Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জীবিত বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে চালের তালিকা থেকে নাম বাদে তদন্ত শুরু, পাবেন বাড়িও

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০২০, ৪:৪৭ পিএম

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ১০ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় থাকা অসহায় দুঃস্থ নারী আতরজানকে (৯০) মৃত দেখিয়ে ইউপি সদস্যের চাল উত্তোলনের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলার ১০ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় থাকা অসহায় দুঃস্থ মহিলাকে মৃত দেখিয়ে স্বজনের নাম প্রতিস্থাপন করে চাল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে স্বজনের নাম তালিকাভূক্ত করায় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের শাস্তি দাবী করেছে এলাকাবাসী।

জানা যায়, ২০১৬ সালে সারা দেশের ন্যায় দৌলতপুর উপজেলার ১০নং দৌলতপুর ইউনিয়নে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির তালিকা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তৈরী করা হয়। এবং উক্ত তালিকা অনুযায়ী বছরে ৫ বার ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল ১৯৩ জন পরিবারের মধ্যে দেওয়া হয়। সেই তালিকায় দৌলতখালী গ্রামের স্বামী সন্তান হারা অসহায় বৃদ্ধা আতরজান (৯০) স্বামী: ইসারত এর নাম ১০১ নম্বর কার্ডধারী হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। কার্ড অনুযায়ী তাকে নিয়মিত চালও দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে চলতি মে মাসে দৌলতপুর ইউনিয়নের অর্ন্তভূক্ত নতুন সুবিধাভোগীদের নামের তালিকায় আতরজান কে মৃত দেখিয়ে ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মুক্তার হোসেন এর স্বজন আমিরুল, পিতা আয়তাল এর নাম প্রতিস্থাপিত করে তাকে চাল দেওয়া হয়েছে।

এব্যাপারে অত্র ইউনিয়নের চাউলের ডিলার মোজাম্মেল হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর নিয়মিত চাল পেলেও হঠাৎ করে মে মাসে আতরজান কে মৃত দেখিয়ে তার নামের স্থলে ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মুক্তার হোসেন তার স্বজন আমিরুল, পিতা আয়তাল এর নাম প্রতিস্থাপন করেছেন। এবং সে অনুযায়ী মে মাসের ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে তাকে। এতে করে অসহায় আতরজান চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরোও জানিয়েছেন, আতরজান খাতুনের স্বামী সন্তান কেউ নাই। রাস্তার উপর ঝুপড়িতে যার বসবাস তার নামটি কেটে অন্য একজনের নাম বসানোর ব্যাপারটা আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে জানিয়েছি। এছাড়া আমার কিছুই করার নেই তিনিই বিষয়টা দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

নাম কেটে দেওয়ার ব্যাপারে বৃদ্ধা আতরজান ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলেন, চাল নিতে গেলে আমি মরে গেছি বলে আমাকে চাল না দিয়ে অন্য জনকে চাল দিয়েছে বলে তিনি কেঁদে ফেলেন।

ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্ম মৃত্যুর সনদ স্বাক্ষর করেন ইউপি চেয়ারম্যান এবং তার রেকর্ড ইউপি কার্যালয়ে সংরক্ষিত থাকে। তাই এর দায় ইউপি চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না।এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহি জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা যে আতরজানকে মৃত দেখিয়ে তার নাম বাদ দিয়ে অন্য জনের নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যেহেতু আতরজান জীবিত সেহেতু পুনরায় তার নাম যাতে করে তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা হয় সে ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তিনি আরও জানান, বিষয়টি নজরে আসার পর আতরজানকে দেখতে গেছেন এবং প্রাথমিকভাবে কিছু খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ঐ বৃদ্ধার বাড়ি তৈরীর জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবং খাদ্য সহায়তা ও তার উপকারভোগী কার্ডটি যাতে তিনি ফেরত পান সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর ইউপি সদস্য সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তদন্ত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ