গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে উপসর্গ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের এক কর্মকর্তা মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসিবুর রহমান নামের এ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ।
তিনি বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে ভোরে মারা গেছেন। করোনার টেস্টে করতে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনতা ব্যাংকের এডমিন শাখায় এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন হাসিবুর রহমান। মৃত্যুকালে এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান তিনি। হাসিবুর রহামানের গ্রামের বাড়ি মাকিগঞ্জ জেলার বালিয়াটি উপজেলায়। জনতা ব্যাংকে ২০০৯ কর্মজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েরল ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের এডমিন শাখায় কিছুদিন আগে আরেক কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই এডমিন শাখা ১৪ দিন লকডাউন করা হয়। ওই কর্মকর্তার পাশেই বসতেন হাসিব। গত সপ্তাহে সামান্য জ্বর জ্বর অনুভব করেন। গত রোববার থেকে লক্ষণগুলো তীব্র হতে থাকে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে পুরান ঢাকার বাসায় তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। রাত বারোটার জ্বর ডায়রিয়া শ্বাসকষ্ট তীব্র হয়। পরে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয় এবং ভোরে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান তিনি। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ছেলেটি ক্লাস ওয়ানে এবং মেয়েটির ক্লাস থ্রিতে পড়ছেন।
লোকাল অফিসার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোবারক হোসেন বলেন, তার বিভাগের এক কর্মকর্তার করোনা ধরা পড়ে। নিয়মানুযায়ী বিভাগটি লকডাউন ছিল। কিন্তু এতদিন পর হাসিব কিভাবে আক্রান্ত হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি না। তার করোনার পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছে কিন্তু রেজাল্ট পাওয়া যায় নি। তবে করনার সবগুলো লক্ষণ তার শরীরে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেন। তার মত কর্মঠ ব্যাংকারের অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা সব জানাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছেন ৫৫ জন ব্যাংক কর্মী। আর মারা গেছেন চারজন ব্যাংকার। তবে জনতা ব্যাংকের এ কর্মকর্তার কোভিড-১৯ পজেটিভ আসলে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াবে পাঁচে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাসে সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৩০ কর্মকর্তা। এর পরই রয়েছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের ১০ জন। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের ৩ জন, রূপালী ব্যাংকের ৩ জন , সাউথইস্ট ব্যাংকের ৩ জন, সিটি ব্যাংকের ২ জন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২ জন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১ জন ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১ জন। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫৫ জন ব্যাংক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। আক্রান্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে মৃত্যু বরণ করেছেন ৪ জন। এর মধ্যে রয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ১ জন, রূপালী ব্যাংকের ১ জন ও দি সিটি ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা।
মৃতদের মধ্যে গত ১৭ মে রাত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) মাহবুব এলাহী কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে মারা যান। এর আগে ১৫ মে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সহিদুল ইসলাম খান রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। এর আগে দ্য সিটি ব্যাংকের আরও দুজন মারা যান। তাদের মধ্যে গত মঙ্গলবার (১২ মে) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবু সাঈদ নামের এক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়। তিনি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সেন্ট্রাল ক্লিয়ারিং বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আগে ২৬ এপ্রিল ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগের মুজতবা শাহরিয়ার নামের এক কর্মকর্তা মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর বাইরে করোনা লক্ষণ নিয়ে চট্টগ্রামের আরও ২ ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।