Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২০, ১২:০২ এএম

দেশের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিনই সংক্রমণের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যুর হারও বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে গত এক সপ্তাহে সর্বেচ্চসংখ্যক নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, এমন শীর্ষ ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ এবং আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে ১৯ তম। এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দেশে করোনা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শুরু থেকেই করোনা প্রতিরোধে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা শোনা গেলেও করোনা মোকাবিলায় তা অপর্যাপ্তই রয়ে গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়া, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিদারুণ অবহেলার চিত্রের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগীর মৃত্যুবরণের মর্মভেদী চিত্র প্রায় প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টিতেই আইসিইউ ব্যবস্থা নেই। অথচ যেকোনো হাসপাতালে জটিল রোগীর জন্য আইসিইউ থাকা অপরিহার্য। জেলা পর্যায়ের প্রায় অর্ধেক হাসপাতালে এই গুরুত্বপূর্ণ সেবাটি না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আইসিইউবিহীন হাসপাতালকে ফুসফুসবিহীন মানুষের সাথে তুলনা করা যায়। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্নেই আইসিইউ থাকার বিষয়টি অত্যন্ত সাধারণ একটি বিষয়। অথচ দেশের প্রায় অর্ধেক হাসপাতালে এ ব্যবস্থা নেই। এ না থাকার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কতটা দুর্বল তা প্রকাশিত হয়েছে। করোনা হানা না দিলে হয়তো এ চিত্র কোনো দিনই প্রকাশিত হতো না। এতদিন এ ধরনের রোগের প্রার্দুভাব দেখা না দেয়ায় আইসিইউ’র খুব একটা প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি। তবে যে কোনো মুহূর্তে যে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, এ বাস্তবতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বলা বাহুল্য, জেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা বরাবরই উপেক্ষিত। বাধ্য হয়ে, গ্রাম-গঞ্জের অনেক মানুষকে উন্নত চিকিৎসার আশায় রাজধানীমুখী হতে দেখা যায়। এই করোনাকালে তা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রাজধানীর চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও শোচনীয়। সেখানের হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে অনেক করোনা রোগী মৃত্যুবরণ করছে। লন্ডনী শহরখ্যাত সিলেটেও স্বাস্থ্যব্যবস্থার অবস্থা তথৈবচ। দেখা যাচ্ছে, এসব জেলায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হচ্ছে। এমনিতেই ঢাকার হাসপাতালগুলোতে করোনার পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। অসুস্থ অনেক রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটোছুটি করতে হচ্ছে। বিনা চিকিৎসায় অনেককে রাস্তায়ই মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। একদিকে হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলার অভিযোগ, অন্যদিকে ক্রিটিক্যাল রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত আইসিইউ, ভেন্টিলেশন সিস্টেমের অভাব, তাদের ধুঁকেধুঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্যখাতে প্রতিবছরই হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই অর্থ কোথায়, কীভাবে ব্যয় হচ্ছে, তার কোনো হদিস থাকে না। এ খাতে জবাবদিহিতার কোনো বালাই নেই। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির কথা বলা হলেও, তার চিত্র কতটা বেহাল, তা করোনার সংক্রমণ না হলে অজানাই থেকে যেত। সাম্প্রতিক সময়ে এ খাতে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির চিত্র বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম স্বাস্থ্যখাত নিয়ে এমন তুঘলোকি কান্ড বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই।
প্রতি বছর স্বাস্থ্যখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এ খাতের উন্নতি যে তিমিরেই পড়ে আছে, তা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অনেক মানুষ উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় পার্শ্ববর্তী দেশে কেন ছুটে যায়, তা করোনাকালে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থার দৈন্যদশা বলে দিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার হলে এতদিনে এ খাতটি যথেষ্ট উন্নতি লাভ করত। আমরা মনে করি, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানো দরকার। প্রতিটি জেলা-উপজেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাসেবার বেসিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, ভেন্টিলেশন সিস্টেম থেকে শুরু করে একজন রোগীর চিকিৎসায় যা প্রয়োজন, তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থাপন ও সচল করতে হবে। এ খাতে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনা

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন