Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শরণখোলায় দুই মাসে অর্ধশত চুরি

রাত জেগে পাহারা, অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

শরণখোলা (বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০২০, ২:৫০ পিএম

বাগেরহাটের শরণখোলায় গত দুই মাসে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজারে অর্ধশতাধিক চুরি সংগঠিত হয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৩ জুন বুধবার পর্যন্ত চোরেরা সিঁধ কেটে টাকা-পয়সা, সোনাদানা থেকে শুরু করে গৃহস্থের গুরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ভ্যান-ইজিবাইক, সোলার প্যানেল, ব্যাটারী এমনকি ঘেরের মাছ পর্যন্ত লুটে নিচ্ছে। 

চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী রাত জেগে পাহারাও দিচ্ছে। এব্যাপারে পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা না থাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে মানুষের মধ্যে। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলে এসব চুরির খবর জানাগেছে।
তবে, শরণখোলা থানা পুলিশ চুরির বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ। তারা বলছে, দু-একটি ছিঁচকে চুরির ঘটনা ঘটলেও এনিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনা।
জানাগেছে, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের পশ্চিম রাজৈর গ্রামে বুধবার (৩ জুন) একরাতে পাঁচ বাড়িতে সিঁধ কেটে চোরেরা স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। রাত তিনটার দিকে ইউনুচ মোল্লার ঘরে সিঁধ কেটে তার স্ত্রীর গলায় থাকা পাঁচ আনা ওজনের সোনার চেইন ও ১০হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। একই রাতে আলামিন হাওলাদারের ১০ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন, শামিম হাওলাদারের আট হাজার টাকার মোবাইল ফোন, জাহাঙ্গীর আলম বাচ্চুর বাড়ির জানালার পাশে থাকা ১৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। ওই রাতে দুলাল শিকদারের ঘরে সিঁধ কাটার সময় লোকজন টের পাওয়ায় চোরেরা পালিয়ে যায়।
ধানসাগর ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ বাধাল গ্রামে মঙ্গলবার (২জুন) রাতে বিপুল হালদারের ৭০ হাজার টাকা দামের অটোভ্যান নিয়ে যায়। এর আগে হানিফ সরদারের বাড়িতে সিঁধ কেটে ১০হাজার টাকা ও একজোড়া স্বর্ণের কানের দুল, বাশার সরদারের ৩৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের রাতে মোস্তফা হাওলাদারের অটোভ্যান ও আলতাফের ইজিবাইকের ব্যাটারী নিয়ে যায় চোরেরা।

ঈদের আগের দিন ২৪ মে রাতে রাজাপুর বাজারে সালাম সরদারের কাপড়ের দোকানের শার্টার ভেঙে টাকা-পয়সা ও কাপড়সহ তিন লাখ টাকার মালামাল এবং রেজাউলের দোকানের তালা ভেঙে ৫০হাজার টাকার মালামাল লুটে নেয়। একই রাতে রায়েন্দা ইউনিয়নের খাদা গ্রামের নূরুল ইসলাম হাওলাদার ও মাসুম হাওলাদারের বাড়িতে সিঁধ কেটে স্বর্ণালঙ্কারসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোর।

গত ৩০ মে রাতে সংঘবদ্ধ একটি চোরের দল মঠেরপাড় গ্রামে আ. রশিদ আকন, সিদ্দিক হাওলাদার, মুক্তা তালুকদার এবং নলবুনিয়া গ্রামের আনিস খার বাড়িতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে মালামাল লুটের চেষ্টা চালায়। এসময় ঘরের লোকজন টের পাওয়ায় চোরেরা পালিয়ে যায়।
২১মে রাতে নলবুনিয়া হিন্দুপাড়ায় শাহজাহান আকনের বাড়িতে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকতে না পেরে তার গোয়ালে থাকা দুটি গরু নিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে ধাওয়া করলে মাঠের মধ্যে গরু ছেড়ে দিয়ে পালায় চোরেরা। ওই রাতে সাউথখালী ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রাম থেকে সোহরাব মল্লিকের ৬০ হাজার টাকার দামের একটি গরু নিয়ে যায়।

এছাড়া সম্প্রতি ধানসাগরের হোগলপাতি গ্রামে ফারুক মোল্লার পুকুরের ৫০হাজার টাকার মাছ এবং হুমায়ুন কবিরর ঘেরের দেড় লাখ টাকার মাছ ধরে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভিক্ষুক বিধবা বেগম মোল্লার ঘরের সোলার প্যানেল-ব্যাটারী চুরি করে নিয়ে যায়। আমড়াগাছিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অজিৎ কির্তনিয়ার বাড়িতে সিঁধ কেটে জমির দলিলসহ ২৫হজার টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এছাড়া, মজিবর মাতুব্বর, ইব্রাহীম ও শামছুর রহমানের ইজিবাইকের ব্যাটারী খুলে নিয়ে যায়। যার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা। খোন্তাকাটার রাজৈর গ্রামে ছাত্রলীগ নেতা আসাদ হাওলাদারের বাড়িতে সিঁধ কেটে দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণাঙ্কারসহ প্রায় ৫লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোরেরা।
একমাস আগে ধানসাগর ইউনিয়নের ছইলাবুনিয়া গ্রামের শশধর ওঝার বাড়িতে সিঁধ কেটে জমির কাগজপত্র, আনোয়ার খান ও হাশেম হাওলাদারের তিন লাখ টাকা দামের দুটি ইজিবাইক, হোগলপাতি গ্রামের সেলিম শেখের ৫০ হাজার টাকা দামের ইজিবাইকের ব্যাটারী, কিশোর হালদারের ৮০ হাজার টাকা দামের একটি ও কালিবাড়ি গ্রামের মাসুম হাওলাদারের দুই লাখ টাকা দামের ৪টি গরু, পূর্ব রাজাপুর গ্রামের রহিম হাওলাদারের ৪০ হাজার টাকা দামের একটি গরু, ধানসাগর গ্রামের আজিজ হাওলাদার, বিমল মন্ডল, বাওড় গ্রামের ডালিমের ইজিবাইক ও সোলার ব্যাটারী, রাজাপুর গ্রামের শিক্ষক সন্তোষ হালদারের বাড়ি সিঁধ কেটে ৫০হাজার টাকাসহ দেড় লাখ টাকার মালামাল, পান্না লাল মৈত্রের দুই লাখ টাকার, শুকুমার শিকদারের এক লাখ টাকার, হোগলপাতি ফরাজী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ভেঙে সোলার প্যানেল, ব্যাটারী, বাচ্চাদের চারু-কারু সরঞ্জামসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল এবং রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা গ্রামের কবির হাওলাদারের একটি অটোভ্যান নিয়ে যায় চোরেরা।
এছাড়া, সাউথখালী ইউনিয়নের রায়েন্দা-তাফালবাড়ী গ্রামে রফিকুল হাওলাদারের বাড়িতে সিঁধ কেটে স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল, উত্তর সাউথখালী গ্রামে দুলাল খান, হাকিম খান ও আমির হাওলাদারের বাড়ি থেকে মোবাইলসহ মালামাল নিয়ে যায়। ওই গ্রামের মানুষ চুরি ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাইফুল হালিম শাহ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে চুরি হওয়া বাড়ি-ঘরের গৃহকর্তারা জানান, থানায় মামলা করে কোন লাভ হবে না। বরং নিজেদের হয়রানির শিকার হতে হবে। এ কারনে কেউ থানায় অভিযোগ করেনা।

জানতে চাইলে শরণখোলা থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, চুরির বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। ছোটখাটো দু-একটি চুরির খবর শুনেছি। মাদকসহ এসব অপরাদপ্রবনতা ঠেকাতে শিগ্রই এলাকাভিত্তিক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চুরি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ