পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু। তার লাগামহীন দুর্নীতি ও জালিয়াতির তদন্ত মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। আর তাই কোনভাবেই থামছেই না দৌরাত্ম্য। বছরের অধিকাংশ সময়ই থাকেন বিদেশে। বাইরে বসেই কলকাঠি নাড়েন স্বাস্থ্যখাতের ঠিকাদারির। টেন্ডার ছাড়াই কাজ বাগিয়ে নেয়া তার চিরাচরিত নিয়ম। এক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় ঘটলে ওই কর্মকর্তা হয় বদলি, ওএসডি বা অনিয়মের দায় মাথায় নিয়ে সরে যাওয়া লাগে। এ যেন নিত্ত নৈমত্তিক ব্যাপার। সম্প্রতিও তাকে কাজ না দেয়ায় কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক পদ ছাড়তে হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদ উল্লাহকে। অবশ্য নতুন পরিচালক হিসেবে যোগদান করেই অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ইতোমধ্যে মিঠু সিন্ডিকটকে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার পিসিআর টেস্ট কিট ক্রয়ের কাজ দিয়েছেন। শুধু কাজ দেয়ায়ই সীমাবদ্ধ নয়; প্রতিটি কিট বাজার দামের ৫ গুণ বেশি দামে ক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। এদিকে সিএমএসডি সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের একটি সিন্ডিকেট বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মিঠুকে এই কাজ পাইয়ে দিয়েছেন।
গত ১৫ জুন পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে দেখা যায়, মিঠুর প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেরিন এন্টারপ্রাইজকে দেড় লাখ পিস পিসিআর টেস্ট কিট সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি কিটের মূল্য ধরা হয়েছে ২৩শ’ ৫০ টাকা। চীনের সানসুরি বায়োটেক ইনক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ জুনের মধ্যে এই কিট সরবরাহের কথা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চীনের আনবিও বায়োটেকনলজি কো. লি.সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান যাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিøউএইচও) স্বীকৃত একটি কিটের দাম ৫০ হাজারের ওপরে সংখ্যার জন্য ৫ থেকে ৬ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ৪শ’-৫শ’ টাকার মধ্যে। অথচ সিএমএসডি মিঠুর মেসার্স জেরিন এন্টারপ্রাইজকে প্রতিটি কিটের দাম দিয়েছে ২৩শ’ ৫০ টাকা করে। প্রায় ৫ গুণ বেশি দাম দিয়ে কিট ক্রয় করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যা অসামঞ্জস্য বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাই স্বাস্থ্যখাতে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যাকে ঘিরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নতুন করে স্বাস্থ্যখাতের অনিয়মের অনুসন্ধানে নেমেছে। আগামী ৯ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক তলব করেছে। আর এই সময়েই বেরিয়ে এলো মিঠু চক্রের নতুন করে কাজ বাগিয়ে নেয়ার তথ্য।
সূত্র মতে, অতীতের নানা লাগামহীন দুর্নীতি, লুটপাট জালিয়াতির ধাক্কা সামলে স্বাস্থ্যখাত ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনভাবেই পিছু ছাড়ছে না স্বাস্থ্যখাতের এই সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্যখাতের মাফিয়া হিসেবে পরিচিত ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ আবারও সক্রিয় হবার চেষ্টা করছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে ম্যানেজ করতে না পারলেও অসাধু কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট ঠিকই মিঠুকে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি সহায়তা করছেন দুদকের একজন প্রভাবশালী পরিচালক ও দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাই। যার সঙ্গে মিঠুর সখ্যতার বিষয়টিও অনেকেরই জানা। ওই ভাই প্রায়শই মিঠুর অফিসে গিয়ে টাকার জন্য বসে থাকেন। এদিকে দীর্ঘদিন মিঠুসহ স্বাস্থ্যখাতে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে যাচ্ছেন তারা ঠিকই ধরাছোয়ার বাইরে থাকছেন। সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাতের চুনোপুটি ১৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তি করা হয়েছে। দুদক এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। তবে আড়ালেই থাকছেন মূল হোতা মিঠুসহ অন্যান্যরা। মিঠু ছাড়াও বর্তমান করোনার মহামারীতে স্বাস্থ্যখাতে আল-মদিনা ট্রেডার্স, বেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, স্টারলিং এবং টেক স্কয়ার চক্র অনিয়মের মাধ্যমে বড় অঙ্কের বাণিজ্য করছেন। গত কয়েকমাসেই এই চক্রটি প্রায় ৬-৭শ’ কোটি হাতিয়ে নিয়েছেন। যদিও এরা ধরাছোয়ার বাইরেই থাকছেন। সম্প্রতি আল-মদিনা ট্রেডার্স স্বাস্থ্যখাতের অপর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ধরণের কাজ ছাড়াই ২৮ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দুরদর্শীতায় তা সম্ভব হয়নি। এখন ওই পরিচালককে সরিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছে আল-মদিনা ট্রেডার্স।
এদিকে স¤প্রতি সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়মের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছেন। একই সঙ্গে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকেও আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে তারা দাবি করেছেন। এছাড়াও দুদকের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট মিঠুকে আশ্রয় দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন।
এর আগে সিএমএসডি’র বিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদ উল্লাহ গত ৩০ মে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে লেখা এক চিঠিতে স্পষ্টভাবেই ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর নাম উল্লেখ করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন অতিরিক্ত সচিব এবং অধিদফতরের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে কীভাবে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সেই তথ্যও চিঠিতে জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ এবং টেকনোক্র্যাট লিমিটেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই স্বাস্থ্য খাতের অধিকাংশ কাজ করা হয়। যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেও কোটি কোটি টাকার বিল তুলে নেয়ার অসংখ্য ঘটনাও আছে তার। তবে নামে-বেনামে মিঠুর প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। আর তারই একটি সিএমএসডি থেকে কাজ বাগিয়ে নেয়া মেসার্স জেরিন এন্টারপ্রাইজ।
সূত্র মতে, নির্দিষ্ট সময়ে সম্পদের হিসাব না দেয়ায় ২০১৬ সালে মিঠুর বিরুদ্ধে ‘নন সাবমিশন’ মামলা করে দুদক। ওই বছরই বিশ্ব তোলপাড় করা পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি সংশ্লিষ্টতায় বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারকারী হিসেবে যে ৩৪ বাংলাদেশির নাম এসেছিল, এই মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু তাদের একজন।
এদিকে স¤প্রতি নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীও সরকারের কাছে ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমার জানামতে বাংলাদেশের তিন-চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রায় ১০ লাখ কিট এনে রেখেছে। কিন্তু তারা তা দিতে পারছে না মিঠু সিন্ডিকেটের কারণে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মিঠু সিন্ডিকেট’ যতক্ষণ পর্যন্ত ভাঙা না যাবে, ততক্ষণ এই মন্ত্রণালয় কখনো ভালো থাকবে না।’
কে এই মিঠু?
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে মিঠুর উত্থান। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে মিঠু সিন্ডিকেট আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে আওয়ামী লীগের সাথে সিন্ডিকেট বানিয়ে সে দুর্নীতি-অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিগত মহাজোট সরকারের আমলে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে স্বাস্থ্য খাতে একচেটিয়া রাজত্ব করেন আলোচিত এই ঠিকাদার। পরবর্তীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকে। তবে গত কিছুদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঠিকাদারদের পাত্তা না দেয়ায় আড়ালে থেকেই কলকাঠি নাড়েন মিঠু।
মিঠুর প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার বিষয়ে সিএমএসডি পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামানের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।