মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের অনুগত বাহিনী দেশটির কেন্দ্র এবং দক্ষিণে যুদ্ধবাজ বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের শক্ত ঘাঁটি দখল করে নেয়ার পরে লিবিয়ার সশস্ত্র সংঘাতের নতুন পর্ব শুরু করেছে।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, সাম্প্রতিক সপ্তাহের লড়াইয়ে পশ্চিম লিবিয়ায় বহু সামরিক সুযোগ-সুবিধা, স্থাপণা এবং শহরগুলো হাত বদল হওয়ায় কমপক্ষে ১৬ হাজার বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির আদি শহর সির্তে এবং জুফারার প্রত্যন্ত বিমানবন্দর অবধি, যেখানে রাশিয়ানরা এক ডজন যুদ্ধ বিমান এবং ক্রেমলিন-সংযুক্ত ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে যোদ্ধাদের নিয়োগ করেছে।
লিবিয়ার এই সংঘাতে তুরস্ক সমর্থিত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যাশনাল অ্যাকর্ড সরকারের (জিএনএ) বিরুদ্ধে সিআইএ’র সাবেক সহযোগী হাফতারকে সহযোগিতা করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, সউদী আরব, রাশিয়া এবং ফ্রান্স।
লিবিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ঔপনিবেশিক সম্পদ এবং পশ্চিম ইউরোপের বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। তবে পশ্চিমাদের কৌশলগত এক ধাক্কায় তেল সমৃদ্ধ উত্তর আফ্রিকার দেশটির ৬০ লাখ মানুষের ভবিষ্যত তুরস্ক ও রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই দুই দেশই এখন লিবিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী খেলোয়াড়।
এ বিষয়ে ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অফ ফ্লোরেন্সের লিবিয়ার বিশেষজ্ঞ ভার্জিনি কলম্বিয়ার বলেন, ‘আমরা এখন এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি যেখানে মস্কো এবং আঙ্কারা উভয়ই মনে করে যে তাদের আরও গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ভূমিকা নেয়ার নতুন সুযোগ রয়েছে।’
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পশ্চিম লিবিয়া দখল করতে হাফতারের ১৪ মাসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা তাদের প্রভাব বজায় রাখার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করছে।
শনিবার, বিষন্ন হাফতারকে তার পৃষ্ঠপোষক মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং আরেক বিদ্রোহী আগুইলা সালেহর সাথে দেখা যায়। সালেহ পূর্ব লিবিয়ার দীর্ঘ-পার্শ্ববর্তী সংসদের প্রধান। তারা একটি সমঝোতায় আসার জন্য একত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে লিবিয়ার সমস্ত বাহিনীকে হাফতারের কাছে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। এই প্রস্তাবটি আরব দেশসমূহ এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো সমর্থন করলেও জিএনএ এবং তুরস্ক উড়িয়ে দিয়েছে।
রোববার অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে যে, জিএনএ বাহিনী সির্তের মাটিতে চুমু খাচ্ছে, এবং জুফরাহ পৌঁছেছে, যেখানে হাফতারের বাহিনীকে পিছু হটতে দেখা গেছে। ফুটেজে দেখা গেছে, মিশরের এম১২এ আব্রাম ট্যাঙ্ক এবং এমআই-২৫ ভিএম যুদ্ধ হেলিকপ্টার লিবিয়ার সীমান্তের দিকে যাচ্ছে। এর ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, কায়রো হাফতারের পক্ষে এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবে।
এমন পরিস্থিতিতে জিএনএ গত বছর গুপ্তচর হিসাবে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার হওয়া ওয়াগনার গ্রুপের রাশিয়ান নাগরিক ম্যাক্সিম শুগালি এবং সমীর সিফানের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করেছে। এ ঘটনায় জিএনএ প্রধানমন্ত্রী ফয়েজ আল সররাজের সাথে মস্কোর কর্মকর্তারা সাক্ষাত করতে চান। এই বৈঠক হঠাৎ করেই ডাকা হয়েছিল। কারণ, সির্তে ও জুফরাহ উভয় জায়গাতেই রাশিয়ার নিযুক্ত সেনা বাহিনী রয়েছে।
এ বিষয়ে ইউরোপীয় বিদেশ বিষয়ক কাউন্সিলের লিবিয়ার বিশেষজ্ঞ তারেক মেগেরিসি বলেছেন, ‘শুক্রবারের শেষ থেকে তুর্কি ও জিএনএ এবং রাশিয়ার মধ্যে তাদের জুফরাতে যাওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে মতবিরোধ ছিল।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়ানরা সেখানে নিয়ন্ত্রণ রেখা তৈরি করেছিল এবং তা তুরস্ককে জানিয়েছিল।’
বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মস্কো একটি নাজুক ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করছে, ন্যাটোকে দুর্বল করার আশায় তুরস্কের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে এবং পাশাপাশি, তার অস্ত্র ক্রয়কারী হাফতারপন্থী আরব দেশগুলোকেও খুশি রাখছে। রাশিয়ার সাবেক কূটনীতিক ভ্লাদিমির ফ্রোলভ বলেছেন, ‘পূর্ব লিবিয়াকে পরাভূত করা উচিত নয় এবং তুরস্ক পুরোপুরি সামরিক বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হবে না, যেমন রাশিয়া ও আসাদ ইদলিবের সমস্ত জায়গা দখল করতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার মিশর ও আমিরাতিদের সমর্থন করা দরকার যাতে তাদের ব্যবসার ক্ষতি না হয়।’
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ক্লোডিয়া গাজিনি বলেন, ‘এখন হাফতার সমর্থকরা বলছেন যে তারা শান্তি আলোচনা চান এবং তারপরে এমন সব শর্ত দিচ্ছেন যা মেনে নেয়া অপর পক্ষের জন্য খুবই কঠিন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি রয়েছে বলে মনে হয়, তবে স্থলভাগের বিষয়গুলো দেখে আবার তা মনে হয়না। লিবিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের মধ্যে আলোচনার যৌক্তিকতা রয়েছে বলে মনে হয়, তবে তাদের সবারই নিজস্ব ভুল ধারণা রয়েছে।’
ইতোমধ্যে জিএনএ দক্ষিণের শারারা তেলের কূপগুলো চালু করেছে। এগুলো ত্রিপোলির সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে শ্বাসরোধ করার জন্য ও আন্তঃসমর্পণে বাধ্য করার জন্য হাফতারের মিলিশিয়া বন্ধ রেখেছিল। রাশিয়ানরা তাদের সমর্থন প্রত্যাহারের পর হাফতারের বাহিনী তুর্কি সমর্থিত বাহীনির সামনে কোন প্রতিরোধই গড়তে পারেনি।
তবে রাশিয়ার কৌশলবিদরা জোর দিয়েছিলেন যে, লিবিয়া কখনও মস্কোর মূল আগ্রহ ছিল না, এবং হাফতার সবসময়ই নিষ্পত্তিযোগ্য মিত্র হয়ে পড়েছিলেন। রাশিয়ার নীতি নির্ধারকদের ঘনিষ্ঠ বিবেচিত আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফায়োডর লুকিয়ানভ বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে হাফতার সামরিকভাবে জিততে পারবে না, এবং তার ইতিমধ্যে যা আছে তা হারাতে পারে।’ তিনি বলেন, লিবিয়া কখনও রাশিয়ার কাছে সিরিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। রাশিয়ার খুব ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। সরকারীভাবেও, রাশিয়া লিবিয়ার সাথে জড়িত নয়। সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।