পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে দেশের সরকারি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ইতিমধ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও বেসরকারী হাসপাতালগুলোর অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। যেসব বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসা চালু রেখেছে তারা সাধারণ রোগীদের প্রতি অমানবিক আচরণ করছে। জরুরী স্বাস্থ্যসেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে পরাগী ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিদিনই রাস্তায় বা হাসপাতালের বারান্দায় অনেকে মারা যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রতিদিন যত মানুষ মারা যাচ্ছে, বিনা চিকিৎসায় সাধারণ রোগী মারা যাওয়ার সংখ্যাটি কম নয়। বিশ্বজুড়েই কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও অন্য কোনো দেশে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এমন অমানবিক নাজুক অবস্থা দেখা যায়নি। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে রোগী ফিরিয়ে না দেয়ার নির্দেশনা জারি করলেও কোনো হাসপাতালই তা মানছে না। এহেন বাস্তবতায় উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে জরুরী সেবার জন্য আসা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি না করে ফিরিয়ে দিলে রোগীর মৃত্যু হলে তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফৌজদারি অপরাধ বলে ঘোষণা দিয়ে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গত ১৩ মে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নন কোভিড রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তা নাহলে, হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলসহ শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই নির্দেশনা এখন কাগজে-কলমে পরিণত হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে এর কোনো কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই চিকিৎসার অভাবে সাধারণ রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত দেখা যায়নি। এহেন বাস্তবতায় হাইকোর্টের আইনজীবীসহ একই ধরনের প্রতিকার চেয়ে করা ৫টি রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বাস্থ্য অধিদফতরের জারি করা সাম্প্রতিক নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ সব ধরনের রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৮ দফা নির্দেশনা জারি করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর এই সময়ে বিনা চিকিৎসায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর বাস্তবতায় হাইকোর্টের এমন নির্দেশনায় মানুষের মনে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করবে। তবে মানবিক অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দফতরগুলোর। মূলত তাদের নিস্ক্রিয়তার কারণেই চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। হাসপাতালগুলোও চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছে।
হাইকোর্টের জারি করা ৮ দফা নির্দেশনায় ডিরেক্টর জেনারেল অব হেল্থ সার্ভিসের পরিচালককে(ডিজিএইচএস) ১১ ও ২৪ মে তারিখে জারি করা স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায়শক্তহাতে বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়ে কোনো সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল যেন রোগীদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না করে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে কোন হাসপাতালে কয়টা বেড ও আইসিইউ বেড খালি আছে তা প্রতিদিনের বুলেটিনে ও গণমাধ্যমে প্রকাশের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়্ াহয়। গত সপ্তাহে রাজধানীর নামীদামি বেসরকারি হাসপাতাল আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে অনিয়ম, ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাÐ ও রোগী মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বেশ সোচ্চার ভূমিকা দেখা গেলেও বাস্তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল। আমরা মনে করি, যেসব হাসপাতাল রোগীর চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেন ও কি কারণে রোগীদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে বড় অংকের অর্থদÐ দেয়া যেতে পারে। সেই সাথে সাধারণ মানুষকেও অপ্রয়োজনীয়ভাবে হাসপাতালে ভীড় করা থেকে বিরত রাখতে সচেতনতামূলক উদ্যোগ নিতে হবে। হাসপতালগুলোর সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালে বিদ্যমান অস্বচ্ছতা, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করে সব ধরনের রোগীর সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও সংস্থার। বিনা চিকিৎসায়, হাসপাতালের দায়িত্বহীনতার কারণে প্রতিটি মৃত্যুর অভিযোগ উপযুক্ত তদন্তসাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এক্ষেত্রে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল বা বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান হতে পারে না। ভিকটিম পরিবারের ক্ষতিপুরণ এবং দোষীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও জরিমানা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জবাবদিহিতা ও স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।