পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উপকূলে প্রবল আঘাত করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত ও এর আগে-পরে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস ছোবল হেনেছে। স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে সর্বনিম্ন ৫/৭ ফুট থেকে স্থানভেদে ১০/১৫ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়। উত্তাল সাগরের লোনা পানিতে ভাসছে দক্ষিণ-পূর্বে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমের বিস্তীর্ণ চর-উপকূল-দ্বীপাঞ্চল।
উপক‚লবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, বিশেষজ্ঞদের তাগিদ সত্তে¡ও মজবুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়নি আজও। উপক‚লব্যাপী ভাঙাচোরা বেড়িবাঁধই এখন আপদ। ৪৫ ভাগ স্থানে বাঁধের চিহ্ন মুছে গেছে। প্রায় ৬০ ভাগ বাঁধই নড়বড়ে। জোড়াতালি মেরামত সংস্কারের নেপথ্যে বছর বছর চলছে নয়-ছয় দুর্নীতি, শুভঙ্করের ফাঁকি।
এ অবস্থায় অরক্ষিত উপক‚লবাসীর জীবন-জীবিকা। বেড়িবাঁধ সঙ্কটেই গতকালের জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার বসতঘর সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক বিধ্বস্ত এবং ডুবে গেছে। তাৎক্ষণিক গৃহহীন অসংখ্য মানুষ খোলা আকাশের নিচে। ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। ভেসে গেছে অসংখ্য মাছের ঘের-খামার। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাতের একই সময়ে অমাবস্যার সক্রিয় প্রভাব যোগ হয়েই জলোচ্ছ্বাস মারাত্মক রূপ ধারণ করে। ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’র সতর্কতায় জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহের সুরক্ষায় মংলা-পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ দক্ষিণে দশ নম্বর এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসহ এই অঞ্চলে ঘোষিত নয় নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে আরো অগ্রসর হয়ে গতকাল (বুধবার) বিকেল সাড়ে ৪ টায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, দীঘা-সাগরদ্বীপের পূর্ব পাশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় এটি পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলীয় সুন্দরবন এলাকা অতিক্রম এবং এরপরই বাংলাদেশের দিকে ঝড়ের প্রথম আঘাত শুরু করে। রাত ৮ টার পরই ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশটি সুন্দরবন-সাতক্ষীরা-খুলনা হয়ে আছড়ে পড়ে বাংলাদেশের ভূখন্ডে প্রবেশ করে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল দিয়ে।
এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে হাজার হাজার বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপক। প্রচুর গাছপালা উপড়ে গেছে। অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভেঙে পড়েছে। গত তিন দিনে তিন দফায় গতিপথ বদল এবং ঝড়ের আঘাতের আগে-পরে প্রবল বর্ষণের কারণে ‘আমফান’র জোর কমলো। তবে ঘূর্ণিঝড়টি আকারে বৃহৎ হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বেশি জেলার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ সময় ধরেই তান্ডব চালায়।
ঘূর্ণিঝড়টির ব্যাস প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার। এটি পুরোপুরি স্থলভাবে উঠে আসতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এর সক্রিয় প্রভাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দমকা থেকে ঝেেড়া হাওয়ার সঙ্গে ভারী বর্ষণ হতে পারে। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করে করেই অগ্রসর হচ্ছিল। ‘আমফান’র কবল থেকে জানমাল রক্ষায় আশ্রয়কেন্দ্রের সন্ধানে দিনভর ছোটাছুটি, নানা অব্যবস্থাপনা আর জনদুর্ভোগ ছিল সীমাহীন। লাখ লাখ মানুষের বিনিদ্র দুই রাত দুঃস্বপ্নের মতোই কাটছে করোনা মহামারীর দুঃসহ পরিস্থিতি এবং মাহে রমজানে পবিত্র লাইলাতুল কদরের সময়টিতে। ধর্মপ্রাণ মানুষজন আল্লাহর দরবারে আকুল ফরিয়াদ করছেন শান্তি, বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য।
উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানকালে ‘আমফান’ গতিপথ পরিবর্তন করেছে বারবার। বদলেছে আগের গতিপথ খুলনা-চট্টগ্রামের মধ্য উপক‚ল। ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ বাংলাদেশ উপক‚লের কাছাকাছি এগিয়ে আসায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আগাম প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকালে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং এর সংলগ্ন দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ঘোষণা করে আবহাওয়া বিভাগ।
এর কিছুক্ষণ পরই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখানো হয়। মহাবিপদ সঙ্কেত বহাল রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ উপকূলে আঘাতের একই সময়ে অমাবস্যার সক্রিয় প্রভাব থাকায় স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস ছোবল হানার সতর্কতা বহাল রেখেছে আবহাওয়া বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট উপক‚লীয় এলাকার জনগণের জানমাল সুরক্ষায় এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে স্থানান্তরের লক্ষ্যে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন। জেলা-উপজেলা মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী, কোস্ট গার্ড, র্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, রেডক্রিসেন্ট ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকগণ বিভিন্ন এলাকায় তৎপর হন।
সর্বশেষ গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী ‘আমফান’র আগের তুলনায় শক্তি কমে যায়। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তবে এই গতিবেগও আরও কমতে পারে পুরোপুরি উপক‚লে আছড়ে পড়লে। তখন গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় স্থানভেদে ১৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১৬০।
ঘূর্ণিঝড়টির আঘাত কমবেশি পড়তে পারে সাতক্ষীরা, খুলনা-বরিশাল অঞ্চলের একাংশ হয়ে বৃহত্তর নোয়াখালীর বিশেষত হাতিয়া দ্বীপাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমে যশোর, ঝিনাইদহ, মধ্যাঞ্চলে পাবনা, রাহশাহী, ময়মনসিংহ, উত্তরের জনপদ রংপুর ছাড়াও মধ্যবর্তী বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে। ‘আমফান’ দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের উপক‚লে এবং বিভিন্ন স্থানে তান্ডব চালাচ্ছে। এ সময় জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাই ব্যাপক।
ঘূর্ণিঝড় জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা-
ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতা-
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত¡র নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ প্রভাবে তাপমাত্রা কমতির দিকে। ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী সময়ে দেশের অধিকাংশ বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির আভাস দেয়া হয়েছে।
এদিকে সাড়ে ৪ কোটি চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলবাসীর জীবনধারণে অনিশ্চয়তা, দুর্ভোগের মূল কারণ সমুদ্র উপকূলভাগ সুরক্ষায় অপরিহার্য বেড়িবাঁধে অবহেলা। সবখানেই ক্ষতবিক্ষত, নড়বড়ে ও বিধ্বস্ত অবস্থায় টিকে আছে বেড়িবাঁধের নিশানা। উপকূলের অনেক জনপদে বেড়িবাঁধ স্থানীয় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু বাঁধ বিধ্বস্ত, যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন প্রায়। টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-ভোলা-বরিশাল হয়ে খুলনা পর্যন্ত দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় ৭১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখায় বেড়িবাঁধের নাজুকদশা। ভাঙাচোরা বেড়িবাঁধ দিয়ে সাগরের লোনাপানি এপাশ-ওপাশ ঢেউ খেলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।