পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাপুলকান্ডে কুয়েতের প্রশাসনে ধরপাকড় শুরু হয়ে গেছে। কুয়েতের বিচার বিভাগ পাপুলের মদদদাতাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ দুজনের গ্রেফতারের খবর দিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম; যাদের একজন কুয়েতের শ্রম বিভাগের পরিচালক এবং অন্যজন রাজনীতিবিদ। যিনি গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। আরবি দৈনিক আল-রাই সে দেশের পাবলিক প্রসিকিউটরদের বরাতে জানিয়েছে, ওই দু’জনকে ২১ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধ ভিসা বাণিজ্য, অর্থ পাচার ও ঘুষ লেনদেনসহ মানবপাচারের অভিযোগে পাবলিক প্রসিকিউশনের তদন্তকারীদের কাছে শহিদ ইসলাম পাপুল দাবি করে বলেছেন, আমি নিষ্পাপ। কুন্তু কুয়তের কর্মকর্তারা নন। তাদের ঘুষ দিয়ে কাজ করে নিতে বাধ্য হয়েছি’।
এদিকে কুয়েতের মিডিয়াগুলোর খবরে হলা হয়, আগামী ৬ জুলাই এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের কথা রয়েছে। আইন অনুযায়ী কুয়েতে অর্থ ও মানবাপাচার বড় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৭ সালে কুয়েতের এক মানবপাচার মামলার রায়ে সাজার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। দেশটির আইন অনুযায়ী পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার প্রমাণিত হলে ৭ বছরের সাজা হবে। সেই সাথে মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে ১৫ বছর। আর সেক্সুয়াল মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। তবে নির্দোষ প্রমাণিত হলে পাপুল মুক্তি পাবেন।
দৈনিক আল-রাই খবরে বলা হয়, কুয়েতের যে দুই এমপির বিরুদ্ধে পাপুলকে বেআইনি কাজে সহযোগিতা এবং অর্থ পাচারে জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে; তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে ‘সংসদীয় ইমিউনিটি’ প্রত্যাহার করা হয়েছে। সালাহ খুরশিদ ও সাদুন হাম্মাদ নামের ওই দুই এমপির বিরুদ্ধে গত ২৭ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছিল পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করতে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে যে দায়মুক্তি তারা পান; সে সময় তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছিল।
আরবি পত্রিকা আল-কাবাস জানিয়েছে, ওই দুই এমপির ‘সংসদীয় ইমিউনিটি’ প্রত্যাহার করার আবেদন অনুমোদন করেছে কুয়েতের সংসদীয় বিচার বিষয়ক কমিটি। এ সিদ্ধান্তের ফলে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন এখন তাদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করতে পারবে। ল²ীপুর-২ আসনের এমপি পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে ২১ দিনের জন্য রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে। এর আগে ১১ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক কুয়েতের বিচারিক আদালতে পাপুলের অপকর্মের চিত্র তুলে ধরে জবানবন্দি দেন। অতপর কুয়েত সরকার তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। বাংলাদেশের এই এমপি কাজ বাগিয়ে নিতে কুয়েতে সরকারি কর্মকর্তাদের কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন; সে বিষয়ে রিমান্ডে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। যা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
পাপুলের কাছে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠায় এর মধ্যে নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দফতরের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহকে বরখাস্ত করেছে কুয়েত সরকার। পাপুল ২৩ হাজারের বেশি কর্মীর এন্ট্রি ভিসার অনুমোদনের জন্য যাদের ঘুষ দেয়ার কথা রিমান্ডে বলেছিলেন; তাদের মধ্যে মাজেন আল-জারাহ একজন। এছাড়া প্রসিকিউশনের আবেদনে কুয়েতের জনশক্তি কর্তৃপক্ষের এক সিনিয়র কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক হোম ডেকর কোম্পানির মালিক এক নারী ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর জামিন দিলেও তার ওপর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণকারী হিসাবে চিহ্নিত কুয়েতি কর্মকর্তাদের একজন ওই নারী ব্যবসায়ীর ভাই। ওই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে এর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা।
আরবি পত্রিকা আল কাবাসের বরাতে গাল্ফ নিউজ গত সপ্তাহে জানিয়েছিল, কুয়েতের বিভিন্ন সরকারি দফতর সা¤প্রতিক সময়ে পাপুলের কোম্পানির সঙ্গে অন্তত চারটি চুক্তি নবায়ন করেছে, যেগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে দুটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত দুই মাসের মধ্যে। এরপর করোনাভাইরাস মহামারীর যুক্তি দিয়ে সেগুলো নবায়ন করা হয়। এক মিলিয়ন কুয়েতি দিনার (৩.২৫ মিলিয়ন ডলার) ওই চার চুক্তির বেশিরভাগই করা হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের বিষয়ে। গ্রেফতারের পর পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির ওই হিসাবে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা রয়েছে বলে এর আগে পাবলিক প্রসিকিউশনের বরাতে জানিয়েছিল কুয়েতি গণমাধ্যম।
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলা পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ল²ীপুর-২ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। নিজের স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করে আনেন তিনি। প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে শহিদ ইসলাম পাপুলকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তার স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার ব্যাংক হিসাব তদন্ত করা হচ্ছে। তাদের দেশত্যাগে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।