পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। তারপর ২ মাস ২৩ দিন, অর্থাৎ ৮৩ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এই ২ মাস ৮৩ দিনের আক্রান্তের সংখ্যা ৩ থেকে ৪৪ হাজার ৬০৮ এ উন্নীত হয়েছে। এই ৮৩ দিনে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ৬১০ জন। (এগুলো শনিবারের পরিসংখ্যান)। এর মধ্যে আরো তিন দিন পার হয়েছে। এই তিন দিনে আক্রান্তের সংখ্যা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরও ৫০ বেড়েছে বলে ধারণা করা যায়। প্রতিদিন মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ভয় আর আতঙ্কে মানুষ অস্থির। প্রতিটি পরিবারে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। এই বুঝি করোনা তার ঘরে হানা দেয়। এমন পরিস্থিতিতেও যে মানুষ মাফিয়া বা ডনদের মতো ভয়ঙ্কর ক্রাইম করতে পারে সেটি আমাদের কল্পনাতেও আসে না। কিন্তু ঐ যে মহাকবি শেকসপিয়ার বলে গেছেন, Truth
is stranger than fiction, বাংলাদেশে বাস্তবেও ঘটছে তাই। আর ক্রাইম থ্রিলারের মতো লোম হর্ষক ঘটনা করোনার বিভীষিকাময় সময়েও ঘটেছে। সেটাও ঘটেছে ৫০০ (পাচঁ শত) কোটি টাকার ঋণ দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে।
ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ছাপা হয়েছে। পরদিন এ সম্পর্কে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। একই ঘটনা অনুসন্ধানী রিপোর্ট হিসাবে একটি জাতীয় দৈনিকেও ছাপা হয়েছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর ফেরৎ দেন না, সেটি সকলের জানা। পত্রপত্রিকাতেই অনেকবার রিপোর্ট বেরিয়েছে যে, খেলাপী ঋণের পরিমাণ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফ’র হিসেবে এই অঙ্ক আরও বেশি। ঋণ খেলাপীদের লক্ষ কোটি টাকা আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তেমন বড়সড় চাপ সৃষ্টি করেছেন বলেও মিডিয়াতে কোনো রিপোর্ট চোখে পড়েনি।
অতীতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে খেয়েছে লুটেরা। সেই লুটপাট হয়েছে জাল-জুয়াচুরি করে। সেই জালিয়াতির সাথে হয়তো বিগ বসদের কোলাবরেশন ছিলো। কিন্তু এবার যেটা ঘটেছে সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রহস্য উপাখ্যান। সেখানে আছে গুলি, আছে নির্যাতন।
দুই
ধনাঢ্য গোষ্ঠি বলে পরিচিত শিকদার গ্রুপ। বিস্তর টাকা পয়সা তাদের। তাদের রয়েছে এভিয়েশন কোম্পানী। সেই কোম্পানীতে রয়েছে দুইটি অ্যারোপ্লেন এবং ৯টি হেলিকপ্টার (উড়োজাহাজ ও কপ্টারের সংখ্যা কম বেশি হতে পারে) সেই শিকদার গ্রুপ এক্সিম ব্যাংকের কাছে ৫০০ (পাঁচ শত) কোটি টাকা ঋণের জন্য দরখাস্ত করে। ৫০০ শত কোটি টাকা ঋণ লাভের জন্য তারা যে কোলাটেরাল সিকিউরিটি দেন, সেটি ছিল খুব তুচ্ছ। এই সিকিউরিটি বা বন্ধকী সম্পত্তি তদন্ত করার জন্য সেখানে যান এক্সিম ব্যাংকের এমডি এবং ডিমএডি। এত বিশাল অংকের লোনের বিনিময়ে ঐ সিকিউরিটি ঋণ প্রদানের শর্ত পূরণ করে না বলে তাদের ঋণ আবেদন মঞ্জুর করতে এক্সিম ব্যাংকের এমডি এবং ডিএমডি অপারগ হন। ফলে শিকদার গ্রুপের দুই পরিচালক রিক হক এবং রনো হক ক্ষিপ্ত হন। উল্লেখ্য, রিক হক এবং রনো হক দুই ভাই। তারা এমডি ও ডিএমডির গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করেন। কিন্তু গুলিটি মিস হয়। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক, ঐ দুই ভাই অতঃপর এমডি এবং ডিএমডিকে অপহরণ করেন এবং তাদের ওপর শারিরীক নির্যাতন করেন। হত্যার হুমকি দিয়ে একটি সাদা কাগজে ব্যাংকের অফিসারদেরকে জোর করে সই করতে বাধ্য করেন। এরপর ব্যাংকের তরফ থেকে শিকদার ভাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
তিন
এর পর যা হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। আইন তার নিজস্ব গতিতে অগ্রসর হয়নি। শিকাদর ভাতৃদ্বয় গ্রেফতার হননি। আইন যদি তার নিজস্ব গতিতে অগ্রসর হতো তাহলে শিকদার গ্রুপের ঐ দুই ভাই গ্রেফতার হতেন। তারপর মামলা তার নিজস্ব গতিতে চলতো। মামলা হওয়ার পর আইন আদালতের মাননীয় বিচারপতিরা বিচার করতেন যে, তাদেরকে জামিন দেওয়া যায় কিনা। যদি জামিন দেওয়াও হতো তাহলে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতো, তারা যেন দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারেন।
কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই হলো না। দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করল যে, মামলা দায়েরের ৬ দিনের মধ্যেও তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি। বরং শিকাদর গ্রুপ নিজেদের এভিয়েশন কোম্পানীর একটি হেলিকপ্টারকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন পার হন এবং বিমান বন্দরে মোতায়েন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নামক হেলিকপ্টারটিতে চড়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক চলে যান। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক, হেলিকপ্টারটি শিকদার গ্রুপের দুই ভাইকে নামিয়ে দিয়ে রাতে ঢাকা ফিরে আসে।
এ ব্যাপারে আমরা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। গুলি, অপহরণ এবং নির্যাতন-এমন গুরুতর অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করার পর শিকদার গ্রুপের দুই ভাই কেমন করে রোগী সেজে দেশ ছেড়ে পালালেন, সেটি এই করোনাকালেও সচেতন মহলে সবচেয়ে বড় আলোচনায় বিষয়। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অন্যতম পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার কিছু করার ছিলো না। কারণ ঐ দুই যাত্রীর অসুস্থতার কাগজপত্র তাদের সাথে ছিলো। যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের নিজস্ব হেলিকপ্টার কেমন করে ব্যাংককে নামার অনুমতি পেলো এবং ঐ দুই ভাই কীভাবে থাইল্যান্ডের ভিসা পেলেন, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তার নলেজে নেই। তবে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু বলেনি। বিমান বন্দরের কর্তব্যরত অফিসার বলেন যে, তাদেরকে দেশ ত্যাগে বিরত রাখার জন্য তারা ঊর্ধ্বতন মহলের কোনো নির্দেশ পাননি।
আমরা আর এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে আমরা আশা করি যে, এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হবে। ফিরে যাচ্ছি করোনা পরিস্থিতিতে। লেখার শুরুতে শনিবারের পরিসংখ্যান দিয়েছিলাম। রবিবার সরকারের স্বাস্থ্য বুলেটিনে দেখলাম, পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। রবিবার নতুন পরীক্ষা, নতুন সংক্রমণ এবং নতুন মৃত্যু- সব কিছুই সর্বোচ্চ। নতুন পরীক্ষা হয়েছে ১১ হাজার ৮৭৬, নতুন আক্রান্ত ২ হাজার ৫৪৫ জন। মোট মৃত্যু ৪০ জন। মোট সংক্রমণ ৪৭ হাজার ১৫৩ জন। মোট মৃত্যু ৬৫০ জন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র মে মাসের শেষ সপ্তাহেই সংক্রমণ ও মৃত্যু হু হু করে বেড়ে চলেছে। অথচ বাংলাদেশে করোনা আক্রমণের ৩ মাস বা ৯০ দিন পুরো হতে আর মাত্র ৬ দিন বাকী। যখন করোনার সবকটি সূচকই দারুণভাবে ঊর্ধ্বমুখী, ঠিক তখনই লকডাউন বা শাটডাউন বলতে গেলে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলো। একমাত্র সরকারি মহল ছাড়া অন্য কোনো মহল অর্থাৎ প্রাইভেট বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং সুধী সমাজের কাছে, হঠাৎ করে শিথিলের নামে লকডাউন প্রায় উঠিয়ে নেওয়া কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, যিনি একজন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত, সেই ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, সরকারের কথা ও কাজে কোনো মিল নাই। একটির সাথে আরেকটি সাংঘর্ষিক। ৮ বিশেষজ্ঞ সম্বলিত যে পরামর্শক কমিটি সরকার গঠন করেছেন তার চেয়ারম্যান হলেন বাংলাদেশ মেডিকেল ও দন্ত চিকিৎসক কাউন্সিলের সভাপতি ডা. শহিদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব হলেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। একটি সরকারি কমিটি হওয়া সত্তে¡ও সেই কমিটি সব কিছু খুলে দেওয়ার শুধু বিরোধিতাই করেনি, প্রয়োজনে কারফিউ জারি করারও সুপারিশ করেছেন। কারফিউ দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ডা. আব্দুল্লাহ। করোনা যখন বাংলাদেশে পিক পিরিয়ডের দিকে যাচ্ছে, অথবা পিক পিরিয়ডে অবস্থান করছে তখন বাস, লঞ্চ, রেলগাড়ী, বিমান, সরকারি ও বেসরকারি অফিস, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দোকানপাট খুলে দেওয়ার পরিণাম ভয়াবহ হবে বলে সব মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
চার
এতসব হতাশার মধ্যেও সুড়ঙ্গের ঐ পারে আশার ক্ষীণ আভাস দেখা যাচ্ছে। বিশিষ্ট শিল্পপতি, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক চেয়ারম্যান এবং চ্যানেল-২৪ ও সমকালের মালিক এ কে আজাদের করোনা হয়েছিলো। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি প্লাজমা থেরাপী নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দুইবার প্লাজমা থেরাপী নিয়ে এখন চাঙ্গা বোধ করছেন। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয় দুটি ওষুধের ওপর গবেষণা সম্পন্ন করেছে। ঔষুধ দুটির নাম হলো ইভারমেকটিন এবং ডক্সিসাইক্লিন। প্রথমটি অ্যান্টি প্রোটোজোয়াল গ্রুপের এবং দ্বিতীয়টি অ্যান্টিবায়োটিক। বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের বক্ষব্যাধি বিষেশজ্ঞ প্রফেসর ডা. তারেক আলম ও তাঁর সহযোগী চিকিৎসক অধ্যাপক ড. রুবাইয়ুল মোরশেদ আলোচ্য ওষুধ দুটির মিশ্রণ করে একাধিক রোগীকে খেতে দিয়েছিলেন। তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে বলা হয়েছে। এই মিশ্রণ অফিসিয়ালি প্রেসক্রাইব করার জন্য নাকি বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে করোনা শনাক্তের জন্য গণস্বাস্থ্য যে এন্টিজেন ও এন্টিবডি টেস্টের কিট ওষুধ প্রশাসনকে দিয়েছিলেন সেটি তাদের এবং বিএসএমইউ’র হিমাগারে পড়ে আছে। নিজের ওপর প্রয়োগ করে ডা. জাফরুল্লাহ প্রমাণ করেছেন যে তাদের উদ্ভাবিত কিট কার্যকর।
এসবের পটভূমিকায় বিদগ্ধ মহল মনে করেন যে, দেশে অবিলম্বে প্লাজমা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হোক, প্রফেসর তারেক আলমের দুই ওষুধের মিশ্রণ প্রেসক্রাইব করার অনুমতি দেওয়া হোক এবং গণস্বাস্থ্যের কিট দিয়ে করোনা শনাক্তের অনুমতি দেওয়া হোক।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।