Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চীন শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলো ৫১৬১ বাংলাদেশি পণ্যে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

চীনের বাজারে নতুন করে বাংলাদেশের ৫ হাজার ১৬১টি পণ্যেকে শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে চীন। আগামী ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ এই সুবিধা ভোগ করবে। গত ১৬ জুন দেশটির ট্যারিফ কমিশন নোটিশ দিয়ে এ তথ্য জানায়। নোটিশে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশের জন্য শুল্কমুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকার দিতে চীনের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নোটিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশি পণ্য চীনে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা পাবে। কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক দিতে হবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে এ দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, একই উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের বাজারে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেলে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় সকল পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত কোটামুক্তভাবে প্রবেশের সুবিধা পাবে। ফলে, চীনে রপ্তানি উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে।
সুত্র মতে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। বিশেষ করে এ অঞ্চলে চীনের পণ্য আমদানির বড় ক্রেতা বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ থেকে চীনে পণ্য রফতানির গতি খুব একটা বাড়ছিলো না। এবার চীনের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির পথ আরো উন্মুক্ত হলো।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ পাঁচ হাজার ১৬১টি পণ্যে এই সুবিধা পাবে। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তির (এপিটিএ) আওতায় বর্তমানে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৯৫টি পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করছে। চীন নতুন করে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত ঘোষণা দেওয়ায় বাংলাদেশ ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্যে এ সুবিধা পাবে। এতে দেশটিতে ৩টি বাদে বাকি সব পণ্যই শুল্কমুক্ত প্রবেশের অনুমতি পেলো।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীনে ৮৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করে। বিশেষ করে কাচা চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাকসহ কাঠের আসবাবপত্র উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত চামড়ার ৬০ শতাংশের বেশি রফতানি হয় চীনে।

এলডিসি কান্ট্রি হিসাবে বাণিজ্যের এই প্রাধিকারটি পেতে দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা-বেইজিং আলোচনা চলছিল। ১৬ জুন সুবিধাটি দিতে সম্মত হয় শি জিন পিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশসহ ৩৩টি স্বল্পোন্নত দেশ যাদের সাথে চীনের ক‚টনৈতিক সম্পর্ক আছে তাদেরকে চীনের ৬০ শতাংশ ট্যারিফ লাইনে শুল্ক-মুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়। কিন্তু চীন প্রদত্ত এ সুবিধা বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতার অনুক‚ল কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা আছে এমন অনেক পণ্য শুল্ক-মুক্ত সুবিধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য রপ্তানি সম্ভাবণাময় পণ্যে শুল্ক-মুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা প্রদানের জন্য চীনকে অনুরোধ করে। যদিও চীন ২০১৩ সালে শুল্ক-মুক্ত সুবিধা প্রাপ্ত দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪০টি দেশে উন্নীত করে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ যে ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি বা অর্থনৈতিক কূটনীতি চালু করেছে, এটা সেদিক থেকে খুব বড় একটা অর্জন। চীন সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির বাজারে বাংলাদেশ যত পণ্য পাঠাবে তার ৯৭ শতাংশই শুল্ক মুক্ত সুবিধা পাবে। এটাকে এক অর্থে শত ভাগ শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধাও বলা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ থেকে যত ধরনের পণ্য চীনে রপ্তানি হয় তার মধ্যে মাত্র ৩টি বাদে সবই বিনা শুল্কে দেশটির বাজারে ঢুকতে পারবে।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অর্থনৈতিক কূটনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনকে শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা বাড়াতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের ট্যারিফ কমিশন বাংলাদেশি পণ্যে ৯৭ শতাংশ শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ