Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানুভবতার পুরস্কার পাচ্ছেন রাশফোর্ড

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

ইংল্যান্ডে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছিল বরিস জনসন প্রশাসন। সংকটের মুখে আরও ভয়ংকর এক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। নিম্ন আয়ের পরিবারের বিদ্যালয় পড়ুয়া শিশুদের বিনা ম‚ল্যে খাবার দেওয়ার প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিল জনসন সরকার। বলতে গেলে একরকম একাই অমন এক হঠকারি সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে বাধ্য করেছিলেন মার্কাস রাশফোর্ড। কিন্তু কীভাবে?
কয়েক মাস ধরেই ক্ষুধার্ত শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার কাজটা করে যাচ্ছিলেন রাশফোর্ড। করোনাভাইরাস মহামারিতে লকডাউনের মধ্যে ফ্যানশেয়ারের সঙ্গে ক্যাম্পেইনে নেমেছিলেন ইউনাইটেডের এই তারকা। স্কুলে বিনা পয়সায় খাবার পাওয়া শিশুরা তো লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনের মধ্যে ছিল। তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে ১ লাখ পাউন্ড তুলতে ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন এ স্ট্রাইকার। এক লাখ পাউন্ড তোলার লক্ষ্য মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে পূরণ হয়ে যায়। আরও ২০ মিলিয়ন পাউন্ড তুলতে সাহায্য করেছেন রাশফোর্ড। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন লক্ষ্যস্থির করেছিলেন এই ইউনাইটেড তারকা।ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে তিন মিলিয়ন খাবার তুলে দিতে জুনের মধ্যে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে চাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। এর মধ্যেই ঘোষণা আসে, শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য বরিস জনসন সরকারের অনাগ্রহের কথা।
যুক্তরাজ্যে নিম্ন আয়ের পরিবারের বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের খাবারের খরচটা সাধারণত দেয় সরকার। ‘ফ্রি স্কুল মিল’ নামের এই প্রকল্পের অধীনে ১৩ লাখ শিশু পায় এই সুবিধা। করোনা-পরিস্থিতিতে সরকার এ খরচ আর চালাতে রাজি ছিল না। তাই নতুন টার্ম শুরু হলেই এই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল তারা। স্কটল্যান্ড ও ওয়েলশ অবশ্য ঠিকই নিম্ন আয়ের শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছিল।
যেখানে এমন সঙ্গিন সময়ে আরও বেশি করে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত, তখন সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কষ্ট দিয়েছিল রাশফোর্ডকে। সরকারের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন আবেগঘন এক চিঠি। চিঠিতে এমন সিদ্ধান্ত কতটা অযৌক্তিক ও অমানবিক সেটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এই তারকা। মাত্র ২২ বছর বয়সী এক তারকার এমন সুচিন্তিত চিঠিতে নড়েচড়ে বসতে হয়েছিল রাজনীতিবিদদের। তাই স্কুল ছুটির সময়টাতেও শিশুদের খাবারের খরচ দেওয়ার জন্য ‘কোভিড গ্রীষ্মকাল স্কুল ফান্ড’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর আওতায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৫ পাউন্ড করে দেওয়া হবে। এর অধীনে মোট ১২ কোটি পাউন্ড বা ১২ শ কোটি ৮৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছিল জনসন সরকার।
যার সিদ্ধান্তে এত বড় একটা কাজ হল, তাঁকে এবার পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছে ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার’। নিজেদের ঘরের ছেলেকে সম্মানস‚চক ডিগ্রি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ডিগ্রি পেলে রাশফোর্ডই হবেন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করা সব চেয়ে কমবয়সী গ্র্যাজুয়েট। ফুটবলার ও একজন মানবাতবাদী হিসেবে তার যে অর্জন, সেটাকে মাথায় রেখেই এই অনবদ্য সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাশফোর্ডের আগে এই সম্মান অর্জন করেছিলেন শুধু স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ও স্যার ববি চার্লটন। আপ্লুত রাশফোর্ড প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ‘আমার ও আমার পরিবারের জন্য অনেক গর্বের দিন আজ। আপনি যখন দেখবেন এই পুরস্কার আগে কে কে পেয়েছেন, সেটা দেখলে আপনার আরও সম্মানে মাথা নুয়ে আসবে। শিশু দারিদ্র্য নিরসনে আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকি। কিন্তু নিজ শহরের কাছ থেকে এমন সম্মাননা পাওয়ার অর্থ হল আমি সঠিক পথেই আছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় কিছু। দ্য ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারকে ধন্যবাদ।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ