Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামের রীতিতে সালামের বিধান

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোঃ সামছুন নূর আল মুজাদ্দাদী

সালাম আরবী শব্দ, পুরো শব্দ আস্সালামু আলাইকুম, যার শাব্দিক অর্থ শান্তি বর্ষণ হউক অর্থাৎ একজন মোমেন আর একজন মোমেনকে দোয়া করা। সালাম বিনিময়ে ছোট বড়কে অথবা বড় ছোটকে সালাম দিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ের একটি ঘটা সংক্ষেপে বর্ণনা করা যেতে পারে। ঘটনাটি নি¤œরূপ:
“একদিন হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.) কোথাও যেতে ছিলেন, পথে হযরত আলী বিন্ আবু তালেব (রা,)-এর সাথে দেখা হয়। হযরত আলী (রা.)-ই প্রথম হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.)-কে সালাম দেওয়ার কথা কিন্তু হযরত আলী (রা.) তা করেনি, ঠিক এ মুহূর্তে হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.)-ই হযরত আলী (রা.)-কে সালাম দিলেন। ঘটনাক্রমে এ সংবাদ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট পৌঁছে গেল। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী (রা.) থেকে এই বিষয়ে জানতে চান, প্রত্যুত্তরে হযরত আলী (রা.) বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আপনি এরশাদ করেছিলেন “যিনি আগে সালাম প্রদান করবেন বেশি সওয়াব তারই প্রাপ্য।” সে ক্ষেত্রে আমার ইচ্ছে হয়েছিল তিনিই (হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.) বেশি সওয়াবের অধিকারী হউন।” ইহা ছিল হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.)-এর প্রতি হযরত আলী (রা.)-এর একটি ত্যাগ। এ কথা সব মোমিন মুসলমান এর বেলাই প্রযোজ্য অর্থাৎ যিনি আগে সালাম দিবেন তিনিই সওয়াব পাবেন।
সালামের উপকারিতা অনেক, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য: সালাম বিনিময়ে পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়, শত্রুতা লোপ পায়, পরস্পরের প্রতি হিংসাত্মকবোধ কমে, অধিক আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়, নেক আমল বৃদ্ধি পায়, পরিচিতি বাড়ে, আল্লাহপাক সন্তুষ্ট হন। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “একদিন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে একটি জামায়াতে বসেছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি ঐ মজলিস অতিক্রম করার সময় বললেন “আস্সালামু আলাইকুম” হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমালেন এ ব্যক্তি ১০টি নেকি, অতঃপর আর এক ব্যক্তি অনরূপ ঐ মজলিস অতিক্রম করার সময় বললেন “আস্সালামু আলাইকুম ও রাহমুতুল্লাহি” হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান এ ব্যক্তি ২০ নেকি, অতঃপর অনুরূপভাবে আর এক ব্যক্তি মজলিস অতিক্রম করার সময় বললেন, “আস্সালামু আলাইকুম ওয় রাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু” হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান এ ব্যক্তি ৩০ নেকি” তারগিব তারহিব (সংক্ষিপ্ত)। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ফরমালেন যিনি প্রথমে সালাম দিবেন তিনিই সওয়াবের অধিকারী হবেন কিন্তু যাকে সালাম প্রদান করা হবে তিনি ঠিক মত সালামের উত্তর না দিলে গুনাগার হবেন। সালাম দেয়া সুন্নত, উত্তর দেয়া ওয়াজেব এবং উত্তর দেয়া না হলে ঐ ব্যক্তির চেয়ে যারা উত্তম (ফেরেস্তাগণ) এর উত্তর দিবেন। প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী পরস্পর পরস্পরের সহিত সালাম বিনিময় করবে। আর সালাম প্রদানকারী যেটুকু শব্দ উচ্চারণ করবেন, সালাম গ্রহণকারী তার চেয়ে একটু বেশী শব্দে উত্তর দেয়া উত্তম যেমন কেউ যদি বলেন, “আস্সালামু আলাইকুম” তবে সালাম গ্রহণকারী বলবেন, ওয়ালাইকুম আস্সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি আর যদি কেউ বলেন, “আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি তবে সালাম গ্রহণকারী বলবেন ওয়ালাইকুম আস্সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
যদি কোন অমুসলিম কোন মুসলমানকে আস্সালামু আলাইকুম বলে সালাম প্রদান করেন তবে মুসলমান ব্যক্তি শুধু “ওয়াআলাইকুম” বলবেন। যদি একাধিক ব্যক্তি কোথায়ও একসাথে অবস্থান করে যেখানে কোন অমুসলিম ব্যক্তি থাকে তবে আগন্তুক ব্যক্তি এভাবে সালাম দিবেন “আস্সালামু আলা মানিততাবা আল হুদা অর্থাৎ যিনি হেদায়েত প্রাপ্ত তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হউক”। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ফরমান, ঘরে প্রবেশকালে সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে, যদিও তা নিজ ঘর কিংবা পরের ঘর অথবা খালি ঘর হয়। কোন কবরস্থান অতিক্রম করার সময়ও কবরবাসীর প্রতি সালাম দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। সেখানে সালাম হবে, “আস্সালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুরি, মিনাল মুসইলিমিনাল ওয়াল মুসলিমাত ওয়াল মোমিনিনা ওয়াল মোমিনাত”।
সালাম বিনিময়ের কিছু নিয়মকানুন: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনিময়ের ব্যাপারে এরশাদ করেন কম ব্যক্তি বেশী ব্যক্তিকে সালাম দিবেন, কোন আগন্তুক অবস্থানরত ব্যক্তিকে সালাম দিবে, দাঁড়ানো লোক বসা ব্যক্তিকে সালাম দিবে, হাঁটারত ব্যক্তি দাঁড়ানো অথবা বসা ব্যক্তিকে সালাম দিবে, বাহনের ব্যক্তি হাঁটা/দাঁড়ানো অথবা বসা ব্যক্তিকে সালাম দিবে। এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে যদি কোন স্কুল, মাদ্রাসা, মক্তব কিংবা কলেজ শিক্ষক ক্লাসে পড়াতে যান সেখানে ছাত্ররাই বেশি সংখ্যক এবং তারাই অবস্থানরত, সে হিসেবে শিক্ষকই ছাত্রদেরকে সালাম দেওয়ার কথা কিন্তু বাস্তবে বিপরীত দিক অর্থাৎ ছাত্ররাই দাঁড়িয়ে শিক্ষককে সালাম দেন যা নিয়ম বহির্ভূত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবন। মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন “সালাম আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের পবিত্র নাম সমূহের মধ্যে একটি নাম যা আল্লাহ পাক এ জমিনে রেখেছেন সুতরাং তোমরা এই পবিত্র নামটি পরস্পরের মধ্যে ছড়ায়ে দাও।” আল হাদিস (তারগিব তারহিব)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামের রীতিতে সালামের বিধান
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ