মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বের মতো দক্ষিণ এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া তথা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনা পরীক্ষার র্যাপিড টেস্টিং কিট সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করে। করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ১৯ জুলাই চীনের সিনোভ্যাকের উদ্ভাবিত টিকা ট্রায়ালের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। ভারত যখন করোনা চিকিৎসা নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল, তখন গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিক কিট ও চীনের সিনোভ্যাকের করোনা টিকার ট্রায়ালের নৈতিক (এথিক্যাল) অনুমোদনের পর মারণঘাতী করোনা চিকিৎসায় দ্রæত অগ্রগতির পথে যাচ্ছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু পর্দার আড়ালে সে উদ্যোগ ঠেকিয়ে দেয়া হয়। গণস্বাস্থের র্যাপিড কিটের ব্যবহার থেমে যায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। চীনের টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালও হয়ে পড়ে বিলম্বিত। এ সময়ের মধ্যেই ভারত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির টিকা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে করোনা চিকিৎসায় এগিয়ে যায়। যদিও নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, করোনা ভ্যাকসিন বিকাশে সহায়ক বায়োটেক সংস্থা মডার্না জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৮৯টি এলাকায় ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে করোনার ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপে ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে। আর পিটিআই ও টিওআই-এর খবর হলো- অক্সফোর্ডের করোনা টিকার হিউম্যান ট্রায়াল ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে চলছে। ভারতের মুম্বাই ও পুনেতে ৪ হাজার মানুষের শরীরে টিকার ট্রায়াল শুরু হয়ে গেছে।
করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় এতদিন সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও এখন এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। চীনের সিনোভ্যাকের টিকা বাংলাদেশে ট্রায়ালে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সৃষ্টি করার মধ্যেই ভারত অক্সফোর্ডের টিকার দিকে হাত বাড়ায়। ইতোমধ্যেই অক্সফোর্ডের টিকারা ট্রায়াল ভারতে করার চুক্তি করেছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য ভারতের পাঁচটি জায়গা চ‚ড়ান্ত করেছে। এই পাঁচটি জায়গায় তৃতীয় এবং চ‚ড়ান্ত পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল করবে অক্সফোর্ড।
ভারতের ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির সেক্রেটারি রেনু স্বরূপ জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল প্রক্রিয়া ভারতে শুরু হয়ে গেছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে থাকলেও এখন উদ্যোগের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে; আর পরে প্রক্রিয়া শুরু করে এগিয়ে গেছে ভারত। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, কার স্বার্থে বাংলাদেশে সিনোভ্যাকের উদ্ভাবিত টিকা ট্রায়াল বন্ধ করা হয়েছে? ভারতের পেছনে বাংলাদেশকে ফেলতে কি আমলাদের মধ্যে দিল্লির অনুসারি কেউ করোনা পরীক্ষা ও টিকা ব্যবহারে গড়িমসি করেছে? সূত্র মতে, ট্রায়ালের চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে থাকা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বাজারজাতের সঙ্গে ভারতীয় একটি কোম্পানি যুক্ত আছে। আর এ কারণেই ভারত চাচ্ছে না বাংলাদেশ সিনোভ্যাকের উদ্ভাবিত টিকার ট্রায়াল করুক।
জানতে চাইলে করোনা জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, আমার বিবেচনায় চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়া উচিত সরকারের। না দেয়া হলে আমাদের ক্ষতি হবে এবং ভ্যাকসিন পেতে আমরা পিছিয়ে পড়ব। আইসিডিডিআর,বি অনেক দক্ষ প্রতিষ্ঠান। তারা আগেও চীনের ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করেছে। নিজেরাও ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। তাদের ওপর আস্থা রাখা যায়।
গোটা বিশ্ব অদৃশ্য করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে গেছে। এ সংক্রামক রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচতে টিকা (ভ্যাকসিন) অন্যতম রক্ষাকবচ। একটি টিকা আবিষ্কারে কয়েক বছর লেগে যায়। কিন্তু করোনার টিকা কয়েক মাসের মধ্যেই আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। দিন-রাত পরিশ্রম করে টিকা আবিষ্কার নিয়ে আশাবাদীও তারা। বিশ্বের কয়েকশ’ কোটি মানুষ অধীর আগ্রহে টিকার জন্য অপেক্ষা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরের মধ্যেই করোনার টিকা পেয়ে যাবে বিশ্ব। করো কারো মতে, এটা ২০২১ সালের মাঝামাঝি আসতে পারে।
জাতিসংঘের সর্বশেষ গত ২০ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, তিনটি প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টায় এগিয়ে। শেষ পর্যায়ে রয়েছে চীনের সিনোভ্যাক, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির টিকা এবং ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন/মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট। এছাড়াও চীনের একাধিক, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত টিকার কাজ শেষ পর্যায়ে।
চীনের যে দুইটি প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিনের চ‚ড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালে যেতে পেরেছে তার একটি সিনোভ্যাক। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) ১৯ জুলাই এ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে ট্রায়ালের জন্য নৈতিক (এথিক্যাল) অনুমোদন দেয়। এখন ব্রাজিল ও বাংলাদেশে কয়েক হাজার মানুষের ওপর টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। এদিকে ব্রাজিলে ট্রায়াল হলেও চুক্তির পর এক সপ্তাহের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশে এখনও টিকার ট্রায়াল শুরু হয়নি। বাংলাদেশে চীনের টিকার ট্রায়াল অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানোর কথা ছিল। তারা সমস্ত প্রস্তুতিও সেরেছে বলে জানা গেছে। এমনকি ঢাকার চীনা রাষ্ট্রদূত ট্রায়াল টিকা গ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি হতে চেয়েছেন। তবে এ প্রক্রিয়া এখন স্তিমিত হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এথিক্যাল কমিটির অনুমোদনের পর তার আর কোন প্রয়োজন পড়ে না। এর ফলে বরং বাংলাদেশ সহজে ভ্যাকসিন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফসর ডা. কামরুল হাসান খান বলেছেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সবচেয়ে এগিয়ে আছে। ওই ভ্যাকসিন বাজারজাতের সাথে বিশ্বের যে ১০টি প্রতিষ্ঠান জড়িত তার একটি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। তারা কিন্তু এরইমধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেলেছে। এটা ব্যবসার একটা পলিসি। যাতে অনুমোদন পেলে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে দিতে পারে। আর না হলে নষ্ট করে ফেলে। তিনি বলেন, আমার কথা হলো চীন বা ভারতীয় যেটাই হোক না কেন আমরা যেন ভ্যাকসিন আগে পাই, কম দামে পাই।
বিএমআরসির ন্যাশনাল রিসার্চ ইথিকস কমিটির সদস্য প্রফেসর ডা. সাইদুর রহমান বলেন, আমরা যা বলার আগেই বলে দিয়েছি। এখন আর নতুন করে কিছু বলতে চাই না। আমরা বিজ্ঞানের নিয়ম মেনে অনুমোদন দিয়েছি। এখন বাকিটা তো আর আমরা দেখতে পারব না। এথিকস কমিটি সারাবিশ্বেই একইভাবে কাজ করে। আমরাও সেই নিয়মে কাজ করেছি।
এর আগে বাংলাদেশে আসা চীনা চিকিৎসক দল সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশকে আগে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা বলেছে। তারা এ ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারি পর্যায়ে কথাও বলেছে।
বাংলাদেশে সরকারের মহামারি ও সংক্রামক ব্যাধি সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বা আইইডিসিআর’র ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান তাহমিনা শিরিন বলছেন, সংক্রামক ব্যাধি ঠেকানোর জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা অত্যাবশ্যক। টিকা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ভ্যাকসিন একটি জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে মানবশরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করতে সহায়তা করে। যদি বাংলাদেশের ইপিআই বা স¤প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন ইনফেকশনের কারণে দেশে শিশু মৃত্যুর হার অনেক হ্রাস পেয়েছে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।