Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনা সেনা ঢুকছে বলে এক বিজেপি জনপ্রতিনিধি আগেই সাবধান করেছিলেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২০, ৯:২০ পিএম

তখনও গালওয়ান উপত্যাকায় চীনা বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটেনি। তার চার দিন আগে ১১ জুন বেলা ১১ টা ৭ মিনিট। ঠিক ওই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন উরগেন শোদন। -আনন্দবাজার

উরগেনের বাড়ি লাদাখের নায়য়োমা গ্রামে। সিন্ধু নদের তীরে পাহাড়ে ঘেরা একটা ব্লক। যার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি)। লেহ থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে বরফে ঢাকা ধূসর পাথুরে এই অঞ্চলে মূলত তিব্বতি জনজাতির বিভিন্ন যাযাবর গোষ্ঠীর বাস। যাদের মূল পেশা পশুপালন।

উরগেনও সেই রকমই একটি যাযাবর গোষ্ঠীর মানুষ। লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার আগে তিনি ছিলেন পঞ্চায়েত প্রধান। এখন বিজেপির টিকিটে জিতে আসা নায়য়োমা ব্লক উন্নয়ন পর্ষদের সভানেত্রী ।

সেই উরগেন পোস্ট করলেন , ‘‘ গালওয়ানে যা চলছে তা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। আর এ সমস্তটাই হচ্ছে সীমান্ত এলাকা নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা না থাকার জন্য। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নেই কোনও সঠিক পরিকল্পনাও। ”

গালওয়ানে তখনও সরাসরি সেনা সংঘাতের ঘটনা না ঘটলেও , যে দিন উরগেন ওই পোস্ট করেছেন , তার আগে থেকেই গালওয়ানে দুই সেনার অবস্থান ঘিরে পরিস্থিতি যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সেই পরিস্থিতি প্রসঙ্গেই ওই দিনের এই পোস্ট ।

ওই দিনই বেলা ১১টা ৪৯ মিনিট থেকে দুপুর ২টো ৫৮ মিনিটের মধ্যে আরও পাঁচটি পোস্ট করেন উরগেন। প্রতিটি পোস্টেই ছবি এবং ভিডিওসহ উল্লেখ করা হয়েছে , মাসের পর মাস ধরে কীভাবে চীনা বাহিনী ভারতের নাকের ডগায় একটু একটু করে ভারতীয় ভূখণ্ড গ্রাস করে নিয়েছে এবং সেখানে চীনের অধিকার কায়েম করেছে। কিন্তু তার পরও নিষ্ক্রিয় থেকেছে ভারত ।

একটি পোস্টে ছবি - ভিডিও দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে , ২০১৯ সালের মে মাসে কীভাবে প্রায় ১৫০ ভারী মেশিনপত্র নিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর রাস্তা বানিয়েছে চীনা সরকার ।

সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে , সারি সারি চীনা লরি , মাটি কাটার বড় বড় জেসিবি মেশিনসহ রাস্তা তৈরি করার ভারী যন্ত্রপাতি কাজ করছে প্রকাশ্যেই। ছবিটি নিয়ন্ত্রণরেখার লাগোয়া ফুঙগাপ গ্রামের বলে জানানো হয়েছে ওই পোস্টে। উরগেন প্রশ্ন তুলেছেন , বিনা বাধায় কীভাবে নিয়ন্ত্রণরেখার গায়ে এভাবে রাস্তা তৈরি করছে চীন ? পরের পোস্টেই ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই রাস্তার ছবি পোস্ট করেছেন উরগেন। ঝকঝকে মসৃণ রাস্তা ।

এরপরেই উরগেন গত বছর ৬ জুলাইয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তিনি তার আগের বছরের পোস্টের ছবি দিয়ে জানিয়েছেন , সবাই সাবধান হোন। আমাদের দেশের জন্য উদ্বেগের খবর । ৬ জুলাই ২০১৯ , ডেমচক , কোয়ুল দুংটি এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ এক জায়গায় হয়ে দালাই লামার জন্মদিন পালন করি। আমরা সেই উৎসবের অংশ হিসেবে ভারতের জাতীয় পতাকা , বৌদ্ধ পতাকা এবং তিব্বতের পতাকা উত্তোলন করি। এই বছরও তা করি। তারপরেই চীনা বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার আমাদের ভূখণ্ডের মধ্যে ঢুকে আসে। এসে আমাদের শাসায়। কেন আমরা পতাকা উত্তোলন করেছি। আমার প্রশ্ন , চীনাদের সাহস কী করে হয় আমাদের মাতৃভূমির মধ্যে ঢুকে আমাদের শাসানোর ? এটা ওদের দখলদারির ছক। ওরা আমাদের জমি দখল করতে চাইছে। বংশ পরম্পরায় আমাদের পশুপালনের যে চারণভূমি , তা দখল করে নিতে চাইছে চীনারা। আমি দেশের এবং এই এলাকার সমস্ত নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি গোটা বিষয়টা নিয়ে। কারণ চীন ক ’ দিন আগেই নিয়ন্ত্রণরেখায় রাস্তা বানিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হচ্ছে।

এর আগে এ বছর এপ্রিল মাসেও তিনি নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনা সৈন্যবাহিনীর তৎপরতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় বিভিন্ন মহলের চাপে সেই পোস্ট তিনি মুছে দেন। তিনিই ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রথম চীনা অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক করেন বিভিন্ন মহলকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ