Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৬ পিএম | আপডেট : ৩:২৭ পিএম, ২৮ জুলাই, ২০২০

আন্তর্জাতিক বাজারে যেকোনও সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড গড়েছে স্বর্ণ।
সোমবার (২৭ জুলাই) প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৯৪৪ দশমিক ৭৩ ডলারে। এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বর্ণের দাম রেকর্ড গড়ে। ওই সময় এর দাম ছিল প্রতি আউন্স এক হাজার ৯২১ ডলার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অন্য কিছুর ওপর আস্থা রাখতে না পেরে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ কিনতে থাকায় স্বর্ণের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে।
করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই আতঙ্কের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার রাজনৈতিক উত্তেজনা। এসব অস্থিরতায় বর্তমানে সুদের হার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমেছে। আবার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে লভ্যাংশ নিয়ে অনিশ্চয়তাও সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এতে অনেক বিনিয়োগকারী স্বর্ণ কেনাকে মনে করছেন নিরাপদ বিনিয়োগ। যদিও এতে লভ্যাংশ কিংবা সুদের হার পাওয়া যায় না; কিন্তু সংকটকালে এর দাম বেড়ে যায়। এ বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
তবে স্বর্ণে বিনিয়োগের কিছু সমস্যাও আছে। লভ্যাংশ কিংবা সুদের হার না পাওয়ার পাশাপাশি স্বর্ণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ আছে। যুক্তরাজ্যের মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী বুলিয়নভল্টের গবেষণা পরিচালক আদ্রিয়ান অ্যাশ বলেন, স্বর্ণ মজুতের ক্ষেত্রে (ইন্সুরেন্সসহ) প্রতিবছর বিনিয়োগকারীর মজুতের দশমিক ১২ শতাংশ পর্যন্ত খরচ হয়। এই হিসেবে প্রতিটি সাড়ে ১২ কেজি স্বর্ণের বারের বর্তমান মূল্য প্রায় ছয় লাখ পাউন্ড। এতে প্রতিমাসে এক বিনিয়োগকারীর খরচ প্রায় ৬০ পাউন্ড। তারপরও স্বর্ণ কেনার দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।

স্বর্ণ কেনার দিকে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকে পড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে মার্কিন ডলারের মূল্য কমে যাওয়া। ডলারের মূল্য কমে যাওয়ায় অন্য মুদ্রা ব্যবহারকারীরা স্বর্ণ কিনলে একই পরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে বেশি পরিমাণ ডলার কিনতে পারছেন। ফলে তারা স্বর্ণে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র-চীন রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির জেরে দেশ দুটি পাল্টাপাল্টি কনস্যুলেট বন্ধ করার পর পড়ে গেছে মার্কিন ডলারের দর। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের পর ডলারের সূচক সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা করতে এ সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এমন দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে বাংলাদেশেও দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বাজুসের একজন সদস্য জানান, গত শুক্রবার থেকে স্বর্ণের বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৯১৬ টাকা বাড়িয়ে ৭২ হাজার ৭৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬৯ হাজার ৬৩৪ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬০ হাজার ৮৮৬ টাকা। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম ৫০ হাজার ৫৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের দাম আগে কখনও এত ছিল না।

এদিকে বাজুস যখন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৮৮৯ ডলার। অর্থাৎ বাজুসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩৪ ডলার বেড়ে গেছে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার বিষয়ে সম্প্রতি ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার ও স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, ২০১১ সাল ছাড়া স্বর্ণের এমন দাম বাড়ার প্রবণতা কখনও দেখা যায়নি। শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক গেম্বলাররা (জুয়াড়ি) স্বর্ণ কিনে মজুত করছেন। এ কারণে স্বর্ণের এমন দাম বাড়ছে।

তিনি বলেন, স্বর্ণের দাম বাড়লেও আমাদের বিক্রি নেই। আমাদের দেশে স্বর্ণালংকার বেশি ব্যবহার করেন মধ্যবিত্তরা। করোনার কারণে এই মধ্যবিত্ত এখন বড় সমস্যায় পড়েছেন। তাছাড়া বয়স্করা এখন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সবমিলিয়ে আমাদের বিক্রি শূণ্যের কোঠায় নেমেছে।

এদিকে, স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে রুপার দামও। প্রায় ৬ শতাংশ বেড়ে এই ধাতুটির প্রতি আউন্স বিক্রি হচ্ছে ২৪ দশমিক ৩৬ মার্কিন ডলারে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এই ধাতুটির দাম সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে রুপার দামে রেকর্ড তৈরি হয়।



 

Show all comments
  • Pranab kumar gole ২৯ জুলাই, ২০২০, ১১:২৮ এএম says : 0
    10 gram sonar dam kata
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ