Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যাক্রান্ত এলাকা করোনার ঝুঁকিতে

আতিক সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০৪ এএম

দেশে বর্ষার ভরা মওসুম চলছে। থৈ থৈ পানিতে ভাসছে দেশের কোটি মানুষ। ঘরবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে বানভাসি মানুষ। করোনায় কর্মহীন পানিবন্দি মানুষ তাদের গৃহপালিত পশু হাঁস-মুরগী আসবাবপত্র নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে খেয়ে না খেয়ে। বর্ষার এ সময়টাতে বন্যাক্রান্ত মানুষ সাধারণত তীব্র জ্বালানি সংকটে ভোগে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দেয় তাদের মধ্যে। এসময় স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন সম্ভব হয় না কোনভাবেই। নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষ বন্যার এ সময়টাতে স্বল্প পরিসরে পরিবার পরিজন ও তাদের আসবাবপত্র হাড়ি পাতিল গরু-বাছুর, হাস-মুরগী নিয়ে একসাথে গাদাগাদি করে কোন রকমে সময় পার করে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে করোনাকালে বন্যাক্রান্ত দেশের মানুষ কীভাবে সমাজিক দূরত্ব বা শারীরিক দূরত্ব মেনে চলবে। পা বাড়ালেই পানি, সাঁতার জানে না কোলের এমন শিশু নিয়ে বাড়তি ঝামেলাতো রয়েছেই। এ অবস্থাতেই মাচাঙে বা ঘরের চালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে পানিবন্দি মানুষ। এসব কারণে বন্যাক্রান্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ঢাকাসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে সাতদিন পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় অতিবাহিত করে বৃষ্টি কিছুটা কমে এলেও সপ্তাহ খানেক পর আবার তা শুরু হতে পারে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চেলে সবগুলো নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছে। করোনাভাইরাসে কার্যতঃ অচল অর্থনীতির কারণে কর্মহীন মানুষ বিগত ৪ মাসে তাদের হাতের সকল পুঁজি হারিয়ে এখন শূন্যহাতে অনাগত ভবিষ্যতের দুঃস্বপ্নে বিভোর। কী করবে কোথায় যাবে? যেখানে চাল নেই চুলা নেই, সেখানে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানা কতোটা সম্ভব? বন্যার সময় এমনিতেই মানুষের হাতে কাজ থাকে না। তার উপর এবার করোনার কারণে আগেই থেকেই অনেক মানুষ কর্ম হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তাই করোনাকালে বন্যাক্রান্তদের প্রতি মানবিক সাহায্যের খুব প্রয়োজন। সরকারিভাবে অথবা দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার এখনই সময়। এছাড়া এসব হতদরিদ্র বন্যাক্রান্ত দেশের জনগণকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বে প্রতি ৯ জনে একজন ক্ষুধার্ত। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্ন্তজাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম তাদের বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে, সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যে পরিমাণ লোক মারা যাবে, তার চেয়ে বেশি লোক মারা যাবে ক্ষুধায়। করোনায় দিনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার লোক মারা গেছে, সেখানে ক্ষুধায় মৃত্যু হবে ১২ হাজার মানষের। প্রতিবেদনটিতে অক্সফাম আরও বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে লকডাউনে মানুষ গণহারে বেকার হয়ে পড়েছে, তাদের আয় কমে গেছে। খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মানবিক সাহায্য কার্যক্রমও কমে আসছে। আর এসবের পুরো প্রভাব গিয়ে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। আগে থেকেই বিশ্বে ৮২ কোটি ১০ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছে। এদের মধ্যে আবার ১৫ লাখ মানুষ অতিমাত্রায় খাদ্যাভাবে ছিলেন। এ বছর করোনা মহামারিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি এতোটাই গতিহীন যে, করোনা পরবর্তী বিশ্ব চরম অর্থনৈতিক স্থবিরতায় দিশেহারা হয়ে পড়বে।

করোনাকালে অত্যন্ত দক্ষতায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলা সম্ভব হয়েছে। এখন করোনা ও বন্যা পাশাপাশি চলছে। বন্যা ক্রমেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে। ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে অনেকের বসতভিটা। সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্যারেজ রক্ষায় সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় তিস্তার পানিতে লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উজানের পাহাড়ি ঢলের পানির সাথে বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে বন্যা পরিস্থিতির এতোটাই অবনতি হয়েছে যে দ্রুত সেখানে ত্রাণ পৌঁছানো দরকার। বিশেষ করে শুকনো খাবার যত দ্রুত সম্ভব সেখানে পৌঁছানো দরকার। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট, করতোয়া নদীর পানি দ্বিতীয় বারের মতো বেড়ে উঠায় গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। জেলার সদর উপজেলাসহ সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। ইংরেজি মধ্য জুন থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বর্ষা থাকে। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে বর্ষা জুন থেকে শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত চলে। এ সময়েই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বছরের অন্য সময় এমনটা বৃষ্টি হতে দেখা যায় না। দেশে সারাবছর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় তার ৮০ ভাগ বৃষ্টি হয় এ সময়। বর্ষার এ সময়ে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর অথৈ জলে থৈ থৈ করে। এসময় বানের পানিতে প্লাবনভূমি প্লাবিত হয়ে যায়। পণ্য ও কন্যা নিয়ে নৌকা ছুটে চলে এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে। বানের এ পানি কতোদিন থাকবে তা স্থানীয়ভাবে বর্ষার পানির গভীরতার ওপর নির্ভর করে। সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও পাবনা জেলার হাওর, বিল, ঝিল-এর মতো নিচু এলাকাগুলোতে বর্ষা ৬ মাসের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়। আমাদের দেশের মধ্য অংশে এর স্থায়িত্ব খুবই কম, সর্বোচ্চ তিন মাস।

দেশের বন্যাক্রান্ত মানুষের এ সময়টা কাটে আতঙ্কের মধ্যে। সহায় সম্বলহীন অসহায় মানুষের যার যেটুকু আছে সেখানেও ভয় তাড়া করে ফিরে কখন যেন ডাকাতদল নৌকা নিয়ে এসে লুটে নিয়ে যায়। বন্যাক্রান্ত এই সব পানিবন্দি মানুষের সাধারণ স্বাস্থ্যের যেখানে এতোটুকু নিশ্চয়তা নেই সেখানে করোনাভাইরাসের মতো অপ্রতিকারযোগ্য রোগের সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধ করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা মোটেও কী সম্ভব? বিষয়টি প্রশাসনের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিয়ে বন্যাক্রান্তদের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন