Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে সক্রিয় মাদক পাচারকারী

করোনাকালেও মাদকের বিস্তার

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে কদিন আগে প্রাণ দিয়েছেন দুই প্রতিবাদী যুবক। তাদের একজন চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ হাজিপাড়ার ছাত্রদল নেতা মীর সাদেক অভি (২৪)। অপরজন জেলার সাতকানিয়া উপজেলার বারদোনা গ্রামের মোসাদ্দেকুর রহমান (৩৫), তিনি যুবলীগের কর্মী। দুজনেই সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। আর মাদক বিক্রেতারাই তাদের হত্যা করে। দুটি হত্যাকান্ডের পরও ওই দুটি এলাকায় বড়সর কোন অভিযান পরিচালনা হয়নি। ধরাও পড়েনি কোন মাদক ব্যবসায়ী।
ওই দুটি এলাকার মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামে করোনা মহামারীতেও নেশার কারবারিদের দাপট কমেনি। এখনও সক্রিয় মাদক পাচারকারী চক্র। তাদের হাত ধরে নানা কৌশলে আসছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ দেশি-বিদেশী মদ। প্রশাসনের করোনা কেন্দ্রিক ব্যস্ততার সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক পাচারকারীরা। সড়ক, পাহাড় ও সাগর পথেও আসছে মাদক। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযানে ধরা পড়ছে মাদকের ছোটবড় চালান। কথিত বন্দুকযুদ্ধে বেঘোরে মৃত্যুতেও থামছে না নেশার কারবার। র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালে মাদক পাচার ও ব্যবসায় কৌশল বদল হয়েছে। কিন্তু মাদকের বিস্তার তেমন কমেনি। অন্যান্য অপরাধ কিছুটা কমে আসলেও মাদক সংক্রান্ত অপরাধ আগের মতোই আছে। মার্চ থেকে শুরু হওয়া টানা ছুটির সময় সড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিলো। তখনও নানা উপায়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এসেছে। ভারত থেকে এসেছে ফিনসিডিল, গাঁজাসহ হরেক মাদক। তখন কক্সবাজার থেকে সরাসরি প্রাইভেটকার, পিকআপ ও মোটর সাইকেলে ইয়াবা নিয়ে ঢাকা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচারকালে বেশ কয়েকটি চালান ধরাও পড়ে।
টেকনাফ থেকে হেঁটে ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রাম আসার সময়ও ধরা পড়ে বেশ কয়েকজন। যানবাহন চালু হওয়ার পর প্রতিদিনই ধরা পড়ছে ইয়াবার চালান। স¤প্রতি সমুদ্রপথে পতেঙ্গা হয়ে ইয়াবা পাচারকালে র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান এক মাদককারবারি। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় এক লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট। সীমান্ত হয়ে ভারত থেকে আসা ফেনসিডিলের বেশ কয়েকটি চালানও স¤প্রতি ধরা পড়ে। প্রতিদিনই ধরা পড়ছে গাঁজাসহ দেশি-বিদেশী মদ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, মাদকের চাহিদা থাকায় যোগানও বাড়ছে। মাদকসেবীরা যেকোন উপায়ে তা সংগ্রহ করছে। কোন কোন এলাকায় মাদকের হোম ডেলিভারি সার্ভিসও চালু হয়েছে। অনলাইনে অর্ডার পেয়ে বাসাবাড়িতে মাদক পৌঁছে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। মহানগরী বিভিন্ন এলাকায় মাদকের হাট হিসাবে পরিচিত এলাকাগুলোতেও জমজমাট ব্যবসা চলছে। তাদের মদদদাতা হিসাবে সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ক্যাডার এবং কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তার নামও আসছে। ফলে এসব চক্রের কারণে মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। সমাজের সচেতন একটি অংশ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েও কোন কিছু করতে পারছে না। করোনায় মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলনও নেই। ফলে এলাকাভিত্তিক মাদকের হাটগুলো অক্ষত থেকে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু অভিযান হয়। পরে সবকিছু চলে আগের মতো।
করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের বিশেষ অভিযান নেই বললেও চলে। নিয়মিত অভিযানে কিছু মাদক উদ্ধার আর মাদক বিক্রেতা বা বহনকারী ধরা পড়লেও মূলকারবারিরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নেশাদ্রব্য ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মাদকের নীল ছোবলে পরিবার, সমাজে অশান্তি বাড়ছে। বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতার মতো অপরাধে জড়িতদের বিরাট অংশ মাদকাসক্ত। নেশাখোরেরা তাদের নেশার টাকা জোগাড় করতে খুনও করছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদক

২২ অক্টোবর, ২০২২
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ