Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদালতে মামলার পাহাড়

চট্টগ্রামে করোনায় বিচার কার্যক্রম স্থবির : কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতার চার গুণ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিগত ২০১৩ সালে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান মো. সুমন। কোন সাক্ষী আদালতে ঘটনায় জড়িত হিসাবে তার নাম বলেনি। এক বছর আগে উচ্চ আদালত মামলাটি এক মাসের মধ্যে নিস্পত্তির নির্দেন দেন। তবে যুক্তিতর্ক শেষ হতেই শুরু হয় করোনা সংক্রমণ। আর তাতে মামলার বিচার বন্ধ, কারাগারেই বন্দি আসামি। তার আইনজীবী বলছেন, মামলার বিচারে হয়তো তার সাজা হতো না, আর সাজা হলেও এতদিনে তিনি উচ্চ আদালতে যেতে পারতেন। কিন্তু এখন চরম এক অনিশ্চিয়তায় কারা প্রকোস্টে তার দিন কাটছে। তার অসহায় পরিবারে বাড়ছে হতাশা।

সুমনের মতো এমন শত শত বন্দি এখন কারাগারে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন। করোনার কারণে মামলার বিচার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় আদালতে মামলার পাহাড় জমছে। সেই সাথে বাড়ছে বিচারপ্রার্থী ও তাদের স্বজনদের দুর্ভোগ, দীর্ঘশ্বাস। আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের জেলা, মহানগর, নারী শিশু এবং কয়েকটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালসহ ৯০টি আদালতে এখন প্রায় দুই লাখ মামলা নিস্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলছে। এ সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। বিচার না হওয়ায় কারাগারে আসামিদের বন্দিদশা কাটছে না। জামিন পাওয়ার সুযোগ নিতেও পারছেন না অনেকে। ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুণ বন্দির ভারে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের অবস্থা এখন টালমাটাল।

আইনজীবীরা বলছেন, ভার্চুয়াল কোর্টে কিছু মামলার জামিন শুনানি আর জামিন হলেও বিচারাধীন মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলার জট বাড়ছে। ভার্চুয়াল কোর্টের পাশাপাশি নিয়মিত আদালত চালুর দাবিতে চট্টগ্রামের আইনজীবীরা মিছিল সমাবেশও করছেন। মাসের পর মাস বিচার কার্যক্রম স্থবির থাকায় আইনজীবী এবং আইনজীবী সহকারীরাও সঙ্কটে পড়েছেন। হত্যা, ধর্ষণ, অস্ত্রবাজি, মাদক ও চোরাচালানের অনেক মামলা বিচারাধীন। দ্রুত বিচার ট্র্ইাব্যুনাল, জননিরাপত্তা আদালতের চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারও বন্ধ। এতে চাঞ্চল্যকর মামলা নিস্পত্তি হচ্ছে না।

চট্টগ্রামের পরীর পাহাড়ের আদালত ভবনে এখন আগের মতো ভিড়-জটলা নেই। নেই বিচারপ্রার্থী হাজারো মানুষের ছুটোছুটি। বেশিরভাগ আইনীজীর চেম্বার বন্ধ। আদালত ভবনকে ঘিরে অসংখ্য মানুষ নানা ধরনের ব্যবসা করতেন। তাদেরও এখন কঠিন সময় যাচ্ছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, সরকার মানুষের জীবন এবং জীবিকা দুটোই রক্ষা করতে কাজ করছে। মানুষের জীবন রক্ষায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা হয়েছে। আমরা আইনমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করছি, কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সবকিছু স্বাভাবিক করা যায়। আশা করি খুবশিগগির আদালতে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হবে। এখনও আদালতের কার্যক্রম সীমিত আকারে হলেও চলছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টে কিছু মামলার জামিন শুনানি হচ্ছে, অনেকে জামিনও পাচ্ছেন। তবে হত্যা, ধর্ষণ, অস্ত্র, মাদক মামলার আসামিরা জামিন পাচ্ছেন না। নি¤œ আদালতে জামিন না পেয়ে যারা মিস মামলা করেছেন সেসব মামলারও শুনানি হচ্ছে। বিচারাধীন মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আসামির হাজিরা, জামিন আবেদন বন্ধ রয়েছে। আবার মামলা নিস্পত্তি না হওয়ায় মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। আসামির আত্মসমর্পন এবং নতুন মামলা দায়েরও হচ্ছে।

মহানগর আদালতের সাবেক পিপি আবদুস সাত্তার বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে আদালতের আংশিক কার্যক্রম চলছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে মামলা জট বাড়ছে, কারাগারে বন্দির সংখ্যাও বাড়ছে। বিচার পাওয়া, জামিন চাওয়া আসামির মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে বিচারপ্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বিচারপ্রার্থী লাখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালুর দাবি জানান।
এদিকে বিচার কার্যক্রম স্থবির থাকায় কারাগারে বন্দির সংখ্যা বাড়ছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে কারাগারে ছয় হাজার ৬শ বন্দি আছে। ধারণ ক্ষমতা এক হাজার ৭১৩ জন। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ জন আসামি জামিন পাচ্ছেন, আগে এ সংখ্যা ছিলো প্রায় তিনগুণ বেশি। তবে আগের তুলনায় কারাগারে আসামি আসার হারও কমেছে। আদালত পুলিশের (প্রসিকিউশন শাখা) কর্মকর্তারা জানান, নিয়মিত মামলায় যেসব আসামি গ্রেফতার হচ্ছে, তাদের আদালতে হাজির করা হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় আসামি গ্রেফতারের হার কমেছে।

করোনায় বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য চট্টগ্রামের প্রবীণ আইনজীবী কবির চৌধুরীসহ প্রায় ১২ জন আইনজীবী মারা গেছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন জেলা আইনজীবী সমিতির নেতাসহ বেশ কয়েকজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আদালত

২৪ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ