পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্ব পুঁজিবাদ হঠাৎ ভয়ানক ধাক্কা খেয়েছে এক অজানা, অদৃশ্য কিন্তু সর্বত্র বিরাজমান ক্ষুদ্র ভাইরাস নভেল করোনা কোভিড-১৯ এর কাছে। প্রায় অজানা করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীকে দাবড়িয়ে তুলোধুনো করেছে। ধনী, দরিদ্র, সৎ, দুর্জন, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, আমলা, শিক্ষক, কৃষক কেউ রেহায় পায়নি। কারো পালানোর পথ নেই। করোনাভাইরাস ছাত্র, শ্রমিক সবাইকে একটি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে: রাষ্ট্র ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় ফিরে আসবে তো?
প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন মূলকথা নয়, মূলকথা সুন্দর জীবন জীবিকা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে সব নাগরিকের সমঅধিকার ও সমসুযোগ। তার অনুপস্থিতির কারণেই কি করোনাভাইরাসের প্রতিশোধমূলক প্রয়াস, যা থেকে কারো রক্ষা নেই? ফরাসি মার্কসীয় অর্থনীতিবিদ টমাস বেকেটি কী ভাবছেন? নাকে-মুখে রক্ত সঞ্চার স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়, বরঞ্চ মৃত্যুর সিগনাল। অন্যায় লুটেরা মুৎসুদ্দি শ্রেণী আজ সাধারণ মানুষের দুর্ভাগ্যের কাতারে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার তাদের কোনো পথ খোলা নেই। উন্নয়নের স্বপ্নের রাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশী দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা হঠাৎ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চোখে অন্ধকার দেখেছেন। অন্ধকার রুমে কালোবিড়াল খুঁজে বেড়াচ্ছেন। মুক্তি যেন সুদূরপরাহত।
তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ চীনের উহানকে ছাড়িয়ে গেছে। শিল্প ও স্বাস্থ্যখাত পুরোপুরি বিপর্যন্ত। কেবল সুষ্ঠুভাবে চালু আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী, সিএমএইচ এবং কয়েকটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান BSMMU হাসপাতাল সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে। হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে, কয়েক শিক্ষকের করোনা মৃত্যুর ঘটনায়।
স্বাস্থ্যব্যয় বিল এবং অক্সিজেনের স্বল্পতার আলাপ নাই বা হলো। দেশের প্রায় ৫০০০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের (UAFWC) ১০ শতাংশ কেন্দ্রে একজন ডাক্তারও সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান দূরে থাকুক, নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। ঝড় উঠবে সেখানে। অর্থনীতির সংবাদ আরো দুর্বিষহ।
বোমা ফাটিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (CPD)। তারা বলেছে, দারিদ্র্যের হার ২০% থেকে বেড়ে ৩২% হবে। উন্নয়ন অন্বেষণের পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ তিতুমীরের হিসাবে এই বছরই বাংলাদেশে দারিদ্র্য বেড়ে ৪২-৪৩% পৌঁছবে। ভয়ানক তথ্য। হিসাবে খুব ভুল নাও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে অন্যূন ৫০ লাখ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হবে। অতিরিক্ত ২ কোটি দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবার খাদ্যসঙ্কটে আছে। তাদের আয় ভয়ানকভাবে কমেছে। দ্রুত অবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। এসব সমস্যার মূলে রয়েছে সুশাসনের অভাব ও গণতন্ত্রহীনতা এবং লাগামহীন দুর্নীতি।
উহানে করোনার ঢেউ দেখে এসএ টিভির মার্চের (২০২০) টকশোতে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে আমি বলেছিলাম, ঝড় আসছে, হাসপাতাল সামলান। ভেন্টিলেটর নয়, বেশি প্রয়োজন নেবুলাইজার ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ এবং এক মাসের মধ্যে দ্রুত প্রশিক্ষণ দেয়া কয়েক হাজার সার্টিফিকেটধারী অবেদন চিকিৎসক (Anesthetist), যারা ভেন্টিলেটর চালাবেন, ইনটুবেশন করবেন এবং যাদের শ্বাসনালী (ট্র্যাকটমি) দ্রুত কেটে বাতাস প্রবেশের দক্ষতা থাকবে। মূল সমস্যায় নজর না দিয়ে কোভিড-এর চিকিৎসক ও সেবিকাদের ৩-৫ তারকা হোটেলে থাকা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করলেন। প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে লেনদেন করলেন, দুর্নীতির প্রশ্রয় দিলেন, সেবা নিশ্চিত করলেন না। নিবেদিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান দিলেন না, যারা পালাচ্ছে তাদের উপঢৌকন দিলেন, অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অধিকতর দুর্নীতি ও অজুহাতের সুযোগ করে দিলেন।
বারবার অনুরোধ করা সত্তে¡ও গণতন্ত্রের মানসকন্যা একবারও সর্বদলীয় রাজনৈতিক আলোচনার উদ্যোগ নিলেন না। আপনার রাজনৈতিক কর্মীদেরও কি বিশ্বাস করতে পারছেন না? কিন্তু কেন? কোথায় সংশয়? আপনার এত ক্ষোভ কেন? দুঃখ কোথায় লুকিয়ে আছে? গোয়েন্দা নির্ভরশীলতা অজান্তে বিপদ ডেকে আনে। আপনার এত কঠোর পরিশ্রম, সজাগ দৃষ্টি, দেশের জন্য পিতার ন্যায় অফুরন্ত ভালোবাসা দেশের জন্য পুরো সুফল আনছে না কেন, ভেবে দেখেছেন কি? দেশবাসী আপনাকে ভালোবাসে, তারা আরো একজনকে ভালোবাসে, তিনি খালেদা জিয়া। তিনি আপনার সমতুল্য না হলেও দেশের কঠিন বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য আপনার খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ প্রয়োজন। অতীতের ন্যায় মহানুভবতা প্রদর্শন করুন। তার সুস্থতা কামনা করে আসুন। দু’জনে মিলে জনকল্যাণকর সুশাসিত গণতান্ত্রিক আনন্দের বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করুন।
অতর্কিত করোনা সংক্রমণে বাংলাদেশে কয়েকজন মন্ত্রীর প্রলাপ উক্তি বিষদৃশ। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রবাহ হবে ভয়ানক যা দ্বারপ্রান্তে অথচ আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ তিতুমিরের উন্নয়ন অন্বেষণ ২০২০-২১ বাজেট সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত আলোচনায় দেখিয়েছেন যৌক্তিক প্রবৃদ্ধি ৪.২% এর অধিক সম্ভব নয়। উৎপাদনশীল জিডিপি কমবে ১২.৪%। প্রবাসী রেমিট্যান্স আয় কমেছে। কয়েকটি দেশে প্রবাসী অভিবাসী বাংলাদেশীদের কর্মচ্যুতি ঘটেছে। ১৭৪টি রাষ্ট্রে বাংলাদেশের এক কোটি ২০ লাখ অভিবাসী কাজ করে। সেখানে কর্মসংস্থান বাড়ছে না, বরঞ্চ কমছে এবং পোশাক শিল্পের আয় স্থবির হয়ে পড়েছে, নীরব ছাঁটাই চলছে। শিক্ষায় সবার সমান সুযোগ নেই, সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা ভোগ করে মাত্র ৯৬ লাখ পরিবার। প্রাপ্তির সাথে আছে দুর্নীতির উইপোকা, বেকারত্ব বাড়ছে ৩% হারে, অসহায় শিক্ষিত বেকাররা।
দুঃসময়ের বাজেট
গতানুগতিক বাজেটে দুঃসময় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ উপেক্ষিত থাকে। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে কর্মদক্ষতায় ও প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়ছে বাংলাদেশের শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা। প্রধানমন্ত্রীকে গণতান্ত্রিক আলোচনায় দেখা যায়নি ১৪ দলের সভায়, অধিকাংশ সময়ে তিনি ছিলেন আমলা পরিবৃত, রাজনৈতিক সহকর্মীরা ম্রিয়মান। মৃত ব্যক্তির বন্দনা আছে, সঙ্গে আছে ঢাক ঢোলের বাজনা অথচ কর্মীদের হৃদয়ে নেতার আকুতি অনুপস্থিত। এক নাগাড়ে ২০ দিন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসক ও প্যারামেডিকদের অতুলনীয় সেবা ও জনগণের ক্রমাগত দোয়ায় করোনামুক্ত হয়ে সরাসরি গত ১৪ জুন ২০২০ বনানী কবরস্থানে গিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সতীর্থ নাসিমকে শেষ অভিবাদন জানাতে। তখন রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনপর্ব চলছিল। শহীদ তাজউদ্দীন, নজরুল ইসলাম ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর কবর জেয়ারত না করে প্রেসিডেন্টের সাথে সাথে অন্যান্য আওয়ামী লীগ কর্মী ফিরে গেলেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কাউকে দোয়া করতে দেখলাম না। অধিকাংশ রাজনৈতিক কর্মী জানে না বনানী কবরস্থানে শায়িত আছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক বীর সেনানী। কী দুর্ভাগ্য জাতির!
১. দুঃসময়ের বাজেট নিয়ে আলোচনার উত্তাপ নেই। দেশের এতজন বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ব্যাংকার, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী বা রাজনীতিবিদ কেউ সাহস করে সত্য কথা জনসাধারণকে জানাচ্ছেন না। সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায়। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, এমনকি তোফায়েল, আমু সবাই। তাদের সংশয় কেন? তারা শেখ হাসিনার নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক সহকর্মী।
২. বিএনপি তাদের স্ট্যান্ডিং ও উপদেষ্টা কমিটির সভায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিবিড়ভাবে পড়ে, অধ্যয়ন করে একাধিক আলোচনা সমালোচনা করে মননশীল সুষ্ঠু সুপারিশ সরকারকে জ্ঞাত করেছে। দেশকে তো বাঁচাতে হবে। এটা কেবল হাসিনার দায়িত্ব নয়, খালেদা জিয়ারও।
৩. জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্যরা মুখে কলুপ এঁচেছেন কেন? সুচিন্তিত বাগ্মিতায় সংসদ উত্তপ্ত রাখুন, ভয় পাবেন না, নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করুন। সংখ্যার চেয়ে সাহস বড়।
৪. জিএম কাদের অনুগ্রহ করে হুক্কাহুয়া করা বন্ধ করুন। জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য আপনার অনেক কাজ বাকি।
৫. ওবায়দুল কাদের অনুগ্রহ করে মুখ বন্ধ রাখুন। বিরোধীদলীয় সব সমালোচনার উত্তর দিতে হয় না, এটা রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, অর্থমন্ত্রীকে উত্তর দেয়ার সুযোগ দিন। বাজেট অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব, আপনার নয়।
৬. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সর্বদলীয় রাজনৈতিক সভা ডাকুন, বিপদ মুক্তির বাজেট উদ্ভাবনের জন্য। নতুবা কোনো লাভ হবে না। না দেশের, না দেশবাসীর। ওষুধের দাম কমবে না, কৃষক শ্রমিক তার শ্রমের ন্যায্যমূল্য পাবে না, আইসিউ (ICU) প্রতারণা বাড়বে, মৃত্যুর পরও চিকিৎসার বিল দিতে হবে, ফড়িয়ারা রাজত্ব করবে, শহরবাসী অত্যধিক মূল্যে ফলমূল, শস্য কিনে প্রতারিত হবে। স্বাস্থ্যখাতে নৈরাজ্য অব্যাহত থাকবে, ক্ষুধা দারিদ্র্য বাড়বে, সঙ্গে যৌননিপীড়ন, নৈরাজ্য ও ব্যাপক দুর্নীতি। মুখথুবড়ে পড়বে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী।
বাজেটে পরিশোধিতব্য সুদ
আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রাপ্য বিদেশী ঋণের সুদ এবং পিপিপি (Public Private Partnership) ভর্তুকি ও দায়বদ্ধতা পরিশোধ করতে ১০০৪১১ (এক লাখ চারশত এগারো) কোটি টাকা প্রয়োজন যা ২০২০-২১ বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৭.৬৮%। খাদ্য, দুর্যোগ, কৃষি, পানি সম্পদ ও স্থানীয় সরকারের মোট বরাদ্দের ১৩.৩৬% চেয়ে ২৫০০০ কোটি টাকা বেশি। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ মাত্র ৭৯৯৪১ কোটি যা বাজেটের ১৪.২৫%। সংসদে এই সম্পর্কে প্রশ্ন না ওঠা দুর্ভাগ্যজনক। পরিশোধিতব্য বিদেশী ঋণের বিষয়টি জনসাধারণের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবর্গের ব্যর্থতা রাজনীতিতে তাদের অপরিপক্বতার পরিচায়ক এবং দুঃখজনক। ওদিকে বাংলাদেশের জনপ্রশাসন মাথাভারী, নিত্যনতুন সিনিয়র সচিবের জন্ম হচ্ছে, বাজেটের মোট বরাদ্দের প্রায় এক পঞ্চমাংশ ব্যয় জনপ্রশাসনে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য এনাদের উর্বর মস্তিষ্ক খুব কার্যকর।
পুষ্টি ব্যতীত স্বাস্থ্য অকল্পনীয়
দেশে দুই কোটি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারকে করোনা উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আগামী ছয়মাস ফ্রি রেশন দেয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। চার থেকে ছয়জনের পরিবারের জন্য প্রতিমাসে চাল ২০ কেজি, আটা পাঁচ কেজি, আলু ১০ কেজি, সরিষার তেল এক লিটার, সয়াবিন তেল এক লিটার, পেঁয়াজ এক কেজি, মসুর ডাল দুই কেজি, আদা ২০০ গ্রাম, রসুন ২০০ গ্রাম, শুকনা মরিচ ২০০ গ্রাম, লবণ ১-২ কেজি, চিনি ১-২ কেজি ও সাবান দুটিসহ মোট খাদ্য প্যাকেটে ব্যয় হবে অনধিক দুই হাজার টাকা। ফ্রি খাদ্য রেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের মাসিক ব্যয় মাত্র চার হাজার কোটি টাকা। খাদ্যগুদামে স্থান বাড়বে যা কৃষকের শস্য উৎপাদনে আকর্ষণ বাড়াবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতি মাসে প্রতি পরিবারকে আরো দিতে হবে দুই কৌটায় ২০০ আয়রন টেবলেট, ৬০ মিলিলিটারের এক বোতল প্যারাসিটামল সাসপেনশন, ৩০টি ৫০০ মিলিগ্রামের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, ১০০ মিলিলিটার ক্লোরহোভিন এবং পাঁচটি ঙজঝ সাসেটস, এতে ব্যয় হবে মাসে অনধিক দুইশ’ টাকা। সাথে উঠানে সবজি চাষে সহযোগিতা। গর্ভবর্তী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সপ্তাহে একবার দুধ, ডিম খাওয়ার সুবিধার জন্য মাসে ৫০০ টাকা নগদ সহযোগিতা দেয়া কাম্য হবে। স্মরণ রাখতে হবে, নগদ অনুদান অধিকতর দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে। সুতরাং নগদ অনুদানের পরিমাণ যথাসাধ্য কম রাখতে হবে। খাদ্য সহযোগিতা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে, সর্বদলীয় রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র ও এনজিওদের সহায়তায়, সাথে থাকবেন সামরিক বাহিনীর দেশপ্রেমিক সেনানীরা।
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস
ক. নিত্যনতুন সিনিয়র সচিব সৃষ্টি কাম্য নয়, কোনো আমলাকে চাকরিতে এটেনশন দেয়া অনভিপ্রেত। তারা রাজনীতিবিদদের প্রতিপক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনবিরোধী, সুখের পায়রা, জনগণ বিচ্ছিন্ন। জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং জবাবদিহিবিহীন প্রশাসনে এদের বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে।
খ. সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও করপোরেট কর্মকর্তাদের বেতন হ্রাস করে করোনাসৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য এবং দেশের সার্বিক অবস্থার বিবেচনায় যৌক্তিক কার্যক্রম নিতে হবে। এক শ্রেণীর নাগরিক প্রাচুর্যের মধ্যে জীবন যাপন করবেন আর শ্রমিকরা অর্ধাহারে কালাতিপাত করবেন, এটা সভ্যতার লক্ষণ নয়।
গ. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের টিউশন ফি ২৫ শতাংশ হ্রাস বাঞ্ছনীয়।
ঘ. বিদেশে সরকারি অর্থে চিকিৎসা সুবিধা রহিত করতে হবে।
সরকারি অর্থায়নে বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না সংসদ, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোনো নাগরিক। সবাইকে নিজ দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
ঙ. ক্ষতিপূরণ ব্যতিরেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার কুইক রেন্টাল-২০২০ বাজেট থেকে প্রত্যাহার, দেশবাসী আর কতদিন ব্যবসায়ীর হাতে প্রতারিত হবেন। মেগা প্রকল্পের লাগাম কিছুদিন ধরে রাখুন।
চ. জনপ্রশাসন (আমলাতন্ত্রের) বিভাগের ব্যয় ৫০ শতাংশ হ্রাসের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছ. প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ সব ভিআইপির নিরাপত্তা ব্যয় ৫০ শতাংশ কমানো হলে পুলিশ ও এলিট ফোর্সের সদস্যরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অধিক মনোযোগ দেয়ার সুযোগ পাবেন, খুনখারাবি কমবে এবং রাহাজানি, ছিনতাই, পথেঘাটে যৌননিপীড়ন হ্রাস পাবে, সফলতার জন্য পুলিশ পুরস্কৃত হবে। পুলিশ হবে জনগণের সত্যিকারের বন্ধু।
জ. ব্যয় হ্রাসের অজুহাতে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই চলবে না।
উন্নয়নের জন্য আয় বৃদ্ধি অত্যাবশ্যক
ক. দেশে বর্তমানে মাত্র ২২ লাখ ব্যক্তি আয়কর নিবন্ধিত আছেন। এটা হতে হবে কমপক্ষে এক কোটি। এতে সরকারের আয় বাড়বে এক হাজার কোটি টাকা।
খ. আয়করমুক্ত করসীমা ৩.৫০ লাখের পরিবর্তে ৪.৫ লাখে নির্ধারণ করুন। বয়োবৃদ্ধ ও বিধবাদের জন্য অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা। বয়োবৃদ্ধদের ব্যক্তি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় অত্যধিক, যৌক্তিক আয়কর হবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ব্যাংক ও করপোরেট ট্যাক্স ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকা বাঞ্ছনীয়। সাথে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ শর্তও থাকবে।
গ. স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, পরিবেশের জন্য অমঙ্গলকর ধূমপান, জর্দা, পান সেবন, মাদকাসক্তি, অপ্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন এবং ক্ষতিকর প্রসাধনী উৎপাদন ও বিপণন হ্রাস করার জন্য ১০০ শতাংশ শুল্ক ধার্য যৌক্তিক উদ্যোগ। এটি নেয়া দরকার।
ঘ. দেশে প্রায় ৪৪ লাখ যানবাহন আছে। তন্মধ্যে ৫০ হাজার বাস, এক লাখ ৫৩ হাজার ট্রাক, তিন লাখ অটোরিকশা, প্রায় দেড় লাখ কভারড ও উন্মুক্ত ভ্যান এবং পিকআপ, ৩০ লাখ মোটরসাইকেল, জিপ ৬৫ হাজার, মাইক্রো ও মিনিবাস এক লাখ ৩৫ হাজার, প্রাইভেট প্যাসেঞ্জার কার তিন লাখ ৬০ হাজার, সামরিক যানবাহন হিসাব প্রকাশ্য জ্ঞাত নয়। সব সরকারি-বেসরকারি মোটরযান ও মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়াতে হবে।
ঙ. কোর্টে নৈরাজ্য চলছে, লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে। ন্যূনতম কোর্ট ফি উচিত হবে পাঁচ হাজার টাকা, তিনবারের অতিরিক্ত প্রতিবার সময় প্রার্থনার জন্য বাধ্যতামূলক ফি হবে পাঁচ হাজার টাকা, শাস্তিমূলক কোর্ট ফি জমা দেয়ার পর নতুন তারিখ পাবেন। এক বছরের মধ্যে সমস্যার নিষ্পত্তি না হলে প্রতিবার ১০ হাজার টাকা কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। সরকার পাবে ৫০ এবং প্রতিপক্ষ পাবে ৫০ শতাংশ। এতে অনাকাক্সিক্ষত মামলা কমবে।
লেখক : ট্রাস্ট্রি গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।