পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় ব্যয় বেড়েছে বিচারের। ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হচ্ছেন বিচারপ্রার্থী। এতে শুধু বিচারপ্রার্থীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। ব্যাহত হচ্ছে ন্যায় বিচার। চাপ বাড়ছে আদালতের ওপর। বাড়ছে মামলা জট।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘসূত্রিতা এবং মামলা জটের কারণ শুধুমাত্র বিচারক কিংবা সহায়ক কর্মচারি স্বল্পতাই নয়। বহুলাংশে দায়ী গোষ্ঠিগত স্বার্থ চিন্তা, নানা মাত্রিক স্বার্থ সংরক্ষণ, দুর্নীতি এবং দুর্বল বিচার ব্যবস্থাপনা। দীর্ঘদিন ধরে পূঞ্জীভুত এ সঙ্কট থেকে সহসাই বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। সরকারের সদিচ্ছা, সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের আন্তরিকতা এবং বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়েই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, মামলা জট, কারণ ও প্রতীকারের সম্ভাব্য উপায় নিয়েই তৈরি হয়েছে এ ধারাবাহিক প্রতিবেদন।
টাঙ্গাইল ভুয়াপুর সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতার অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের মেয়ে পালিয়ে গেছে। গিয়ে উঠেছে ফেসবুকে পরিচয় হওয়া ঢাকার কোনাপাড়ায় বসবাসকারী আরেক ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী তরুণের বাসায়। তরুণের বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পালিয়ে আসা মেয়েটিকে ছেলের নিরীহ বাবা-মা বুঝিয়ে পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার চেষ্টা করেন। মেয়ে কিছুতেই ফেরত যেতে রাজী নয়। সে তুলে ধরে বাবা-মায়ের নিত্য কলহ, মেয়ের ভবিষ্যতের বিষয়ে তাদের উদাসীনতা, নির্যাতনসহ নানা তথ্য।
এদিকে মেয়ে হারিয়ে সেই নেতা পুলিশের শরণাপন্ন হন। মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে মেয়ের অবস্থান শনাক্ত করেন। ডেমরা থানা পুলিশের সহযোগিতায় মেয়েকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বাসা থেকে উদ্ধার করেন। সেই সঙ্গে ধরে নিয়ে আসেন ছেলে এবং তার বাবাকে। ভুয়াপুর থানায় ঠুকে দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা। মামলায় প্রয়োগ করা হয় ৭ ধারা। এ মামলার বিপরীতে ছেলেকে আদালতে চালান করা হয়। তার বাবাকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় থানা থেকেই। পুলিশ মেয়েটির কাছ থেকে ২২ ধারায় জবানবন্দী নিয়ে বাবার জিম্মায় ছেড়ে দেয়। জবানবন্দিতে মেয়েটি জানায়, পারিবারিক নির্যাতন, বাবা-মায়ের অমিল, পিতার অর্থ লিপ্সা, উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনের প্রেক্ষাপটে আত্মরক্ষার্থে সে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ছেলে কিংবা তার বাবা-মা তাকে অপহরণ করেনি। তারা খুব নিরীহ ও ভালো মানুষ। সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বেচ্ছায় সে ঢাকায় চলে যান। ছেলেটির বাবা-মা তাকে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দেয়। কিশোরী মেয়ের জবানবন্দীর ভিত্তিতে মামলাটি এখানেই নিষ্পত্তি হতে পারতো। পুলিশ আনুষ্ঠানিকতার স্বার্থে দাখিল করতে পারতো একটি চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন। কিন্তু ওই রাজনৈতিক নেতার প্রভাবে মামলাটির তদন্তই আর এগোয়নি। মামলাটি ঝুলছে। দেড় মাস কারাভোগের পর ছেলেটির কারামুক্তি ঘটলেও পরীক্ষায় অংশ নেয়াএ হয়নি। তারিখের পর তারিখ যায়-মামলা নিষ্পত্তি হয় না। তারিখ পড়লেই আইনজীবীকে দিতে হচ্ছে ৫ হাজার করে টাকা। টাকা জোগাড় করতে নিঃস্ব হয়ে যায় ছেলেটির পরিবার। তাদের আইনজীবী একবার জানালেন, মেয়েটির জবানবন্দী আসামির পক্ষে। মামলাটি তদন্ত পর্যায়েই শেষ হয়ে যাবে। এক সাথে ৫০ হাজার টাকা দিলে তিনি নিজেই মামলাটি শেষ করে দেবেন। এ টাকা দিতে পারছে না ছেলেটির পরিবার। এখন মাস মাস চলছে হাজিরা। হাজিরা প্রতি আইনজীবীকে দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। এভাবে ওই আইনজীবী ইতিমধ্যেই দরিদ্র পরিবারটির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ৫০ হাজার টাকারও বেশি। মিথ্যা মামলায় পরিবারটি এখন সর্বশান্ত। মামলা দায়ের, তদন্ত এবং বিচার ব্যবস্থার বিদ্যমান বাস্তবতায় এমন হাজারও দৃষ্টান্ত টানা সম্ভব। কিন্তু নানা বাস্তবতায় বিচারপ্রার্থীর এ অধিকার যেন ভুলুন্ঠিত, ব্যাঘাতগ্রস্ত। আদালতগুলোতে বিচারপ্রার্থী মানুষের দীর্ঘ লাইন। বৈরী পরিস্থিতিতেও যেন এ লাইন কমছে না। জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থার (জিআইজেড)র তথ্য অনুযায়ী, মামলা জটে বিপর্যস্ত বিচারাঙ্গন। আপিল এবং হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলা ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪টি। নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৬টি। গেলো বছর নতুন মামলা দায়ের হয় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪টি। বিপরীতে মামলা নিষ্পত্তি হয় ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৩১টি। প্রতিদিন এ সংখ্যা বাড়ছেই।
সংস্থাটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ লোকের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১০ জন বিচারক। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ১০৭জন। কানাডায় ৭৫জন। ব্রিটেনে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১, ভারতে ১৮ জন বিচারক। মামলা এবং বিচারকের এ অনুপাত দিন দিন বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েই চলেছে। বাড়ছে হয়রানি, অপরিমেয় অর্থ ব্যয়। শিকার হচ্ছেন প্রতারণা, জাল-জালিয়াতিসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনার।
সর্বশেষ গত ১০ জুন হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ আবু হেনা মোস্তফা কামাল নামক একজন আইনজীবীকে জালিয়াতির দায়ে কারণ দর্শায়। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয় তার পাঁচ মক্কেলের জামিন। খুলনার টিপু শেখ হত্যা মামলায় গত ১৮ মে তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের জামিন করান। হাইকোর্ট কথিত জামিন প্রাপ্ত পাঁচ ব্যক্তি লুৎফর শেখ, সোহাগ শেখ, জুয়েল শেখ, সেলিম শেখ ও আব্দুল্লাহ মোল্লাকে ফের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এসব জামিন জালিয়াতির সঙ্গে আইনজীবীদের পাশাপাশি আদালত কর্মচারিরাও জড়িত।
২০১৫ সালে বিচারকের জাল স্বাক্ষরে ভুয়া জামিননামা তৈরি করে শতাধিক দাগী আসামিকে আদালত থেকে জামিনে ছাড় করিয়ে নেয়া হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেখতে পায় এর সঙ্গে আদালতের পেশকার,উমেদার ও পিয়ন জড়িত।
মামলার নথি দেখা, হাজিরা দেয়া, ওকালতনামায় সই করা, জামিননামা দেয়া, জামিনের শুনানি করা, মামলার নকল তোলাসহ মামলা সংক্রান্ত যেকোনো কাজে ‘বকশিশ’ বা ‘খরচাপাতি’র নামে বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি পয়সা। এ ক্ষেত্রে কম এগিয়ে নন এক শ্রেণির আইনজীবী এবং তাদের সহায়কগণ। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ আইনজীবীই সাধারণ একটি ‘যুক্তি’ দাঁড় করিয়ে নিয়েছেন। সেটি হচ্ছে-আইনজীবীরা চাকরি করেন না। মক্কেলরা টাকা না দিলে তারা চলবেন কি করে? আদালত পাড়ায় রয়েছে টাউট, প্রতারকদের উৎপাতও। আইনজীবী, কখনোবা মানবাধিকার কর্মী, কখনো বা ‘জজ সাহেবের ঘনিষ্ট লোক’ পরিচয়ে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে তারা হাতিয়ে নেয় অর্থকড়ি। অথচ এ বিষয়ে বিচারিক ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী কোনো সার্ভিলেন্স সিস্টেম নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।