মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তবে মহিলারা যদি এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদর্শন করে তবে তাদেরকে অ-নারী হিসাবে দেখা হবে বলে মন্তব্য করেন কিং কলেজ লন্ডনের সমাজবিজ্ঞানী অ্যালিস এভান্স, যিনি ‘কীভাবে জনজীবনে নারীরা শক্তি অর্জন করে’ তা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, ‘এটি নেতা হয়ে নারীদের পক্ষে সাফল্য অর্জন করা খুব কঠিন করে তোলে।’
মহামারীর সাথে লড়াইয়ে আর্ডেনের পন্থাটি সেই ঐতিহ্যবাহী আদর্শের চেয়ে বেশি দূর যায়নি। তবে এই নতুন ধরণের সঙ্কটে তার সতর্ক নেতৃত্ব সফল প্রমাণিত হয়েছে। ইভান্স বলেন, ‘আমি বলব যে, অর্থনীতি তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দেয়া একটি ঝুঁকি নিরোধী কৌশল ছিল। কারণ কী ঘটবে তা কেউ জানত না, তাই প্রথমেই আগে প্রান রক্ষা করার কৌশল এটি।’
নিউজিল্যান্ড গত ২৫ মার্চ লকডাউন শুরু করার পর আর্ডেন তার বাচ্চাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে, ফোনে একটি সাধারণ ফেসবুক লাইভ সেশনের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন। ঘরোয়া পোশাক পরিহিত অবস্থাতেই তিনি নাগরিকদের উদ্বেগের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন এবং জরুরি অবস্থার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আদেশে যারা শঙ্কিত হয়ে বা বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন, তাদের উদ্দেশ্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনি কথায় কথায় বলেছিলেন, ‘আপনারা যে জোরালো শব্দ শুনেছেন, তা ছাড়া অন্যকিছুর মাধ্যমে আপনাদের ফোনে এই জরুরি বেসামরিক সতর্কতাগুলো পাঠানোর কোনো উপায় নেই। এটি আসলে আমরা সকলেই আলোচনা করেছি; এমন কোনো উপায় ছিল কি, যাতে আমরা সেই বার্তাটি পাঠাতে পারি যা এতটা উদ্বেগজনক নয়?’
এর উল্টো পিঠে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে এমন একটি শত্রুতে পরিণত করার চেষ্টা করেছেন, যার বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করতে পারেন। তিনি একে ‘চৌকশ শত্রু’ বলে অভিহিত করেছেন। তার কথা তার সামরিক ঘাঁটিকে হয়তো উৎসাহিত করতে পেরেছে, তবে মহামারীটি ঠেকাতে সহায়তা করেনি। এখস পর্যন্ত করোনভাইরাসের কারণে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
ব্রিটেনে বরিস জনসন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে সেরা চুক্তি জয়ের জন্য হার্ডবল খেলার মতো কঠিন লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি রেখে, বিশিষ্ট ব্রেক্সিট সমর্থক হিসেবে ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন। তবে ব্রাসেলসের আমলাদের বিরুদ্ধে তিনি যে দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, তা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর হতে পারেনি। তার সরকার লকডাউন, পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালের সুরক্ষা সরঞ্জাম অর্ডার করা মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপে বিলম্ব করেছিল। ব্রিটেনের মৃতের সংখ্যা এখন বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত রেখেছে ফিনল্যান্ড। বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গত ডিসেম্বরে দেশটিতে নির্বাচিত হয়েছেন সানা মেরিন। নেতৃত্বে আসার পর পরই করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দেশের সব মানুষ সংবাদপত্র না পড়লেও অধিকাংশ মানুষই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকে বলে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অনলাইন ক্যাম্পেইন শুরু করেন তিনি।
দেশের সকল নাগরিকের বিনামূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করেছে আইসল্যান্ড। অধিকাংশ দেশ উপসর্গ দেখা যাওয়ার পর করোনার পরীক্ষা করলেও ব্যতিক্রম আইসল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন ইয়াকোবস্টডিটির নেতৃত্বে দেশটিতে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা জানতে ঝুঁকিতে থাকা সকল মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে দেশটি ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করেছে। অন্যান্য দেশের মতো আইসল্যান্ডে লকডাউন হয়নি, এমনকি স্কুলগুলোও বন্ধ করা হয়নি।
ঘরবন্দী শিশুদের মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে শিশুদের জন্য বিশ্বে প্রথম বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এর্না সোলবার্গ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ওই সংবাদ সম্মেলনে কেবল শিশুরাই ফোন করতে পারবে। সম্মেলনে সারা দেশের শিশুদের সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। আতঙ্কে থাকা শিশুদের অনুপ্রেরণা ও সচেতন করে তুলতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসন এপ্রিলের শুরুতে কোপেনহেগেনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে, করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশ যে মহামারী মোকাবেলা করে চলেছে তাদের তুলনায় আমরা ওই সংকটময় মুহূর্ত পার করতে সক্ষম হয়েছি। ১০ জনের বেশি লোক দলবদ্ধ হয়ে ধরা পড়লে পুলিশকে জরিমানা জারি করার নির্দেশ দেয়া হয়, হ্যান্ড স্যানিটাইজার চুরি করা হলে অভিবাসীদের বহিষ্কার করা হতে পারে কিংবা এ ধরনের অপরাধের জন্য কারাভোগও করতে হতে পারে বলে গত মার্চ মাসে ডেনিশ সরকার একটি আইন পাস করে। এ কঠোর পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ডেনমার্ক ও বিশ্বজুড়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। তবে, এর কারণে প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় এবং প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ তার এ সমর্থন পদক্ষেপ করে।
পুরুষ নেতারা অবশ্যই লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারেন এবং অনেকেই তা পেরেছেন। তবে এটা করা নারীদের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে কম ঝামেলার হতে পারে। কারণ তাদের সতর্ক, প্রতিরক্ষামূলক নীতিগুলি অবলম্বন করার জন্য তথাকথিত লিঙ্গ নীতিগুলির লঙ্ঘন করতে হয় না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল যখন বেড়ে চলেছে, তীব্র আবহাওয়া এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আরো সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবল ঘুর্ণিঝড় এবং বনে আগুন লাগার ভয়টিও ভাইরাসের চেয়ে বেশি আতংকিত করতে পারে না। এবং জলবায়ুও তা পরিবর্তন করতে পারে না। এই সময়ে নেতৃত্বের এই ধরণটি ক্রমশ মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে।
পরিশেষে বিষয়গুলি শক্তিশালী নেতৃত্বের চেহারাটি কেমন, তা উপলব্ধি করার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে দিতে পারে। ডক্টর ইভান্স বলেছিলে, ‘আমরা কোভিড থেকে যা শিখেছি তা হলো, আসলে, ভিন্ন ধরণের নেতা খুব হিতকর হতে পারে।’ তিনি বলেছিলেন, ‘সম্ভবত মানুষ ঝুঁকি প্রতিরোধকারী, যত্মবান এবং চিন্তাশীল নেতাদের চিনতে এবং তাদেরকে মূল্য দিতে শিখে যাবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।