Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যেন অন্য দেশগুলোর উদাহরণ বাকিদের কাছে ছিল না

করোনা বিপর্যয়ের নেপথ্যে-৬

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন ইউকে নামে একটি পরামর্শ সংস্থা গ্রুপ পরে বলেছিল যে, তারা অপ্রতুল প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম সম্পর্কে ২শ’ ৬০টিরও বেশি হাসপাতালের ডাক্তারদের কাছ থেকে ১৩শ’রও বেশি অভিযোগ পেয়েছে। কমপক্ষে ৩শ’ ব্রিটিশ স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯’র সংস্পর্শে আসার পর অবশেষে মারা যান। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. রিনেশ পারমার বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে কিছু ব্যক্তি মারা গেছেন। এটা ভেবে নেয়া খুবই অদূরদর্শিতা ছিল যে, চীনা সরবরাহ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’ এ মহাদেশে যেসব সরকার রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউরোপীয় কেন্দ্রের মানদন্ডগুলোর বিরোধিতা করে বাধা দিয়েছিল, তারা এখন সংস্থাটিকে কী কী সরঞ্জাম মজুদ করতে হবে, সেসম্পর্কে মরিয়া প্রশ্নে অস্থির করে তুলেছে।

মহামারি প্রতিরোধে কী প্রয়োজন ছিল, সংস্থাটি গত ফেব্রুয়ারিতে তার একটি তালিকা প্রকাশ করে। তবে ততক্ষণে বৈশ্বিক সরবরাহ শেষ হয়ে গিয়েছিল। ইউরোপীয় সেন্টারের সিনিয়র চিকিৎসক ড. অ্যাগোরিট্সা বাকার মন্তব্য, ‘বিষয়টি ইতোমধ্যে বহুলাংশে তাদের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।’ বেলজিয়ামে মাস্ক সঙ্কট এতটাই প্রচন্ড হয়ে ওঠে যে, রাজা ফিলিপ ব্যক্তিগতভাবে চীনা সংস্থা আলিবাবার কাছ থেকে একটি অনুদান সংগ্রহ করে দেন। ইউরোপীয় এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বছরের পর বছর ধরে বেলজিয়ামের মহামারি পরিকল্পনার পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করেন। কিন্তু যখন কোভিড-১৯ আঘাত করল, বেলজিয়ামের কর্মকর্তারা এটি নিয়ে পরামর্শটুকুও করেননি। দেশটির করোনাভাইরাস প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিতে সহায়তা করার জন্য খসড়া প্রস্ততকারী ড. এমানুয়েল আন্দ্রে বলেছেন, ‘এটি কখনোই ব্যবহার করা হয়নি।’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ গত মাচের্র শুরুতে দেশে সার্বিকভাবে সমস্ত মাস্কের মজুদ চেয়ে সরকারের নিজস্ব মজুদ হ্রাসের বিষয়টি অঘোষিতভাবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন।

তবে তিনি তখনও জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, ফ্রান্স প্রস্তুত রয়েছে। তার মুখপাত্র রেডিও শ্রোতাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘আমরা ফ্রান্সে জীবনযাত্রা থামাব না।’ এর ঠিক ১০ দিন পরই ম্যাখোঁ দেশে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন এবং কঠোরভাবে লকডাউনের নির্দেশ দিলেন। প্যারিসের সেন্ট লুই হাসপাতালের ড. ম্যাথিউ ল্যাফাউরি বলেছেন, ‘কেন আমরা প্রস্তুত ছিলাম না, তা আমি বুঝতে পারছি না। এটা ভীষণ অবাক ব্যাপার যে, প্রতিটি দেশের নিজেদের দিয়ে বুঝতে হচ্ছিল যে কী ঘটছে, যেন অন্য দেশগুলোর উদাহরণ তাদের কাছে ছিল না।’ ব্রিটেনের বরিস জনসন জনসাধারণকে ‘আত্মবিশ্বাসী ও শান্ত’ থাকতে বলেছিলেন। তবে, একই দিন গত ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারের সায়েন্টিফিক এডভাইজরি গ্রুপ ফর এমার্জেন্সিস-এসএজিই ব্যক্তিগতভাবে মত দেয় যে, দেশের ভেঙে পড়া জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমনকি চলতি বছরের শেষ দিকেও ব্যাপকহারে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করতে অক্ষম। তারপরেও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এবং কর্মকর্তারা মনে করেছেন যে, তারা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অন্যান্য দেশের চেয়ে ভাল জানেন। সেই দেশগুলি লকডাউন আরোপ করে সংক্রমণের হার হ্রাস করছিল। কিন্তু ব্রিটিশ বিজ্ঞানের পরামর্শদাতারা মনে করেছিলেন যে, এ জাতীয় বিধিনিষেধ অদূরদর্শিতা। তবে, এসএজিই তাদের নিজস্ব বৈঠকে ৩ অংশগ্রহণকারীসহ উপসংহারে বলেছিল, ‘নিষেধাজ্ঞাগুলো স্থায়ী না হলে মহামারিটির দ্বিতীয় ধাক্কায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।’

গত ৫ মার্চ ব্রিটেন করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে। ইউরোপ জুড়ে প্রতি ৩ দিনে দ্বিগুণহারে সংক্রমণ ঘটতে শুরু করে। ইতোমধ্যে উত্তর ইতালির বেশিরভাগ অংশ অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়। ঐ দিন ব্রিটেনের প্রধান চিকিৎসক উপদেষ্টা অধ্যাপক হুইটি সংসদীয় কমিটির সামনে নীতি নির্ধারকদের স্থিরভাবে আশ^স্ত করে ব্রিটেনের মহামারি মডেলের ওপর তাদের ভরসা রাখতে বলেছিলেন। হুইটি বলেছিলেন, ‘সেগুলি বিশ্বসেরা।’ তিনি বলেছিলেন, ‘এটি বাড়তে শুরু করলে, যথেষ্ট মাত্রার আত্মবিশ্বাসের সাথে আমরা এর মডেল তৈরি করতে সক্ষম হব।’ ইতালি থেকে উদ্বেগজনক খবর আসা সত্তে¡ও তিনি বলেছিলেন যে, কোনওভাবেই ভাইরাসের চ‚ড়ান্ত ধাক্কার পূর্বাভাস দেয়ার উপায় নেই। পাশাপাশি, তিনি জোর দেন যে, ব্রিটেনের সংক্রমণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছানোর আগে দেশটির হাতে ‘বেশ দীর্ঘ সময়’ আছে এবং তিনি বলেছিলেন যে, তার মহামারীর গাণিতিক মডেলটি সরকারকে সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপের আগে সর্বশেষ সম্ভাব্য মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষার করার সুযোগ করে দেবে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা হস্তক্ষেপ না করতে আগ্রহী। ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ আমাদের একেবারে বাধ্য হতে না হয়।’ (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ