পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কয়েক মাস সব কিছু ছুটি ও বন্ধ থাকার ফলে খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রেণির মানুষ যেমন বেকার হয়ে পড়েছে, তেমনি বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের অনেকই কর্মচ্যুত হয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেয়ার কারণে ২৫ হাজার শ্রমিক কর্ম হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই করোনাকারণেই প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের হাজার হাজার দেশে ফিরে এসেছে কর্ম হারিয়ে। দেশের বিভিন্ন বড় শহরে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় অনেক মানুষ নানা কর্মে নিয়োজিত ছিল, যারা কর্ম হারিয়ে নিরালম্ব হয়ে পড়েছে। তাদের বিপুল সংখ্যক ঢাকায় থাকার সামর্থ্য হারিয়েছে এবং এখন গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। যারা সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করতো তাদেরও একটা অংশ ঢাকার বাস উঠিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। দেশ ও বিদেশের কর্মহারানো মানুষের ঠিকানা হচ্ছে গ্রাম, যেখানে কর্মের তেমন কোনো সুযোগ নেই। ফলে গ্রামের অর্থনীতি ও জীবন যাত্রায় একটা বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ-যাতায়াত, পরিবহন ইত্যাদি খুলে দেয়া হয়েছে। সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও এসব উন্মুক্ত করতে হয়েছে নিতান্ত বাধ্য হয়ে। ওদিকে সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম সচল করার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহ ও নির্দেশনায় মেগা প্রকল্পগুলোতে কাজ শুরু করার কার্যব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষত, ৬টি মেগা প্রকল্পর মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ চালু থাকলেও পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ট্রেনলাইন স্থাপন ইত্যাদির কাজ স্থবির হয়ে ছিল। এখন সব প্রকল্পের বাস্তবায়ন পুরোদমে শুরু হলে এগুলো যেমন দ্রুত শেষ হবে, তেমনি তার সুফলও পাওয়া যাবে। অর্থনীতিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা, এই দুঃসময়ে এসব প্রকল্পকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক ও নিশ্চিত করতে একদিকে উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, অন্যদিকে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন চালু করতে হবে। গতিশীলতা আনতে হবে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। একই সঙ্গে গ্রামে কর্মসংস্থানের যে সুযোগ আছে, তাকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। যেহেতু বেকার ও কর্মহীন মানুষের ঢল গ্রামেই স্থিত হচ্ছে, কাজেই সেখানেই তাদের কর্মের সংস্থান করতে হবে। গ্রামে কৃষিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। এক সময় গ্রামে অতিরিক্ত কৃষিশ্রমিক পাওয়া গেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্রমিকের সংকট দেখা দিচ্ছে। চাষাবাদ, ফসল বুনন, পরিচর্যা কর্তন, মাড়াই ইত্যাদিতে শ্রমিকের অভাব দেখা দিচ্ছে। করোনার কারণে সবদেশেই কৃষির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদেরও যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। আগামীতে খাদ্য সংস্থান নিশ্চিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে কৃষিতে কর্মসংস্থান বাড়বে। এছাড়া গবাদীপশু পালন, মৎস্য চাষ, বৃক্ষরোপণ, কৃষি পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আত্ম কর্মসংস্থানের নানা উপায় গ্রামে আছে; যাতে বেকার ও কর্মহীন ব্যক্তি নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে, অন্যকেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারে। গ্রামে সরকারের তরফে নানারকম উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। যেমন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, বাঁধের কাজ, মাটির কাজ, খাল ও নদী খনন, সরকারি স্থাপনা নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ ইত্যাদি। সরকারকে এসব কাজ পুনোর্দ্দমে শুরু করতে হবে। আশা করা যায়, এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
আমাদের দেশে শহরকে প্রধান্য দেয়ার প্রবণতা বরাবরই লক্ষ করা যায়। গ্রাম থেকে যায় উপেক্ষিত। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম কিংবা বিভাগীয় অন্য দু’য়েকটি শহরকে প্রাধান্য দিয়েই এখানে সব কিছু গড়ে তোলা হয়েছে। অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি গড়ে উঠেছে এসব শহরে। বিশেষ করে, ঢাকা যেন সব কিছুরই কেন্দ্রভূমি। ঢাকায় এলেই কাজ পাওয়া যায়, এমন একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিদিন ঢাকায় গড়ে ৪-৫ হাজার লোকের আগমন ঘটে, যাদের মধ্যে অর্ধেকের মতো ফিরে যায় এবং অর্ধেক ঢাকায় থেকে যায়। এভাবেই ঢাকা এখন পৌনে ২ কোটি মানুষের আবাসক্ষেত্র, যাদের প্রায় অর্ধেকই বাস করে বস্তিতে। মানবেতর হলেও বস্তির জীবন ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। অনেকবার বস্তিবাসীদের গ্রামে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। গ্রামে পুনর্বাসিতরা পুনরায় ঢাকায় ফিরে এসেছে। অনেকে মনে করেন, ন্যূনতম কর্মসংস্থানের সুযোগই এর কারণ। শুরু থেকে সব কিছু বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা যদি নেয়া হতো, কর্মসংস্থানের সুযোগ যদি গ্রামসহ মফস্বল শহরগুলোতেও সৃষ্টি হতো তাহলে ঢাকায় এই জনজট, বস্তি, অপপরিবেশ ইত্যাদি সৃষ্টি হতো না। করোনা মহামারী গ্রামমুখী হওয়ার ও গ্রামমুখী করার একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। গ্রামে কাজের সুযোগ আছে; তবে পরিবেশের অভাব রয়েছে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সরকারকে কৃষির প্রতি যেমন উচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে, তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিকে জোরদার করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতি জোরদার হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, পরিবেশও উন্নত হবে। শহরে নয়, এখন থেকে গ্রামেই মানুষের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামের মানুষ যাতে গ্রামেই থাকে, সেখানে কাজের যে সুযোগ আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকে সে জন্য তাদের মধ্যে একটা মোটিভেশন কর্মসূচি চালু করতে হবে। যে পুরুষ শহরে কারখানায় কাজ করতো, তার কৃষিশ্রমিক হতে কিংবা যে মেয়েটি গার্মেন্টে কাজ করতো, তার গ্রামে গৃহপরিপরিচারিকা হতে যেন দ্বিধা না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য মোটিভেশন কর্মসূচি দরকার। বলা বাহুল্য, গ্রামের জন্য ভালোবাসা জাগাতে হবে, পরিবেশ উন্নত করতে হবে। তাহলে কাজের জন্য শহরে কেউ ভীড় করবে না। শহর নয়, গ্রামকেই এখন উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।