Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাবিতে তদারকি ছাড়াই চলছে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ!

জাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২০, ১০:৩৯ এএম

করোনা মহামারীর মধ্যে জোড়ালো ভাবে চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পের আওতায় ১০ তলা বিশিষ্ট ৬টি হলের কাজ অনেকখানি শেষ হয়েছে। দিনের পাশাপাশি রাতের অন্ধকারেও চলছে কাজ। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, রাতের অন্ধকারে ঠিকাদার কিভাবে কাজ করছে তা কেউ দেখছেনা বলে অনিয়ম ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

এদিকে এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এই কমিটির অধিকাংশ সদস্যের অভিযোগ, তাদের সাথে কোন ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়া কমিটিতে নাম দেয়া হয়েছে। তারা জানান, হঠাৎ করে একটি চিঠি পাঠিয়ে কমিটিতে নাম দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। এরপর থেকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি, কিভাবে কাজ করবেন সেটিও বলে দেয়া হয়নি, অনেক সদস্যকে কোন মিটিংয়ে ডাকাও হয়নি। যার কারণে বেশিরভাগ সদস্যই কোনদিন নির্মাণাধীন হলগুলোর কাছেও যায়নি। এমনকি কোন হলের তদারকির তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন তাও জানেননা অনেক সদস্য।

এদিকে তদারকি কমিটির এসব সদস্যরা বলছেন, ঠিকাদার ঠিকমত হলগুলো নির্মাণ করছে কিনা তা তারা জানেননা। যদি ঠিকাদার নির্মাণকাজে কোন গড়মিল করে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে তদারকি কমিটির সদস্য হিসেবে দায়ভার তাদের উপর আসতে পারে। তাই তদারকি কমিটির অনেক সদস্য দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী ও মোতাহের হোসেন দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানা যায়। এছাড়া এই প্রতিবেদকের কাছে তদারকি কমিটির কমপক্ষে ৫ জন সদস্য জানিয়েছেন, তারাও দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে চিন্তা করছেন।

এদিকে একটি সূত্রে জানা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এক অনলাইন মিটিংয়ে অধ্যাপক মান্নান ও মোতাহারকে তদারকি কমিটি থেকে পদত্য্যাগ না করতে অনুরোধ জানান। তবে তারা সে অনুরোধ না শুনে তাদের সিদ্ধেন্তে অটল রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, নির্মাণাধীন ১৭ নং হলের তদারক কমিটিতে আছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন। ১৮ নং হলের কমিটিতে আছেন অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ও সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা। ১৯ নং হলের অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুন্ডু, অধ্যাপক আরজু মিয়া ও অধ্যাপক রিসালাত তাসিন খান। ২০ নং হলের অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান, অধ্যাপক কৌশিক সাহা ও সহকারী অধ্যাপক ফখরুল ইসলাম। ২১ নং হলের অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, অধ্যাপক মোতাহার হোসেন, সহকারী অধ্যাপক তারেক হোসেন। এছাড়া ২২ নং হলের অধ্যাপক মুহাম্মদ হানিফ আলী, অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর।

নির্মাণের কাজের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ২১ নং হলের তদারকির দায়িত্ব পাওয়া উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরীর জানান, আমাকে না জানিয়ে তদারকি কমিটিতে রাখা হয়েছে। তাই আমি ইতিমধ্যে উপাচার্যকে জানিয়ে দিয়েছে আমাকে এই কমিটি থেকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে।’

২২ নং হলের দায়িত্ব পাওয়া অধ্যাপক হানিফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বয়স্ক মানুষ, করোনার এই সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ ছাড়া বাসার বাইরে যাইনা। এমন অবস্থায় আমার পক্ষে এগুলো দেখাশুনা করা সম্ভব নয়।’

আপনাকে তদারকি করার জন্য কখনও ডাকা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কখনই আমাকে ডাকা হয়নি। এমনকি কি তদারকি করতে হবে তাও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।

২০ নং হলের দায়িত্ব পাওয়া সহাকারী অধ্যাপক ফখরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনিও জানান, কখন তিনি তদারকি করতে জাননি। কারণ তিনি জানেনা কি তদারকি করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার সেকশন থেকে একটা কর্মশালার আয়োজন করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পারতো আমাদের কাজ কি হবে? তাহলে জিনিসটা সুন্দর হতো।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের দৃষ্টিকোনে ঠিকাদাররা সুযোগ পেলেই কাজে গড়মিল করেন। এমন অবস্থায় হলগুলোতে কি কাজ করেছে এটা চিন্তার বিষয়। তাই আমিও দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে চিন্তা করছি।

১৮ নং হলের দায়িত্ব পাওয়া সহযোগী অধ্যাপক হোসনে আরা বলেন, আমি একবার নিজ দায়িত্বে হলের কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিন ঢাকা থেকে বড় বড় ইঞ্জিনিয়াররা এসেছিলেন।’

অধ্যাপক আলমগীর কবির বলেন, আমাকেতো টিএসসির পরিচালক হিসেবে টিএসসি সংশ্লিষ্ট একটি ভবনের দায়িত্ব দেয়ার কথা। কোন হলের তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটা আমার জানা নেই।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক তদারকি কমিটির সদস্য জানান, রাতের অন্ধকারে কোনরকম তদারকি ছাড়া, তাড়াহুড়া করে যেভাবে ভবনগুলো তৈরী করা হচ্ছে, তাতে তাদের মনে হয়েছে যথাযথভাবে কাজ সম্পাদন হচ্ছেনা। তাই যদি ভবিষ্যতে হলগুলোতে কোন সমস্যা দেখা দেয়, এতে তদারকি কমিটির সদস্য হিসেবে তাদের উপরেও দায় আসতে পারে। তারা কেউই এই দায় নিতে রাজি নন। এই জন্যই তারা পদ থেকে সরে যেতে চাচ্ছেন।

তবে ১৭ নং হলের তদারকির দায়িত্ব পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, কয়েকবার তাদরকি কমিটির মিটিং হয়েছে। এসব মিটিংয়ে অনেকেই উপস্থিত ছিল। আমি মাঝে মাঝেই ১৭ নং হলের নির্মানকাজ তদারকি করেছি। খালি চোখে যতটুকু তদারকি করা সম্ভব তাই করেছি। আসলে আমরাতো এই বিষয়ে তত অভিজ্ঞনা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তদারকি কমিটির একজন আমার কাছে অপারগত জানিয়েছে, তিনি কমিটিতে থাকতে চাননা। নাম জানতে চাইলে তিনি আর কোন কথা বলেননি। পরবর্তীতে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

প্রকল্পের পরিচালক নাসির উদ্দিনের কাছে কাজের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুণগত মান ঠিক রেখে, কোয়ালেটি নিশ্চিত করে হলগুলোর কাজ করা হচ্ছে।

তদারকি কমিটির সদস্যদেরকে ডাকা হয়না, তাদের কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়নি এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চিঠিতে সুন্দরভাবে উল্লেখ করে দিয়েছি ওনাদের কাজ কি। তারপরও ওনারা যদি কোন কিছু না বুঝেন তাহলে আমাদের কাছ থেকে বুঝে নিতে পারতেন। কাজের কোন বিষয়ে নিয়ে প্রশ্ন থাকলে, কোন ডুকুমেন্টস দেখার থাকলে দেখে নিতে পারতেন। এখানে কোন লুকোচুরি করা হচ্ছেনা।

রাতে কাজ করার বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রুত গতিতে কাজ শেষ করা দরকার। তাই ২৪ ঘন্টাই কাজ চলছে। এখন তদারকি কমিটি কি ২৪ ঘন্টাই সেখানে থেকে কাজ দেখবেন? যদি ওনারা দেখতে চান দেখতে পারেন। তবে এই কাজ দেখার জন্য কনসালটেন্সি ফার্ম রয়েছে তারা দেখছেন। বুয়েটের টিম কাজের মান পরীক্ষা করছে। এখানে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই।

এই বিষয়ে দুর্নীতির রিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর প্লাটফর্মের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, প্রথমত এই হলগুলোর যে কাজ চলছে সেটা অবৈধভাবে হচ্ছে। কারণ ভিসি ও রেজিস্ট্রার ১২ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেছিলেন মহাপরিকল্পনার ত্রুটি গুলোর সমাধান করে নতুন জায়গায় হলের কাজ শুরু করবেন। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম করোনার এই সুযোগে তারা সেসব চুক্তি ভঙ্গ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে রাতের অন্ধাকারেও দায়সারা ভাবে কাজ করা হচ্ছে। তাই আমার কাছে মনে হচ্ছে,এই কাজ করার মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের এক মহাজজ্ঞ চলছে। এছাড়া তিনি তদারক কমিটির পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->