Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতে দলিত নারীরা বর্ণবৈষম্যের পাশাপাশি লিঙ্গবৈষম্যেরও শিকার

মোট ১৩ লাখ ঝাড়–দারের মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী

প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : শতকের পর শতক ধরে কঠোর হিন্দু বর্ণপ্রথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ভারতের সমাজ কাঠামো। ১৯৫০ সালে সাংবিধানিকভাবে বর্ণ ব্যবস্থাকে বিলোপ করা হলেও সমসাময়িক ভারতীয় সমাজে এর রেশ এখনও বহাল আছে। ময়লা সংগ্রহ, রাস্তা ঝাড়– দেয়া, মৃতদেহের সৎকার এবং মানুষের মলমূত্র পরিষ্কারের মতো যে কাজগুলোকে ধর্মীয়ভাবে অশুদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়, ঐতিহ্যগতভাবে সেই কাজগুলোই করে আসছেন দলিতরা। আর সে কারণে সমাজে নানা বৈষম্য আর দুর্দশার শিকার হতে হয় তাদের। সম্প্রতি থমসন-রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে পরম্পরাগতভাবে ছকে বাঁধা এই পথ নারীরা দেশটিতে বিরাজমান বর্ণবৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে মুসলিম ও খ্রিস্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছেন অনেকে। কিন্তু তাতেও সুবিধা পান না তারা। উল্টো তাদের আরও নানারকমের হুমকি ধামকির মুখোমুখি হতে হয়।
‘জান সাহাস’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতে দতিলদের মধ্যে নারীরাই বেশি নির্যাতিত এবং বঞ্চনার শিকার। দেশটির মোট ১৩ লাখ ঝাড়–দারের মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী। ভারতে বর্ণবৈষম্যের পাশাপাশি রয়েছে লিঙ্গবৈষম্য। ফলে চরম নিগ্রীহ হতে হচ্ছে নারীদের। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আসিফ শেখ জানিয়েছেন, যে তারা চেষ্টা চালিয়ে ২১ হাজার নিগ্রীহ নারীকে মুক্তি দিতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১২০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। অথচ দেশটিতে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র এ চারটি প্রধান বর্ণ বাদ দিলে বাকিদের ফেলা হয় অন্যান্য শ্রেণিতে। আর এ অন্যান্য শ্রেণির তালিকায় সবার ওপরে নাম রয়েছে দলিত সম্প্রদায়ের। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জন্মের প্রথম দিনটি থেকে একরকম নরকে বসবাস করতে শুরু করে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। নিচু শ্রেণিতে জন্মানোটা তাদের ভুল নয় কিন্তু তারপরও নিচু বর্ণে জন্মানোর মাশুল তাদের গুণতে হয় সারাটাজীবন। নিচু বর্ণে জন্মালে খারাপতর দাসত্ব বরণ করে নেয়া যেন অনিবার্য হয়ে পড়ে। কেবল অন্য সম্প্রদায়ে নয় নিজ সম্প্রদায়েও নানা কুসংস্কার আর বৈষম্যের শিকার হয় দলিতরা। দারিদ্র্য আর বর্ণবৈষম্যের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেতে এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার আশায় বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম, শিখ ধর্ম কিংবা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে পড়েন দলিতদের অনেকে। ধর্ম পরিবর্তন, তবে ভাগ্যের পরিবর্তন নেই কিন্তু ধর্ম পরিবর্তন করেও আদৌ ভাগ্য পরিবর্তন হয় না তাদের। এমনই একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম রাকেশ। পেশায় ধোপা রাকেশ সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের আশায় ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। রাকেশ নামটি পাল্টে হয়ে যান আলী কোনোজিয়া। তবে ধর্মান্তর যে কোনো সমাধান নয়, তা বুঝে যান অল্প ক’দিনেই। তিনি জানান ধর্মান্তরিত হওয়াটা কোনো সহজ ব্যাপার নয়, তারা বলে এটা ঠিক নয়। আমি জিজ্ঞেস করি কেন? তারা জানায়, এর কারণ মুসলিমদের খুব একটা ভালো সুনাম নেই। আরেক দলিত আবদুল রহমান ভারতীকেতো ধর্মান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা জীবনবাজি পর্যন্ত রাখতে হয়েছে। তিনি জানান ধর্মান্তরের চেষ্টার কারণে তাতে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আবদুল রহমান বলেন, যখন একজন মানুষ ধর্মান্তরিত হয় তখন নতুন ধর্মের লোকেরা তাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু পুরনো ধর্মের লোকেরা তাকে থামানোর চেষ্টা করে। যদি থামাতে না পারে, তবে তারা তাদের হত্যার চেষ্টা করে। সেটাই আমার সঙ্গে হয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য পজিটিভ ডিসক্রিমিনেশন নামে বিশেষ সুবিধার পদ্ধতি চালু করে ভারত সরকার। তবে সবাই সে সুযোগের আওতায় আসল না। নির্দিষ্ট চাকরি ও শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধাগুলো বিভিন্ন সামাজিক এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ছিল। তবে দলিতদের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করেও সে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না বিশেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, সুরক্ষা আইনের আওতায় কেবল শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু সে কোটা ব্যবস্থার আওতায় খ্রিস্টান আর মুসলিমদের রাখা হয় না। এর সে কারণে কানোজিয়া কোনো সরকারি চাকরি পাননি। তিনি জানান, যদি কারও নিম্নবর্ণের সার্টিফিকেট না থাকে তবে সে সংরক্ষিত চাকরি পায় না। আমার নিম্নবর্ণের সার্টিফিকেট নেই। আমার বাবা-মা অশিক্ষিত ছিলেন এবং তাদের বোঝার ক্ষমতা কম ছিল। সে কারণে কোথাও কোনো চাকরি মিললো না আমার। ভারতের সংবিধানের মূল স্থপতি এবং সমাজ সংস্কারক বিআর আমবেদকারও ছিলেন একজন দলিত। পরে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তার দেখানো পথ অনুসরণ করেন অনেকে। রয়টার্স, ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • মোঃ আনোয়ার আলী ১৩ জুলাই, ২০২০, ১০:২৪ এএম says : 0
    হে আল্লাহ! ভারতবাসীক আলোর সন্ধান দাও।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতে দলিত নারীরা বর্ণবৈষম্যের পাশাপাশি লিঙ্গবৈষম্যেরও শিকার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ