Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহামারির মানদন্ড চিহ্নিতে বাধা ইইউ সরকারগুলোর

করোনা বিপর্যয়ের নেপথ্যে-৫

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাইরে থেকে ইউরোপের সুরক্ষা ব্যবস্থা তখনও বলিষ্ঠ দেখাচ্ছিল। প্রতিটি দেশের মহামারি প্রস্তুতি সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষণ ক্রটিহীন বলে মনে হয়েছিল, তবে প্রক্রিয়াটি ছিল ভ্রান্ত। সরকারগুলো ইউরোপিয়ার সেন্টার ফর ডিজিস প্রিভেন্শন এন্ড কন্ট্রোল-ইসিডিসিকে মহামারি বিষয়ে একটি দৃষ্টান্তমূলক মানদন্ড স্থাপন করতে এবং স্বাস্থ্যখাতের ঘাটতিগুলি চিহ্নিত করতে বাধা দিয়েছিল। ফলে জনসমক্ষে প্রতিষ্ঠানটির করোনাভাইরাস সম্পর্কিত মন্তব্যগুলো প্রায় অবিসংবাদিতভাবে ইতিবাচক ছিল। ব্রিটেন, স্পেন এবং গ্রীস তাদের তথাকথিত অতি নিবেদিত বিশেষজ্ঞগণ, বিশ্বস্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থা এবং তাদের পদ্ধতির প্রতি আস্থা রাখার জন্য প্রশংসিত হয়েছিল।

ইসিডিসি’র প্রাক্তন প্রশিক্ষক আর্থার বসম্যান এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘আমরা বলতে পারিনি, আপনার এটি থাকা উচিত। পরামর্শ এবং মূল্যায়ন পর্যবেক্ষণের ভাষায় প্রকাশ করতে হতো।’ ইউরোপীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জাতীয় মজুদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। এ কারণে ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মহাদেশব্যাপী শ্বাসযন্ত্র বসানোর জন্য করার জন্য ডাকের অনুরোধ করেছিলেন। তবে, উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়ে। কারণ ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং অন্যান্য বড় দেশগুলো মনে করেছিল যে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। বেলজিয়াম পরে নিজস্ব মজুদ থেকে কয়েক মিলিয়ন মেয়াদোত্তীর্ণ মাস্ক ধ্বংস করে দেয় এবং কখোনোই সেগুলি প্রতিস্থাপন করেনি। সোয়াইন ফ্লু প্রাদুর্ভাবের পর জনস্বাস্থ্য ব্যয় স্থানীয় পরিষদগুলিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে ব্রিটেন থাইল্যান্ডে আবির্ভ‚ত হওয়া এবং ব্রিটেনের ২ লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করা সোয়াইন ফ্লু’র বিরুদ্ধে এক্সারসাইজ সিগনাস নামক একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তার প্রস্তুতি পরীক্ষা করে। দেশজুড়ে নয় শতাধিক কর্মকর্তা সেই ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু’ অনুশীলনে অংশ নিয়েছিলেন। পরিকল্পনাকারীরা স্পষ্টতই কল্পনাও করতে পারেননি যে, বিদেশ থেকে প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা কোনও সমস্যা তৈরি করতে পারে। অংশগ্রহণকারীদের এবং একটি চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, সর্বোপরি অনুশীলনটির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল যে, অনেক কর্মকর্তা দেশের মহামারি পরিকল্পনা এবং সেসম্পর্কে তাদের ভ‚মিকা সম্পর্কে অনিশ্চিত ছিলেন। শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারের পরামর্শদাতা এবং এসংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলির খসড়াতে সহায়তাকারী প্রফেসর রবার্ট ডিংওয়াল বলেছেন, ‘এটি সরকারের অবকাঠামোর অভ্যন্তরে একটি ফাঁক দেখিয়েছিল। এবং তা কখনও সংশোধন করা হয়নি।’

দু’বছর পর বাস্তব বিশ্বে স্বাস্থ্যশিল্প বিষয়ক প্রত্রিকাগুলি জানায় যে, চীন সরকার দূষণের বিরুদ্ধে অভিযানে একটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে যা প্রতি সপ্তাহে ব্রিটিশ হাসপাতালগুলিতে প্রায় ১৮ লাখ সুরক্ষামূলক এপ্রোন সরবরাহ করতো। অভাবটি সাস্থ্যখাতে ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদপত্রগুলি পরিস্থিতিকে ‘এপ্রোন সঙ্কট’ হিসাবে ঘোষণা করে। কেউই সম্ভবত বাস্তবভাবে চিন্তা করতে পারেনি যে, সমস্ত চীনা সরবরাহ একবারে বন্ধ হয়ে গেলে ইউরোপের কী হবে।

গত ২৮ জানুয়ারী ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা একটি আশঙ্কা উত্থাপন করেছিলেন। বিস্তৃত মহামারিটি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামগুলোতে, বিশেষত সর্বোচ্চ সুরক্ষা রদয়া মুখমন্ডল ঢাকা যান্ত্রিক আবরণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী এক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। পরবর্তী সময়ে যে কোনও মজুদের ক্ষেত্রে বিলম্বিত সিদ্ধান্ত ‘প্রাপ্যতার দিক থেকে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে’ বলে শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস সম্পর্কিত পরামর্শদাতা প্যানেল সতর্ক করে দেন। তবে, এটি স্পষ্ট নয় যে, ব্রিটেন তার সুরক্ষা সরঞ্জামগুলির সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে আন্তরিক হয়েছিল। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুধু বলেছে যে, ২৭ জানুয়ারির সপ্তাহটিতে তারা অনির্দিষ্ট ‘আলোচনা ও ফরমাশ’ শুরু করেছিল। তবে স্বাস্থ্য সচিব ম্যাট হ্যানকক পরে স্বীকার করেছেন যে, ব্রিটেন কেনা শুরু করার আগেই বিশ্বব্যাপী চাহিদার উচ্চহার সুরক্ষা সরঞ্জামগুলিকে মহামূল্যবান বানিয়ে দেয় এবং সেগুলি সংগ্রহ করাকে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জে পরিণত করে। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ