পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনা বড় ধরনের ধ্বস নামিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন মন্দা আর দেখা যায়নি। এই মহামন্দায় সমৃদ্ধ দেশগুলোর অর্থনীতিও ধুঁকছে। তারা করোনাকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কাজ জোরেসোরে শুরু করেছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে আমাদের অর্থনীতিতে মন্দাভাব দেখা দিলেও তুলনামূলক বিচারে অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার গবেষণামূলক প্রতিবেদনে এমন আশাবাদের কথা বলা হয়েছে। এই স্থিতিশীলতার পেছনের কারণ হচ্ছে, করোনা বিস্তারের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং অর্থনীতিকে সচল করার নানা উদ্যোগ। করোনায় অর্থনীতির বিপর্যয় ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কার বিষয়টি অনুধাবন করে তিনি ত্বরিৎ ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা রাখা এবং দরিদ্র মানুষ যাতে দুর্ভোগের শিকার না হয়, এজন্য এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনামূলক প্যাকেজ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি করোনার কারণে যাতে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে না পড়ে, এ ব্যাপারে সুপরিকল্পিত দিক নির্দেশনা দেন। তিনি বারবার বলেছেন, করোনার কারণে আমরা বসে থাকতে পারি না। জীবনও রক্ষা করতে হবে, উন্নয়ন কার্যক্রমও চালাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই দূরদর্শী এবং সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের অর্থনীতি মন্দাবস্থার মধ্যেও অন্যান্য দেশের তুলনায় একটি ভাল অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থান ধরে রেখেই উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তিনি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে সচলের মাধ্যমে পুর্নোদ্যমে কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সরকারের অগ্রাধিকারমূলক দশটি মেগা প্রকল্পের পর্যালোচনামূলক সভায় প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশ দেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এসব প্রকল্পের কাজ তদারকি করছেন। তিনি এ কথাও বলেছেন, এসব প্রকল্পে কোনো প্রকার দুর্নীতি, অনিয়ম, শৈথিল্য বরদাশত করা হবে না। যারা দুর্নীতি করবে, তাদের এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। দেশের অর্থনীতিকে সচল এবং এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা, আন্তরিকতা এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া নিঃসন্দেহে দেশনায়কোচিত।
করোনার শুরু থেকেই আমরা বলে এসেছি, মহাদুর্যোগের মধ্যে কোনোভাবেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুপরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। অর্থনীতির সকল খাতকে সচল রাখতে হবে। করোনা মোকাবেলা করেই দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ, গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শুরু, কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনীতি অচলাবস্থার শিকার হলে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। করোনার কারণে ইতিমধ্যে আমাদের অর্থনীতির প্রধানতম দুই স্তম্ভ গার্মেন্ট ও প্রবাসী আয় খাতসহ অন্যান্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। শিল্প কারখানার উৎপাদন হ্রাস, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত কয়েক কোটি মানুষের বেকার হওয়া, ব্যয় সংকোচন করতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকবল ছাঁটাই করা, মার্কেট, দোকানপাট পুরোপুরি চালু না হওয়া ইত্যাদি কারণে সকল খাতেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গত মাস পর্যন্ত প্রবাসী আয়ের খাতটি চাঙা থাকলেও এখন তা থিতিয়ে আসছে। এর মধ্যে দুঃসংবাদ হচ্ছে, সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ থেকে দশ লাখের মতো প্রবাসীকে ফিরতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে ফিরেছেও। অর্থনীতিতে এর দুটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে। প্রথমত, কর্মসংস্থান সংকট বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়ত, রেমিট্যান্স কমবে। এই দুই সমস্যা অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে রপ্তানির প্রধানতম খাত গার্মেন্টে নেতিবাচক প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। বিশ্বের নামী-দামী ব্র্যান্ডগুলো অর্ডার বাতিল করেছে। নতুন অর্ডার হ্রাস পেয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান পোশাকের দাম কমানোর কথা বলছে। এতে খাতটি ৩.৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে। আয় কমে যাওয়ায় শ্রমিক ছাঁটাইও শুরু হয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। খাতটি আবার কবে চাঙা হবে, তা অনিশ্চিত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার কারণে দেশে প্রায় ছয়-সাত কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। এর সাথে নতুন করে বেকার যুক্ত হচ্ছে। বেকার সমস্যা অর্থনীতির গতি যে শ্লথ করে দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণ হ্রাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাতটি বরাবরই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। বাজেটে এ খাত থেকে যে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, বছর শেষে দেখা যায়, তাতে ব্যাপক ঘাটতি রয়ে গেছে। কোনো বছরই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। এর অন্যতম কারণ, সতের কোটি মানুষের দেশে আয়কর দেয় মাত্র কয়েক লাখ। অর্থনীতির জন্য এটি অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত। আয়কর দাতার সংখ্যা যদি কয়েক কোটিতে উন্নীত করা যেত, তাহলে অর্থনীতির ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত হতো। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের চিত্রটিও আশাব্যঞ্জক নয়। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবতার নিরিখে বিনিয়োগ নীতিতে পরিবর্তনের কথা বলেছেন। গত ৮ জুন মন্ত্রীসভার বৈঠকে তিনি বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে এ খাতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগের অর্থ ও লভ্যাংশ সহজে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রানীতি আইন-১৯৪৭ কে সহজ ও বিনিয়োগ বান্ধব করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাজেটেও বিনিয়োগ বাড়ানোর সুবিধার কথা বলা হয়েছে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত সম্পন্ন এবং উপযোগী করার বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে ১৭টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং তার কার্যকর বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে এ সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষিখাতে আমাদের সমৃদ্ধ অবস্থান ধরে রেখে এগিয়ে নিতে হবে। কৃষক যাতে উৎপাদিত ফসল নিয়ে হতাশায় না ভোগে, সঠিক দাম পায় এবং কৃষিপণ্য সহজে সরবরাহ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং এগিয়ে নিতে এখন বসে থাকার সময় নেই। বলা বাহুল্য, অর্থনীতির উন্নয়ন কেবল সরকারেরই দায়িত্ব নয়, এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতেরও দায়িত্ব রয়েছে। ফলে অর্থনীতিকে দাঁড় করানো ও গতিশীল করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের কর্মকান্ড পুর্নোদ্যমে শুরু করতে হবে।
অর্থনীতি পুনর্গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে উদ্যোগী হয়েছেন, তা কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। তাঁর নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত সফল করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলকে কর্মদ্যোগী ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। এক্ষেত্রে সময়ক্ষেপন ও শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। দুর্নীতি ও অপচয়ের প্রশ্নই ওঠে না। অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর কাজ যথাযথ তদারকির মাধ্যমে যথাসময়ে সুচারু রূপে সম্পন্ন করতে হবে। যেসব মন্ত্রণালয়ের অধীনে এগুলো রয়েছে, সেসব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের কর্মতৎপর ও সক্রিয় হতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা একটা বড় রকমের দুষ্টক্ষত। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন বিলম্বিত হয়, তেমনি গণ দুর্ভোগ বাড়ে। কাজেই কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয় কাম্য হতে পারে না। কারো গাফিলতি যেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ এবং নির্দেশনা ব্যাহত না করে সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।