পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে প্রতি বছরই বাড়ছে সাইক্লোন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বজ্রপাতসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের পূর্ব প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা একবারেই অপ্রতুল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। যে সুন্দরবন নিজের বুক পেতে দিয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করছে তাকে বাঁচানোর কোন উদ্যোগ নেই। উল্টো সুন্দরবনকে ধ্বংসের নানা কার্যক্রম চলছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষার জন্য যে বেড়ি বাঁধ রয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণে কোন নজর নেই। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে গত ১২ বছরে দুটি সুপার সাইক্লোনসহ ১৩টি সাইক্লোন আঘাত হেনেছে। অতীতে এতটা ঘনঘন এরকম দুর্যোগ ঘটেনি।
পরিবেশ বিপর্যয় ও প্রকৃতির বৈরিতায় বজ্রপাত নতুন দুর্যোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে। এ দুর্যোগে এ বছর মারা গেছে ১৭০ জন। গত সাত বছরে দেশে শুধু বজ্রপাতেই মারা গেছেন ১ হাজার ৭৬০ জন। গত বছর বিশ্বখ্যাত নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোথাও তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের পরিমাণ ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। গত ৩০ বছরে বিশ্বের তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ১ ডিগ্রি বেড়ে গেছে, এ কারণে বজ্রপাতও বাড়ছে।
ঝড় জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করে বেড়িবাঁধ। দেশের ২১ হাজার কিলোমিটারের বেশি বেড়িবাঁধ সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণে কোন পরিকল্পনা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জনবল সঙ্কট। এর মনিটরিং খুবই দুর্বল। সিডর ও আইলায় যে সব বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ছিল তা ঠিকমতো মেরামত করা হয়নি। এতে আম্পানেও বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আম্পান আঘাত হানা উপক‚লীয় এলাকার বাঁধগুলো ৬০ বছরের অধিক পুরানো, ২০ বছর আগেই বাঁধের মেয়াদ পেরিয়েছে। এগুলো সময়োপযোগী ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে করা হয়নি। বাঁধ রক্ষার জন্য তার সামনে যে বনাঞ্চল সৃষ্টির প্রয়োজন তাও করা হয়নি। অন্যদিকে বাঁধের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল, বাঁধ কেটে চিংড়ির ঘেরে লোনাপানি ঢোকানো এবং সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিবারই একই সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রায় ১৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। আমাদের উপকূলীয় বাঁধের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১২ ফুট। তাই বাঁধের উচ্চতাও এখন ১৮ ফুট করতে হবে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরণ ও মাত্রা দুটোই পাল্টে গেছে। বাংলাদেশে আগে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সময় ছিল এপ্রিল ও নভেম্বর মাস। কিন্তু এখন মে মাসে ঘূর্ণিঝড় বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগ ধরে ঘূর্ণিঝড়গুলো এই মে মাসে অঘাত হেনেছে। সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাসের বাইরে এখন বজ্রপাতও আমাদের দেশে বড় দুর্যোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে। প্রতিবছরই বজ্রপাতে শত শত লোক মারা যাচ্ছে। এছাড়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিও বাড়ছে।
সুন্দরবন বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের প্রাণ। গত কয়েক বছর আইলা, সিডর এবং আম্পানের মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে মায়ের মতো নিজের বুক পেতে দিয়ে সুন্দরবন বাংলাদেশকে রক্ষা করেছে। অথচ এই সুন্দরবনকে রক্ষার কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেই। এক শ্রেণির অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সুন্দরবনের গাছ কেটে উজার করা হচ্ছে। উন্নয়ন পরিকল্পনার নামে সুন্দরবনের চারপাশে গড়ে তোলা হচ্ছে ধ্বংসকারী বিভিন্ন প্রকল্প।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, সুন্দরবন দেশের উপক‚লকে মায়ের মতো বুক দিয়ে আগলে রেখেছে। এ সুন্দরবন ধ্বংস হলে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনকে ঠেলে দিচ্ছে পরিষ্কার হুমকির মুখে। এছাড়া আরো বহু প্রকল্প এবং ইটভাটা সুন্দরবনের আশপাশে গড়ে উঠছে যা এর ক্ষতি করছে প্রতিনিয়ত। সুন্দরবনকে রক্ষা করা না গেলে এদেশও সুরক্ষিত থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।