পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। এ পর্যন্ত শুধু গার্মেন্টস খাতের রফতানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে প্রায় সোয়া তিনশ’ কোটি ডলার সমপরিমাণ। রফতানি চাহিদা না থাকায় কারখানার কাজ কমে যাওয়ায় পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বিপাকে আছেন। আর উপায় না পেয়ে প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে লোক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বে বড় বড় নামি-দামী প্রতিষ্ঠানে লোক ছাঁটাইয়ের চিত্র উঠে এসেছে। তবে ইউরোপের দেশগুলোতে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সেখানে পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। তারপরও অর্ডার বাতিল হওয়ায় পোশাক কারখানার কাজও ৫৫ শতাংশ কমেছে। যদিও স্থগিত হওয়া রফতানি আদেশের ২৬ শতাংশ ফেরত এসেছে। তবে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে অনেক ছাড় চাচ্ছে ক্রেতারা। কেউ কেউ ছয় মাস কিংবা বছরও সময় চাচ্ছে, আবার কেউ চাচ্ছে ডিসকাউন্ট। করোনার কারণে বাংলাদেশের অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানি ধাক্কা খাবে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা।
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ৬ জুন পর্যন্ত দেশের সব শিল্প খাত মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মসংস্থান হারানোর তথ্য পেয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। এর মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক পোশাক খাতের। মূলত কারখানাগুলো উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারার পাশাপাশি কাজের ঘাটতিতে কর্মসংস্থান হারাতে যাচ্ছেন খাতটির প্রচুর শ্রমিক। পোশাক খাতের উদ্যোক্তা প্রতিনিধিদের দাবি, কারখানা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি টিকে থাকতে ব্যয় সঙ্কোচনের তাগিদে শ্রমিক ছাঁটাইয়ে বাধ্য হচ্ছেন কারখানা মালিকরা। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলছেন, এ প্রেক্ষাপটে পোশাক খাতের ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ২০ শতাংশ বা আট লাখ শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে যেতে পারেন।
এ বিষয়ে সরকারের দ্রæত হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বাজেটে এই খাতের জন্য পৃথকভাবে কিছু করা যায় কিনা তা ভাবতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা অন্তত আগামী ২ বছরের জন্য রাখা দরকার। একই সঙ্গে বাইরের ক্রেতাদের অর্ডার কমে গেলে শ্রমিকদের বেতন দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কারখানা বন্ধ হলেও শ্রমিকদের কথা বিবেচনায় রাখা দরকার। তাদের মতে, শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেবে। তখন শ্রমিকরা রাজপথে নামবে। তারা সব কিছু অচল করে দিতে চাইবে। তখন সামাল দেয়া কঠিন হবে। তাই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কঠিন পথে না হেটে পোশাকশিল্প মালিকদের উচিত বিকল্প উপায় বের করা। এক্ষেত্রে তারা সরকারের সহায়তা ও পরামর্শ নিতে পারেন।
আসন্ন বাজেটে গার্মেন্টস খাতের জন্য বিশেষ কিছু থাকছে কিনা এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজেট সংশ্লিষ্ট ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তা বলেন, গার্মেন্টস খাতে আগামী ৫ বছরের জন্য করপোরেট ট্যাক্স গ্রীন ফ্যাক্টরীর জন্য ১০ শতাংশ এবং সাধারণ ফ্যাক্টরীর জন্য ১২ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে। তবে এটি ৫ বছরের জন্য না হলেও অন্তত ২ বছরের জন্য রাখা হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ইনকিলাবকে বলেন, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজেরা আয় করে শ্রমিকদের বেতন জোগাতে হয়। বাইরে থেকে রফতানি আদেশ যেহেতু কমে গেছে, তাই কারখানার কাজের পরিমাণও কমে গেছে। ফলে সামনে এত বেশি শ্রমিকেরও প্রয়োজন হবে না। ইতোমধ্যে সরকার সাহায্য দিয়েছে। মালিকরা শ্রমিকদের বেতনও দিয়েছে। তাই সামনে হয়েতা বসিয়ে বসিয়ে শ্রমিকদের বেতন দেয়া মালিকদের পক্ষে সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, এমন দূরাবস্থার সময় আমার মতামত হচ্ছে- এই মুহূর্তে একেবারে শ্রমিক ছাঁটাই না করে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ বেতন দেয়ার ব্যবস্থা করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন আবার তাদের কাজে যোগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন মন্দা মোকাবেলায় শিল্প-কারখানাগুলো ব্যয় সঙ্কোচনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আবার উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত কাজও নেই কারখানাগুলোয়। এ কারণে ধীরে ধীরে বাড়ছে শ্রমিক ছঁাঁটাইয়ের ঘটনা। বর্তমানে কারখানাগুলো সাকল্যে উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছে। অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে বাকি অর্ধেক। এরই ধারাবাহিকতায় অদূর ভবিষ্যতে আরো শ্রমিক ছাঁটাই হবে বলে মনে করছেন শিল্প মালিক প্রতিনিধিরা। অনেক ক্ষেত্রেই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে কারখানা টিকিয়ে রাখার তাগিদে আইনানুগ পদ্ধতিতেই এ ছাঁটাইয়ের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে দাবি করছেন তারা।
নিটওয়্যার খাতের কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, কোনো কারখানাই সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারছে না। ৩৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা সচল রেখেছে এমন ঘটনাও আছে। বড় কারখানাগুলোও ৬০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে শ্রমিক ছাঁটাই হবেই। তিনি বলেন, এরই মধ্যে যা হয়েছে তাসহ চলমান পরিস্থিতিতে ৪০ লাখ শ্রমিকের অন্তত ২০ শতাংশ কাজ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছি।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, পোশাক কারখানায় বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। কিছু ক্রয়াদেশ ক্রেতারা আবার দেবেন বলে জানিয়েছেন। এর পরও ৯৯ শতাংশ কারখানাকে ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে চালাতে হবে। ম্যাকেঞ্জির তথ্য বলছে, বিশ্বে কনজাম্পশন কমবে ৬৫ শতাংশ। কনজাম্পশন যদি ৬৫ শতাংশ কমে, তাহলে আমরাও আশা করতে পারি না, পোশাকের চাহিদা বাড়বে। জুনে আমরা ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে আছি, জুলাইয়ে কী হবে আমরা জানি না, বুঝতেই পারছি এক ধরনের ধাক্কা আমাদের সামলাতে হবে।
শ্রমিক ছাঁটাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাঁটাই একটি অনাকাঙ্খিত বাস্তবতা। কিন্তু করার কিছু নেই। কারণ ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে কারখানা চললে আমাদের কাছে ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কিন্তু এ ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের জন্য কী করা হবে সে বিষয়ে সরকারের কাছে বিনীতভাবে আবেদন, আমরা কীভাবে একসঙ্গে এ সঙ্কট অতিক্রম করতে পারব? কীভাবে এ সঙ্কট মোকাবিলা করা যায়- এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। তবে এটিও ঠিক, যদি হঠাৎ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়, তাহলে এ শ্রমিকরাই আমাদের অগ্রাধিকারে থাকবেন। অন্তত এটি আমাদের চেষ্টা থাকবে।
বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, পুনরায় আলোচনার পর স্থগিত হওয়া রফতানি আদেশের ২৬ শতাংশ ফেরত এসেছে। তবে অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে অনেক ছাড় চাচ্ছে ক্রেতারা। কেউ কেউ ছয় মাস কিংবা বছরও সময় চাচ্ছে, আবার কেউ চাচ্ছে ডিসকাউন্ট। তিনি বলেন, করোনার কারণে বাংলাদেশের অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানি ধাক্কা খাবে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। তবে সম্ভাবনাও আছে বলে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে চীনের রফতানি আদেশ কমেছে ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের কমেছে দুই শতাংশ আর ভিয়েতনামের বেড়েছে সাত শতাংশ। করোনার পরীক্ষায় পাস করলে বাংলাদেশের সামনে এখনো সুযোগ রয়েছে।
এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে কারখানা বন্ধের পর জেলাভিত্তিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় ডিআইএফই। মোট ২৩ জেলা থেকে ৬ জুন পর্যন্ত এ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য সংগ্রহ করে ডিআইএফই। তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী। তথ্যমতে, ঢাকা জেলায় মোট ২৬টি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। চট্টগ্রাম এলাকার মোট তিনটি কারখানা থেকে ছাঁটাই হয়েছেন। ডিআইএফই’র তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে গাজীপুর জেলায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইএফই মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় ইনকিলাবকে বলেন, ৬ জুন পর্যন্ত ৬৭ কারখানায় ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৪৯ জন। এ-সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব আগামী ১৫ জুনের পর যে কোন দিন।
অপরদিকে ৭০ হাজারের বেশি শ্রমিক ছাঁটাই করেছে পোশাক কারখানা মালিকরা। এক হাজার ২০০ এর মতো পোশাক কারখানা বোনাস দেয়নি বলে অভিযোগ করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। অবশ্য শ্রমিক ছাঁটাইয়ের এ অভিযোগের বিষয়ে বিজিএমইএ গতকাল বলেছে, শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেননি সভাপতি ড. রুবানা হক বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়ছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা টিকে থাকার লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানার মধ্যে ৩৪৮টি কারখানা বন্ধ হয়েছে শুধুমাত্র গত ২ মাসেই। বাকী আছে আর মাত্র ১৯২৬টি কারখানা। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বাকী কারখানাগুলো হয় একে একে বন্ধ হয়ে যাবে অথবা কম ক্যাপাসিটি’তে (পূর্ণ সামর্থ্য ব্যবহার ছাড়াই) টিকে থাকার চেষ্টা করবে দিন বদলের আশায়। এটাই বর্তমান বিশে^র রূঢ় বাস্তবতা। আমরা সকলেই দেখছি, বিশে^র অন্যান্য দেশগুলোতেও কাজ ও শ্রমিক সংখ্যা বিপুলভাবে কমছে। আমরা শিল্প গড়ি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। এই বাস্তবতা আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্যও নির্মম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।