পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছেই চিকিৎসার আস্থার নাম ছিল ভারত। প্রতিবছর সাধারণ অনেক মানুষই চিকিৎসার জন্য ভারতে ছুটতেন। ভারতের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে চিকিৎসা সেবা নেয়া প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন হচ্ছেন বাংলাদেশি। প্রতিদিনই বাড়ছিলো এই সংখ্যা। সেই ভারতই করোনার চিকিৎসায় লেজগুবেরে অবস্থার মধ্যে পড়েছে। ভারতের রাজধানী দিল্লি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ভেঙ্গে পড়েছে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসায় আস্থার আরেক নাম যুক্তরাজ্য। পরিকল্পিত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা অথচ করোনা চিকিৎসায় অত্যাধুনিক হাসপাতালগুলোও সুষ্ঠুভাবে সামাল দিতে পারেনি রোগীদের। শুধু যুক্তরাজ্যই নয়; ইতালী, স্পেন. ফ্রান্সসহ ইউরোপের উন্নতদেশগুলোও সামলাতে পারেনি করোনা রোগীদের। প্রতিদিনই হাজার হাজার রোগী মৃত্যুর খবর এসেছে। আর পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর হিসেবে পরিচিত আমেরিকার করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাতো সবারই জানা। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর দেশের নামও আমেরিকা। সেখানে বাংলাদেশেতো দীর্ঘদিন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও বরাদ্দ না পেয়ে ভঙ্গুর ছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। তারপরও অপরিচিত এই মহামারি রোধে কিছু ত্রুটি থাকলেও এখন পর্যন্ত করোনাকে যেভাবে সামাল দিচ্ছে তাতে আশাবাদীই অনেক চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, অজানা এই রোগটিতে বিশ্বের উন্নত দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাই যেখানে ভেঙ্গে পড়েছে তাতে আমাদের দেশের অবস্থা এখনো ভালো বলতে হবে। সমন্বয়ের অভাবে কিছু ত্রুটি ছিল। তবে তা থেকে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যখাত অনেকটা উত্তোরণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন অনেকে। তাই করোনার চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও কিছুটা কমছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোও এগিয়ে আসছে। পাশাপাশি প্রতিদিনই বাড়ছে স্বাস্থ্যখাতের স্বক্ষমতা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ইনকিলাবকে বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রথম দিকে দেশের হাসপাতালগুলোতে কিছুটা ত্রুটি থাকলেও এখন অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোও করোনার সেবায় এগিয়ে আসছে। যা অত্যন্ত ভালো দিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অজানা এই মহামারি থেকে আমরা দ্রুতই উত্তোরণ করতে পারবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সূত্র মতে, করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় শুরুর দিকে করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতাল কম থাকায় রোগীর চাপ বেশি ছিল। পাশাপাশি শুরুতে পরিকল্পনামাফিক কাজও সম্ভব হয়নি। করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনা ডেডিকেডেট হাসপাতালের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেসরকারি হাসপাতালগুলোও এগিয়ে আসছে এই সেবায়। প্রতিদিনই করোনার সেবায় কোন না কোন বেসরকারি হাসপাতাল যোগ হচ্ছে। পাশাপাশি বেড়েছে করোনা পরীক্ষার সক্ষমতাও। বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান বাসায় গিয়ে বয়স্ক, শিশুসহ যারা পরীক্ষার ব্যযভার বহনে সক্ষম তাদের নমুনা নিয়ে আসছে পরীক্ষার জন্য। শুরুতে যেখানে ১০০ নুমনা পরীক্ষা করাতেও বেগ পেতে হতো। সেখানে বর্তমানে দৈনিক ২০ হাজারেরও বেশি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) ৬৬টি ল্যাবের। গতকাল চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি প্রা. লি. নামে আরও একটি পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত ৬৭টি পিসিআর ল্যাব চালু করা হয়েছে। আরও কয়েকটি ল্যাব বাস্তবায়নাধীন। এদিকে গত শুক্রবার থেকে করোনার নমুনা পরীক্ষায় যুক্ত হয়েছে মহাখালীর আইসিডিডিআরবি’র ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া আরও কিছু বেসরকারি হাসপাতাল নমুনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসায় খুব শিগগিরই যুক্ত হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, দেশের কোভিড ডেডিকেডেট হাসপাতালের অর্ধেক আইসিইউ এবং দুই-তৃতীয়াংশ বেড এখনো খালি রয়েছে। রাজধানীর কোভিড হাসপাতালগুলোতে ৮২টি ও সারা দেশের সব কোভিড হাসপাতালে ১৯৭টি আইসিইউ এখনো খালি রয়েছে। খালি থাকা আইসিইউ’র সংখ্যা কভিড হাসপাতালগুলোর মোট আইসিইউয়ের প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে, ঢাকাসহ সারা দেশের কোভিড হাসপাতালগুলোর সাধারণ বেডেরও তিন ভাগের দুই ভাগই খালি রয়েছে।
সুত্র মতে, সারা দেশে সব বিভাগে সাধারণ শয্যা রয়েছে ১৪ হাজার ৮৭টি। আইসিইউ রয়েছে ৩৮৮টি। সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি রয়েছে চার হাজার ৮৪৪ জন। আইসিইউতে রোগী আছে ১৮৩ জন। অর্থাৎ সারা দেশে সাধারণ শয্যা খালি রয়েছে নয় হাজার ২৪৩টি আর আইসিইউ খালি রয়েছে ১৯৭টি।
এছাড়া ঢাকাসহ দেশের সব বিভাগের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত শয্যা ফাঁকা রয়েছে। প্রয়োজনে এসব হাসপাতলে রোগী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের সব কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ১০ হাজার ২০৭টি। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে ৮০টি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে ৫৫টি।
সূত্র মতে, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২০০ বেডের ফাঁকা রয়েছে ৫২টি, আইসিইউ বেড ২৬টির মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১১টি। ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫ বেডের থেকে রোগী বেশি থাকলেও ২৭টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১০টিই ফাঁকা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ণ ইউনিটে ৭৯৩টি বেডের বিপরীতে ভর্তি ৬৬৫ জন। বেড ফাঁকা ১২৮টি। ৪৪টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ফাঁকা ৩১টি। ৫০০ শয্যা মুগদা হাসপাতালে ৩০৬ বেডের বিপরীতে ভর্তি ২০২ জন। ফাঁকা রয়েছে ১০৪টি বেড। অবশ্যই এখানে ১০টি আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই।
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১ হাজার ১২ বেডের মধ্যে ভর্তি ৫৮৬ জন। ফাঁকা রয়েছে ৪২৬টি বেড। অবশ্য ১৫টি আইসিইউ বেডের মাত্র ১টি ফাঁকা। রিজেন্ট হাসপাতাল উত্তরায় ৩৫টি বেড ও ৫টি আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতাল মিরপুরে ২২টি বেড ও ৭টি আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে। ঢাকা মহানগর হাসপাতালে ৭২টি বেড ও ৫টি আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে। সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালের ৯টি বেড ফাঁকা। মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতালে ৬৬টি বেড ও ৩টি আইসিইউ ফাঁকা রয়েছে। রেলওয়ে হাসপাতাল কমলাপুরে ২১টি বেড ফাঁকা রয়েছে। মহাখালীর ২৫০ শয্যা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৪০ বেডের ১০১টি বেডই ফাঁকা ও ১১টি আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১৩৫টি বেড ফাঁকা রয়েছে। পাশাপাশি আইসিইউ ১টি ফাঁকা রয়েছে। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ২০০ বেডের ১৩০টি ফাঁকা। যদিও এখানে ১০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ফাঁকা নেই। বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালে ২ হাজার ১৩টি বেডের ১ হাজার ৯৪৯টি বেডই ফাঁকা। এছাড়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ১৮৪ বেডের ১০৪টি বেডই ফাঁকা রয়েছে। এদিকে করোনা ডেডিকেডেট ঢাকার মধ্যে হাসপাতালগুলোরই নয়; সারাদেশের আরও ১২টি হাসপাতালে সাধারণ বেড ও আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া জাপান-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, সালাহউদ্দিন হাসপাতালসহ বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল নিজ ব্যবস্থাপনায় করোনার নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সক্ষমতার সংখ্যা দৈনিক ২০ হাজারের কিছু বেশি আছে। আরও বাড়ানোর কাজ চলছে। খুব শিগগিরই পরীক্ষা ২৫ হাজারে পৌঁছবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ইতোমধ্যে ৬৭টি ল্যাবে পরীক্ষা চলছে। দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পাশাপাশি টেস্টের এই সুবিধা প্রতিটি জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে স¤প্রসারণ করার কথাও জানান ডা. আয়েশা আক্তার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো কিভাবে দেশকে করোনামুক্ত রাখা যায়। এ জন্য যেখান থেকে যে ধরনের পরামর্শ আসছে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সেগুলো নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ ও নির্দেশনায় কাজ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনার শুরুতে একটি মাত্র টেস্টিং ল্যাব থেকে ইতোমধ্যে ৬৭টি টেস্টিং ল্যাবে পরিণত হয়েছে। শুরুতে ১০০ করোনা পরীক্ষা থেকে বৃদ্ধি করে ২০ হাজারের কাছাকাছি উত্তীর্ণ হয়েছে। বসুন্ধরায় ২ হাজার বেড, উত্তর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট ও উত্তরার দিয়া বাড়িতে মোট প্রায় ৩ হাজার বেড, আনোয়ার খান মডার্ণ হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, শিকদার মেডিকেলের মতো বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি শুধু ঢাকায় থাকা কিছু আইসিইউ সুবিধাকে কিভাবে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পৌঁছে দিতে সক্ষম করা যায় সে ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। মাত্র ১০ দিনে ২ হাজার নতুন চিকিৎসক ও প্রায় ৬ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৭০ টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।