিহার্য। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মতো আহবান এবং তাদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি অসম্ভব কিছু নয়। করোনার শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শিতার মাধ্যমে বিষয়টি উপলব্ধি করে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য তাদের বিনিয়োগের লাভ নিজ দেশে যাতে সহজে নিয়ে যেতে পারে, এ জন্য ব্যাংকিং পদ্ধতি সহজ করার কথা বলেছেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের নিজ দেশের বিনিয়োগকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিতের কথা বলেছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথার্থভাবেই বলেছেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশের ইন্ডাস্ট্রি এখন বন্ধ। আমাদের জনসংখ্যা আছে, জমি তৈরি আছে, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও আছে।’ তার এ কথার মর্মার্থ হচ্ছে, বিশ্বের যেসব দেশের শিল্প-কারখানা বন্ধ রয়েছে, আমাদের দেশে সেসব শিল্প-কারখানা নিয়ে আসা বা বিনিয়োগে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ইতোমধ্যে জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ চীন থেকে তাদের কারখানা গুটিয়ে নিয়েছে। সেখান থেকে অন্যান্য দেশে কারখানা স্থানান্তরিত হচ্ছে। তাদের এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারিদের কীভাবে দেশে নিয়ে আসা যায়, দ্রুত এ পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরতে হবে, আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন, তা রয়েছে। জনবল যেমন রয়েছে, তেমনি অবকাঠামোগত সুবিধা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সহজলভ্যতা রয়েছে। ইতোমধ্যে একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি চালু হয়েছে। মেগাপ্রকল্পের মাধ্যে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ, আমদানি-রপ্তানির লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করাসহ দেশের অন্যান্য মহাসড়ক উন্নত করা হয়েছে। পণ্য পরিবহন এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজীকরণে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথের উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে যত ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায়, তার সব পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এখন এ ব্যাপারে সর্বাগ্রে প্রয়োজন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করা। প্রধানমন্ত্রী তার একক প্রচেষ্টায় যেসব দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার মধ্যে ভয়াবহ বন্যার আঘাত আমাদের অর্থনীতিকে পর্যুদস্ত করে দিয়েছে। অনেক সড়ক, বাঁধ, বাড়ি-ঘরসহ স্থাপনা তলিয়ে গেছে কিংবা ধ্বংস হয়েছে। এসব অবকাঠামো দ্রুত তৈরি এবং সংস্কারের ব্যবস্থা নিয়ে উন্নয়নের বাহনে পরিণত করতে হবে। এতে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। ইতোমধ্যে সরকার কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত উপকূল জুড়ে বেড়িবাঁধ ও সুপার ড্রাইভ ওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ, যার বাস্তবায়ন দ্রুত হতে পারে। বিধ্বস্ত হয়ে পড়া উপকূলীয় বাঁধগুলো নির্মাণ ও সংস্কারে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করলে সেখানেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের জন্য বিদ্যমান যেসব অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা রক্ষা করে কাজে লাগাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এখন প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক যান্ত্রিক সুবিধার কারণে অবকাঠামো উন্নয়নে খুব বেশি সময় লাগে না। আগে যেখানে একটি সেতু তৈরিতে বছরের পর বছর সময় লেগে যেত, এখন তা এক বছরের মধ্যেই তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। কাজেই, উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদেরকে বিষয়টি মাথায় রেখেই দ্রুততম সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার মধ্যেও চীন যেভাবে তার অর্র্থনীতি দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে, তার মূল কারণই হচ্ছে, দেশটির ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন। আগে থেকে তার অবকাঠামো সুদৃঢ় অবস্থানে থাকায়, বিপর্যয়ের মধ্যেও দ্রুততম সময়ে অর্থনীতি দাঁড় করিয়ে বিশ্বের অন্যতম পুঁজি প্রধান দেশে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়ও তারই প্রতিধ্বণি হয়েছে। আমাদের যা কিছু আছে, তার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল করতে হবে। বসে থাকলে হবে না। বিশ্বের যেখানেই শিল্প-কারখানার মালিকরা ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে বসে আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে দেশে নিয়ে আসা যায়, এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া, যারা বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের সন্ধানে রয়েছে, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে হবে। আমাদের দেশ বিনিয়োগের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান, এ কথাকে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপন আকারে তুলে ধরতে হবে। বিনিয়োগকারীদের লাভের অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ও ডুয়িং বিজনেস নীতি সহজ করা, দ্রুত সময়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া এবং কোনো ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় যাতে পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রমাগত যেসব পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট সকলকে তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করে দ্রুত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।