পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার তিনমাস পর চীনের অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশে এসেছে। ইতোমধ্যে করোনা মহামারীতে বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। তবে চীনের ১০ সদস্যের চিকিৎসকদলই হচ্ছে বাংলাদেশে আসা প্রথম কোনো বিদেশি মেডিকেল টিম। বাংলাদেশে করোনা মহামারী শুরুতেই চীন নানাভাবে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। ইতিমধ্যে সরকারি পর্যায়ে লাখ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক, হাজার হাজার টেস্টকিট, পিপিইসহ জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জামের চালান চীন থেকে পাঠানো হয়েছে। চীনা সরকারের সহযোগিতা ছাড়াও চীনা প্রযুক্তি কোম্পানী আলীবাবা ও জ্যাক ম্যার পক্ষ থেকেও করোনা মোকাবিলায় সাহায্য এসেছে বলে জানা যায়। এখন করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের ডাক্তার ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরাসরি সহযোগিতা করতে চীনা বিশেষজ্ঞ টিমের ঢাকা আগমন অত্যন্ত ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদল স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, চীনা এ টিমের কাছ থেকে দেশের চিকিৎসকরা উৎসাহ পাবেন, সেই সাথে করোনা রোগীরাও সাহস পাবেন। চীনের এই বিশেষজ্ঞ দলের সাথে চীনের ওহানে সফলভাবে করোনা মহামারী নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত অন্তত ৫ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন। তাদের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা কাজে লাগাতে পারলে আমাদের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা মহামারী মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে চীনের মতই সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।
কোভিড-১৯ মহামারী একটি ভয়াবহ বৈশ্বিক দুর্যোগ। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো এখনো এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। চীনই একমাত্র পরাশক্তি যারা নিজস্ব কৌশল, দক্ষতা ও সক্ষমতার উপর ভর করে করোনা মহামারী সফলভাবে মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। ইতালিতে মহামারী চরম আকার ধারণ করার সময় চীনা বিশেষজ্ঞ দল সেখানে গিয়ে করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জরুরী চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানো ছাড়াও চীনের দেখানো লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা অনুসরণ করে করোনা মহামারী মোকাবিলায় সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় নানা ক্ষেত্রে চীনের আন্তরিক সহযোগিতা এবং ইতিবাচক উদ্যোগ সংকট উত্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। করোনা ভাইরাস মহামারী নিয়ন্ত্রণ, করোনা পরবর্তী সম্ভাব্য বিনিয়োগ ও আর্থিক সংকট ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে চীনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকায় চীনা প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন বিশেষভাবে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীনের আন্তরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা ও অগ্রগতির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও কূটনৈতিক দক্ষতার উপর দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। করোনা মহামারীর উত্তুঙ্গ সময়ে চীনা বিশেষজ্ঞ দলের ঢাকা আগমন এবং চীনের সাথে নানা ক্ষেত্রে আন্তরিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের দক্ষ নেতৃত্বের জন্য আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক আঞ্চলিক – আন্তর্জাতিক সংকট ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। বিশ্বের ২ শতাধিক দেশ ও অঞ্চল যখন করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত তখন চীনা বিশেষজ্ঞ টিম বাংলাদেশে আসার মধ্য দিয়ে নিবিড় ও আস্থাপূর্ণ বন্ধুত্বের বার্তা বহন করে। করোনা মহামারী মোকাবিলা থেকে শুরু করে, করোনা পরবর্তি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রোহিঙ্গা সংকট স্থায়ী সমাধানের মূল চাবিকাঠি চীনের হাতে। এ ক্ষেত্রে চীন বাংলাদেশের সাথে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রধানমন্ত্রী শি জিন পিং মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে এসব ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত দেশে চলমান মেগা প্রকল্পসমুহে চীনা অংশীদারিত্ব এবং করোনা পরবর্তী সম্ভাব্য মন্দায় চীনা বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবে বলে আমরা আশাবদী। চলমান বিশ্ববাস্তবতায় চীনের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সাথে পাল্লা দেয়ার মত কোনো পরাশক্তি নেই বললেই চলে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চেয়েও চীনের বিনিয়োগ সক্ষমতা বেশি। এহেন বাস্তবতায় বাংলাদেশের সাথে চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের উন্নয়নের মাধ্যমে আগামীর সব সংকট মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, এই প্রত্যাশা আমাদের। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ ও যোগাযোগ সক্ষমতা নিশ্চিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক উদ্যোগ থাকা বাঞ্চনীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।