Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধস ল্যাটিন আমেরিকায় বাড়ছে শ্রেণী বৈষম্য

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২০, ৯:০২ পিএম

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, কলম্বিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকা আরও ব্যাপকভাবে ঐতিহাসিক রূপান্তরের মাঝামাঝি সময়ে ছিল। অঞ্চলটিতে শ্রেণী বৈষম্যের ভয়াবহতা স্মরণাতীতকালের মতো সঙ্কুচিত হচ্ছিল। গত ২০ বছরে কয়েক লাখ পরিবার পৃথিবীর অন্যতম শ্রেণী বৈষম্যের এ অঞ্চলটিতে দারিদ্র থেকে বের এসেছিল। ল্যাটিন আমেরিকার ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান সর্বনিম্ন রেকর্ড পয়েন্টে নেমে এসেছিল। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে ল্যাটিন আমেরিকার এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সাম্প্রতিক সময়ে হুমকির সম্মুখীন। ল্যাটিন অর্থনীতিতে করোনার আঘাত সম্ভবত আগামী কয়েক বছর ধরে অঞ্চলটির রাজনীতি এবং ইতিবাচক সমাজিক পরিবর্তনকে পেছন দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ল্যাটিন আমেরিকার উর্ধ্বমুখী গতিশীলতার এঞ্জিনগুলি প্রায় থেমে গেছে। গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের কারণে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা দরিদ্র শ্রমজীবী ও দুর্বল মধ্যবিত্তদের উপর সবচেয়ে কঠোর আঘাত হেনেছে। 

ল্যাটিন আমেরিকার ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসাগুলো চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী হারাচ্ছে। বাজার পড়ে হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের ফসল পুড়িয়ে ফেলছে। কিশোররা তাদের ভাইবোনদের অন্ন যোগানোর জন্য মাদক বিক্রির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তরুণী এবং মহিলারা দেনা পরিশোধের জন্য পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হচ্ছে। অভিভাবকরা আর্থিক অনটনের কারণে তাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় ওষুধ কমাতে শুরু করেছেন। এমনকি ধনী ব্যক্তিরাও গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। কিছু পরিবার রাতের খাবার কিনতে তাদের মোবাইলফোনগুলোও বিক্রি করে দিচ্ছেন।
মি. সেগুন্দো হোগারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কয়েক বছর ধরে স্বল্পমূল্যে উচ্চ মানের শিক্ষার ব্যবস্থা করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবন পরিবর্তনে ইতিবাচক ভ‚মিকা পালন করছিল। তারা এমনকি খালি পায়ে হাঁটা পরিবারগুলো থেকে ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট এবং ফার্মাসিস্ট তৈরি করেছে। এখন স্কুলগুলো শিক্ষার্থীহীন। ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে শারীরিক উপস্থিতির ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। বেকার অভিভাবকরা ফি দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন এবং স্কুলগুলো প্রশিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। ভেনেজুয়েলা থেকে খাদ্য ও কাজের সন্ধানে আসা শরণার্থীরাও চরম মন্দার কারণে দেশে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
হোগারের প্রিন্সিপাল লীনা কাস্ট্রিলন বলছেন যে, শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছে, শুধু তাই নয়, এই বাধা মূলত তাদের জীবনকে নতুন আকার দেবে, যার ফলে পুরো প্রজন্মকে অশিক্ষা এবং নিম্ন বেতনের দিকে ঠেলে দেবে। স্কুল থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বাড়িতে থেকে তারা একটি উজ¦ল ভবিষ্যত থেকে লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে। বহু বছর ধরে কলম্বিয়া ল্যাটিন অঞ্চলে সম্পদের বিরাট ব্যবধান এবং শ্রেণী পার্থক্য ঘোচানোর লড়াইয়ের এক উজ্জ্বল উদাহরণ ছিল। শ্রেণি বিভাজন সমাজে এতটাই ব্যাপক ছিল যে, উনিবেশবাদের প্রতীক হিসাবে দরিদ্ররা ধনীদের নৈমিত্তিক কথোপকথনে ‘দয়াপরবশ’ বলে সম্বোধন করতেন।
শ্রেণী বিভাজন করতে সমাজকে বিভিন্ন এস্ত্রাতোসে বিভক্ত করা হতো। ধনীরা শহরে এস্ত্রাতোস ৬ এ এবং দরিদ্ররা এস্ত্রাতো এক-এ বসবাস করতো। যারা বেআইনীভাবে থাকতো, তাদের এস্ত্রাতো শূন্য নামে ডাকে হতো। কিন্তু পরিস্থিতির যথেষ্ট পরিবর্তন সাধন হচ্ছিল। কলম্বিয়ায় ২০০২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্যের হার কমে ২৭ শতাংশে নেমেছিল। করোনা মহামারীর আঘাতে দেশটির শ্রেণী বৈষম্য রেকর্ড পরিমাণ বাড়তে শুরু করেছে। ইউনিভার্সিদাদ দে লস অ্যান্দেসের অধ্যাপকদের এক বিশ্লেষণ অনুসারে, কলম্বিয়ায় একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তারা যে দারিদ্র্য এবং বৈষম্যতে অবস্থান করছিল, এখন মহামারীটি সেখানে ফিরিয়ে দিতে পাওে, যা দুই দশক পেছনে।
অর্থনীতিবিদরা এই অঞ্চলজুড়ে একই ধরনের প্রতিক্রিয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছেন। বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে যে, কেবল এ বছরেই ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ৫ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যে কবলিত হতে পারে। কলম্বিয়ার মেডেলেনে কয়েকশ’ মা করোনা সঙ্কটে খোলা একটি খাদ্য ব্যাংকের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন যাদের কেউ কেউ এতটাই মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে ভুগছেন যে তাদের শীর্ণ কাঁধগুলি এখন তাদের কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসেছে। বিগত দুই দশক ধরে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ ক্রমবর্ধমান হারে এ অঞ্চলের সম্পদের ব্যবধান এবং শ্রেণী বৈষম্য সঙ্কুচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে লাখ লাখ নারীকে পড়াশোনা এবং কাজের সুযোগ দিয়েছে। অঞ্চলটিতে কোয়ারান্টাইন উঠে যাওয়ার সাথে সাথে তারা নতুন কাজ পেতে এবং পুরানো জীবনে ফিরে যেতে সক্ষম হবে কি না, তা এখোনো নিশ্চিত নয়।

 



 

Show all comments
  • মোঃ আনোয়ার আলী ১৩ জুলাই, ২০২০, ১০:০০ এএম says : 0
    হে আল্লাহ! জালেমদের হেদায়েত কর
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ