পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের চাপ, তারল্য সংকট, তার ওপর ব্যবসা বাণিজ্যের অবনতির কারণে করোনার প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা খাদের কিনারে। তাই টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যায় কমানো ছাড়া ব্যাংকগুলোর সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো হয় বেতন কমানোর পথে হাঁটছে। অন্যথায় ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। সূত্র মতে, সরকারি, বেসরকারি, বিদেশি প্রতিটি ব্যাংকের আয় প্রায় ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর সামনে এখন একটাই পথ, আর সেটা হল খরচ কমানো। কয়েকটি ব্যাংক তাই খরচ কমাতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছাঁটাই করার পরিবর্তে তাদের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কমানোর বিষয়ে ব্যাংকে ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিল বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। একই সঙ্গে কর্মীদের পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেন্টিভ বোনাস বন্ধ করাসহ ব্যাংক বাঁচাতে ১৩ দফা সুপারিশ করেছিল সংগঠনটি। এ খবরে ব্যাংকে ব্যাংককর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বেতন-ভাতা কমানোর সুপারিশ থেকে সরে আসে বিএবি। তবে কিছু কিছু ব্যাংক বাধ্য হয়ে ইতোমধ্যে বেতন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে আবার কিছু কিছু ব্যাংক কর্মীদের ছাঁটাই করছে।
সূত্র মতে, গত কয়েক মাসে দেড় শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাই করেছে বেসরকারি এবি ব্যাংক। ব্যাংকটি গত ৮ জুলাই ১২১ চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের তালিকা করে অফিস আদেশ জারি করা হয়। যা ১২ জুলাই থেকে কার্যকরের কথা বলে কর্মীদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সঙ্কটে থাকা এবি ব্যাংক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এর আগে গত মে ও জুন মাসে কর্মীদের বেতন ৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
ব্যয় কমাতে এর আগে ওয়ান ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বেতন ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তা থেকে সরে আসে। এতে করে মহামারির এ দুর্যোগের সময়ে আতঙ্কে রয়েছেন ব্যাংকের কর্মীরা। এদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে তাদের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি বা বেতন-ভাতা কমানোর চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসাসহ ব্যয় কমানো ও আয় বাড়ানোর অন্য বাস্তবভিত্তিক পন্থা অবলম্বন করার দাবির জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মীদের সংগঠন ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (বিডবিøউএবি) পক্ষ থেকে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট কাজী মো. শফিকুর রহমান এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (বিডবিøউএবি) মনে করে, ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি বা বেতন-ভাতা কমানো করোনা বা অন্য সংকট মোকাবিলায় সমাধান হতে পারে না। বিডবিøউএবি আশা করে, সকল বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি বা বেতন-ভাতা কমানোর চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসবে এবং ব্যয় কমানো ও আয় বাড়ানোর অন্য বাস্তবভিত্তিক পন্থা অবলম্বন করবে।
তবে করোনা সংকটের মধ্যেও বেশ কিছু ব্যাংক বেতন না কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ইউসিবি, এসবিএসি, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন, এনসিসি ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এজন্য এসব ব্যাংককে সাধুবাদ জানিয়েছে বিডবিøউএবি। এদিকে বেতন কমানো বা কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি দেশের বড় বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
বিডবিøউএবি বলছে, যেসব ব্যাংকে চাকুরিচ্যুত বা বেতন কমানো হয়েছে, সেখানকার কর্মকর্তারাক্ষুব্ধ। অন্য ব্যাংকগুলোতেও চাকুরিচ্যুতি বা বেতন কমানোর আতঙ্ক রয়েছে। সাধারণ জনগণ মনে করে, ব্যাংকগুলো তার কর্মকর্তাদের বেতনেরই যদি সুরক্ষা দিতে না পারে, তাহলে গ্রাহকরা তাদের আমানতের সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত হবে কীভাবে? এর ফলে বেসরকারি ব্যাংকের ওপর আস্থা কমে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে উৎসাহ হারায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আমরা বিরত থাকতে বলেছি। এই করোনা মহামারির সময় তাদের ওপর চাপ পড়ে এমন কোনো সিদ্ধান্ত যেন না নেয়া হয়। আর সরকার এই সময় করোনা মোকাবিলায় ব্যাংকের মাধ্যমে বেশকিছু আর্থিক প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। কোনো কারণে সেগুলোও যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। বিবৃতিতে তার এ বক্তব্যকে উদ্ধৃত করেছে বিডবিøউএবি।
কেন বেতনে হাত
ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস হলো বিতরণকৃত ঋণ থেকে প্রাপ্ত সুদ। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের ফি আর এলসি কমিশন থেকেও বড় অঙ্কের আয় করে থাকে ব্যাংকগুলো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর আয়ের এ দুটি উৎসই প্রায় বন্ধ রয়েছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও গ্রাহকদের খেলাপি না করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের সুদও। এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য সচল আছে, এমন সামর্থ্যবান গ্রাহকরাও ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ রেখেছেন। ফলে ব্যাংকগুলো এখন বাধ্য হয়ে কর্মীদের বেতনে হাত দিয়েছে। কোনও কোনও ব্যাংক ছাঁটাইয়ের পথ অনুসরণ করছে।
দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ইনকিলাবকে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নেই বললেই চলে। ব্যয় আগের মতোই। তারপরও আমরা কাউকে ছাঁটাই করতে চাই না। তাই বাধ্য হয়ে ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে বেতনভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এ ছাড়া উপায় দেখছি না বলেন তিনি।
বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেছেন, গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবেই গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে। এই মুহ‚র্তে ব্যাংকগুলোকে টিকে থাকতে হবে। যেসব ব্যাংকের আয় কমে গেছে, তাদের ব্যয়ও কমাতে হবে। এক্ষেত্রে বেতন কমিয়ে অথবা অন্য যে কোনও পদ্ধতি গ্রহণ করে টিকে থাকতে হবে। তিনি বলেন, করোনার কারণে চলমান সংকটে অনেক ব্যাংক অতিরিক্ত খরচ বহন করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ভবিষ্যতে টিকে থাকতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তবে করোনার পর সবকিছু স্বাভাবিক হলেও কর্মীদের বেতনও স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি, বেসরকারি, বিদেশি মিলিয়ে ৬২টি ব্যাংকে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন কর্মী রয়েছেন। এগুলোর মধ্যে ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করছেন ১ লাখ ৯ হাজার ১শ’ ২৭ জন। আর বিদেশি ব্যাংকে কাজ করছেন তিন হাজার ৮৫৮ জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।