মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
করোনাভাইরাস নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্ক বার্তা অবজ্ঞা করে বিশ্বের দেশগুলোর ত্রুটিপূর্ণ নমুনার ওপর একগুঁয়ে ভ্রান্ত বিশ্বাস, তথাকথিত আমলাতান্ত্রিক লম্ফঝম্প এবং তাদের নিজস্ব সম্পদের অহামিকাকে উন্মোচিত করেছে এবং ভাইরাসটিকে মহামারিরূপে বিশ^ময় ছড়িয়ে দিয়েছে। করোনা বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে ভুল পদক্ষেপ, ভুল সিদ্ধান্ত এবং ভুল বোঝাবুঝি। ফলে ক্রমেই বেড়ে চলেছে সংক্রমণের মাত্রা এবং মৃত্যুহার। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্সে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সুদীর্ঘ প্রতিবেদনটি ৭ পর্বে উপস্থাপন করা হ’ল ঃ
ব্রিটেনের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি দু’বছর আগে লন্ডনের একটি যাদুঘরে একটি অডিটোরিয়ামে দাঁড়িয়ে মারাত্মক মহামারিগুলির তালিকা তৈরি করেছিলেন। চতুর্দশ শতাব্দীর ব্ল্যাক ডেথ থেকে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের কলেরা পর্যন্ত এটি এক বেদনাদায়ক ইতিহাস। তবে অধ্যাপক হুইটি, যিনি আফ্রিকার সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন, তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন যে, ব্রিটেনের একটি বিশেষ সুরক্ষা রয়েছে, তা হল ধনী হওয়া। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘সম্পদ মহামারির বিরুদ্ধে একটি সমাজকে ব্যাপকভাবে কঠোর করে তোলে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বকে বিধ্বস্ত করা রোগগুলিকে বন্ধ করতে জীবনযাত্রার মান, খাদ্য, আবাসন, পানি এবং স্বাস্থ্যসেবা যে কোনও ওষুধের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
তবে, প্রফেসর হুইটির আত্মবিশ্বাস অস্বাভাবিক নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা যখন চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বিষয়ে ব্রাসেলসে সাক্ষাৎ করেন, তারা তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্যখাতের প্রশংসা করেন এবং দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। সেসময় ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরানজা বলেছিলেন, ‘কেবলমাত্র ইতালি এবং ইউরোপ নয়, আফ্রিকা মহাদেশের দায়বদ্ধতাও আমাদের উপর বর্তায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।’ বেলজিয়ামের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাগি দে ব্লক তাতে সম্মতি প্রকাশ করেছিলেন।
এর এক মাস পরেই ইউরোপ মহাদেশ করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রাক্তন উপনিবেশগুলিতে প্রাথমিকভাবে দাতা হিসাবে পরিষেবা দেয়ার পরিবর্তে পশ্চিম ইউরোপ মহামারিটির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি এবং বেলজিয়ামে মৃৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার কারণে একদা মহামারি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে গর্ব করা কর্মকর্তারা উন্মত্তের মতো করোনা পরীক্ষার সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম এবং উপকরণগুলি নিশ্চিত করার চেষ্টা শুরু করেন।
এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। পশ্চিম ইউরোপের দক্ষতা এবং সম্পদ দরিদ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া মহামারির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রতিষেধক সরবরাহ করবে বলে আশা করা হয়েছিল। অনেক ইউরোপীয় নেতা সর্বশেষ মহামারি ২০০৯ সালের সোয়াইন ফ্লু’র পর এতটাই সুরক্ষিত বোধ করেছিলেন যে, তারা সুরক্ষা সরঞ্জামের মজুদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তার সমালোচনা করেছিলেন। তবে সেই আত্মবিশ্বাস তাদের অকর্মণ্যতাকে প্রমাণিত করেছে। তাদের মহামারি পরিকল্পনাগুলি ভ্রান্ত অনুমান এবং মিথ্যা আশার ওপর নির্মিত হয়েছিল।
ইউরোপীয় নেতারা তাদের বিশ্বমানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে গর্ব করেছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে বিগত এক দশকের বাজেট কর্তন তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছিল। করোনা সংক্রমণ হওয়ার পর দেখা গেল, তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংক্রমণের ভয়াবহতা পরিমাপের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পরীক্ষা করতে বা স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে অক্ষম। রোগ সংক্রমণের জবাবদিহিতার প্রক্রিয়াও অথর্ব প্রমাণিত হয়েছে। হাজার হাজার পৃষ্ঠার জাতীয় মহামারি পরিকল্পনা নানান আমলাতান্ত্রিক লম্ফঝম্পের মধ্যে সামান্যই প্রভাব বিস্তার করেছিল। কিছু দেশের কর্মকর্তারা তাদের পরিকল্পনা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে কোনো পরামর্শই করেননি। অন্যান্য দেশের নেতারা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সতর্কবার্তা অবজ্ঞা করেছিলেন। করোনা মহামারির প্রাক্কালে প্রায় প্রতিটি দেশের মহামারি প্রস্তুতি আত্ম-অভিনন্দনের রীতিতে পরিণত হয়েছিল। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।