পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে বিশ্বঅর্থনীতি ও উৎপাদনব্যবস্থা মন্দার কবলে পড়েছে। এ থেকে উত্তরণে উন্নত দেশসহ সব দেশই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দ্রুত শুরু করেছে। এক্ষেত্রে খাদ্যোৎপাদন নিশ্চিত রাখার কোনো বিকল্প নেই। আশার কথা, বৈশ্বিক মন্দাবস্থার মধ্যেও আমাদের কৃষি উৎপাদনে কোনো ঘাটতি হয়নি। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৎস্য, গবাদিপশু, শাক-সবজি, ফলফলাদি উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশের কৃষক ও খামারিরা খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চতকরণে নিরলস কাজ করে চলেছে। তবে কৃষিখাতের আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকায়ন করা গেলে কৃষির উৎপাদনশীলতা যেমন আরও বাড়বে, তেমনি উৎপাদনব্যয়ও কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। করোনাদুর্যোগের সময় হাওরাঞ্চলসহ দেশের কৃষিপ্রধান এলাকাগুলোতে কৃষিশ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দেয়ার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে ধান কাটতে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। দেশে সামগ্রিক কৃষিব্যবস্থায় শ্রমিকের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। শ্রমিকের মজুরীও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিকের মজুরি এবং অন্যান্য খরচ দিয়ে প্রান্তিক চাষীদের তেমন কোনো লাভ থাকে না। এহেন বাস্তবতায় কৃষিকে আধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে পারলে উৎপাদন খরচ, সময় এবং শ্রমিকসংকট অনেকাংশে কাটানো সম্ভব। জমিচাষ ও প্রস্তুতকরণ, ফসলের বীজ ও চারা রোপন, নিড়ানি, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, সেচ, ফসলকাটা, মাড়াই ও বস্তাজাত করাসহ সব কাজই এখন যন্ত্রের মাধ্যমে করা হচ্ছে। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ইতিমধ্যে গরু-মহিষের হালচাষের স্থলে যান্ত্রিক পাওয়ারটিলারের প্রচলন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফসলকাটা ও মাড়াই যন্ত্রের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি প্রকল্প সেই উদ্যোগের প্রাতিষ্ঠানিক ও পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করবে।
করোনার এই সময়ে সরকার কৃষিখাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতিত কোনো জমি ফেলে না রেখে তাতে ফসল ফলানোর তাকিদ দিয়েছেন। বেশি ফসল উৎপাদনের কথা বলেছেন। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যনিরাপত্তা সৃষ্টি এবং খাদ্যসংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর এ আহবান অত্যন্ত সময়োপযোগী। এ ব্যাপারে সরকার ব্যাপক উদ্যোগও নিয়েছে। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ণের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সবগুলো উপজেলায় কৃষিব্যবস্থার আধুনিকায়ণে কাজ করবে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। চলতি জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে হলে কৃষির আধুনিকায়ণের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনার মধ্য দিয়ে আমাদের কৃষিকে বাণিজ্যিকভাবে আরো লাভজনক করে তোলা সম্ভব। কৃষির আধুনিকায়ণে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারের গৃহীত সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ আগামী দিনে আমাদের কৃষিখাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বলে আশা করা যায়।
দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষিগবেষক ও উদ্ভাবনী প্রতিভাসম্পন্ন কৃষক, খামারি ও উদ্যোক্তা এ খাতকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। ধান, গম, আলু, ভুট্টাসহ নানা রকম সবজি ও ফল-ফলাদির পাশাপাশি মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পেও আমাদের কৃষক ও খামারিরা বিপ্লব ঘটিয়েছেন। কৃষিখাতে সরকারের আন্তরিকতা, সমন্বিত উদ্যোগ ও গৃহীত প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরণের অগ্রগতি নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করা। প্রকল্পটি দ্রæত বাস্তবায়ন সময়েরই দাবি। প্রকল্পটি যাতে যথাসময়ে সম্পন্ন হয় এবং কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকা বাঞ্চনীয়। করোনাকাল কতদিন স্থায়ী হবে তা এখনো অনিশ্চিত। মনে রাখা দরকার, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে কৃষিই হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি এবং টিকে থাকার মূল শক্তি। সমন্বিত আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ প্রক্রিয়ায় কৃষিউৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি রফতানির মাধ্যমে অর্থনীতির মন্দাবস্থা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। এ বিবেচনায়, গৃহীত প্রকল্পের দ্রæত বাস্তবায়নে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।