Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এশিয়ায় ইসলামফোবিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মুসলিমের বিরুদ্ধে নির্যাতন চালানোর খবরের প্রেক্ষাপটে এশিয়ায় ইসলামফোবিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ভারত। ক্রমবর্ধমান ইসলামবিরোধী বাগাড়ম্বড়তা, বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধ, মুসলিমদের অধিকার লঙ্ঘন, মহামারী বিস্তারের জন্য তাদেরকে দোষী করা, এবং এখন বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য ছাত্র ও অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা দেশটির গণতান্ত্রিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী দেশগুলো যখন ভাইরাসটি বিস্তার ঠেকাতে বন্দীদের মুক্তি দিচ্ছে, তখন নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেফতার করে কারাগারগুলো ভরছে। ভারতভিত্তিক নিউজক্লিক ওয়েবসাইটের ভাষ্যানুযায়ী, কোভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে ২৫ মার্চ লকডাউন আরোপ করার পর থেকে মুসলিম সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট ও ছাত্রদের বেআইনি কার্যক্রম প্রতিরোধ আইন ইউএপিএর কঠোর ধারার অধীনে আটক করা হচ্ছে। যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন জামিয়া মিল্লিয়ার ছাত্র সফুরা জাফর, মিরন হায়দার, সাইফুর রহমান, জওহের লাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উমর খালিদ দও শারজিল ইমামের মতো ছাত্র। অধিকন্তু কাশ্মিরি সাংবাদিক মাসরাত জাহরা, গৌহার জিলানি, পিরজাদা আশিক, অ্যাক্টিভিস্ট খালিদ দসাইফি, ইসরাত জেহান, গুলিফিশা, কাওয়ালপ্রিত কাউর ও দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান জারাউল ইসলাম খান। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ এনেছে। তাদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, বিদ্বেষ প্রচারের ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মিরের সাংবাদিকেরাও একই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছেন। সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট ও সাংবাদিক হিসেবে নিয়মিত কার্যক্রমের জন্যও তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দিল্লি মাইনোরিটিস কমিশনের প্রধান জাফরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধেও ইউএপিএ-এর অধীনে মামলা করা হয়েছে। ভারতীয় মুসলিমদের পক্ষে কথা বলার জন্য টুইটারে কুয়েত সরকারকে ধন্যবাদ দেয়ায় দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। গত ৬ মে প্রকাশিত বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিলম্বে জারগার, হায়দার, রহমান ও খালিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। গত ২২ এপ্রিল আরেকটি বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি কাশ্মিরি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমনের চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করে। মতপ্রকাশের অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে যারা কারারুদ্ধ হয়েছেন, তাদের মুক্তি দিতেও সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি গ্রুপ, দি ইন্ডিয়ান মুসলিম ফেডারেশন, শ্রী গুরু রবিদাস গ্লােবাল ইক্যুয়াল অর্গ্যানাইজেশনের মতো বিভিন্ন এনজিওও অ্যাক্টিভিস্টদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। ভারতীয় নিউজ ওয়েবসাইট দি ওয়্যার-এর মতে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা ও হুমকি সৃষ্টি করা সত্তে¡ও বিজেপির রাজনীতিবিদ কপিল মিশ্র, পরেশ ভার্মা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং যাদের ওপর আঘাত হানা হয়েছে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুসলিমদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর পিস্তল হাতে হামলাকারী মনিষ সিরোহির বিরুদ্ধে পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তাকে আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে প্রমাণিত হয়, শান্তিমূলক পদক্ষেপ কেবল মুসলিমদের বিরুদ্ধেই। তাবলিগি জামাতের একটি ধর্মীয় সভাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক হামলা চালানো হচ্ছে, সামাজিক দ‚রত্ব বজায় না রাখা ও মহামারী বিস্তার করার জন্য তাদেরকে দায়ী করা হচ্ছে। অনেক স্থানেই মুসলিমদেরকে বাজার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। মূলধারার অনেক টিভি চ্যানেল, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী, লেখক, সাংবাদিক মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছাড়াচ্ছে। ভারতের জাতীয় রাজধানী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ দিন স্থায়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও দেখে। ভারতের অন্যতম ভয়াবহ ওই দাঙ্গায় পুলিশ ও একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ অন্তত ৫১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। এছাড়া নাগরিকত্ব বিরোধী আন্দোলনে ভারতজুড়ে অন্তত ৭৯ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। আনাদুলো এজেন্সি, এসএএম।



 

Show all comments
  • Arif Ul Islam ১৯ মে, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    ভারত উগ্র হিন্দু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না কারণ রাষ্টীয় ভবে সরকার এদের কে মাঠে নামিয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha Jafree ১৯ মে, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    গরুর জাতিরা সবসময় ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Anis Md Anisur Rahman ১৯ মে, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    এশিয়ায় ইসলামফোবিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে গরুর .....ইন্ডিয়া
    Total Reply(0) Reply
  • একটি ফটোগ্রাফ ১৯ মে, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    They are blustered!!
    Total Reply(0) Reply
  • Rajon Ahmed ১৯ মে, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    মোদী ও অমিত সাহার বিকৃত মস্তিষ্কই ভারতীয় গনতন্ত্র কে কলুষিত করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Anisur Rahman ১৯ মে, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    ইসলাম ফোবিয়ার মিথ্যা গুজব ছড়ানোর জন্য আরএসএস, বিজেপি বা ভারতীয় উগ্র ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ যে ই কিংবা সবাই দায়ী হউক না কেন আদতে তা সমগ্র ভারতের জন্য ভয়ংকর ঘৃণা মিশ্রিত বিশাল বারুদের স্তূপ মজুদ করছে যার বিস্ফোরণে ভারতীয় মানবিকতা, অর্থনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সর্বোপরি সভ্যতাকে আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগে নিয়ে যেতে পারে । ভারতে সংখ্যার অনুপাতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হতে পারে, কিন্তু সংখ্যার ভ্যালিউ হিসেবে তা অনেক বিশাল । বিশ্বে মুসলিম সংখ্যাগুরু ইন্দোনেশিয়ার পরে সম্ভবত ভারতে সবচেয়ে বেশি মুসলিমদের বসবাস যা বিশ কোটিরও বেশি । অতএব, এত বড় একটা জাতি সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে, নির্মূল করে বা তাদেরকে বাকি জাতির কাছে মিথ্যা শত্রু বানিয়ে সমগ্র ভারতের গোদে বিষফোঁড়া নিয়ে চলারই নামান্তর । হিটলার এবং আইখম্যানের সর্বোচ্চ ও সম্মিলিত চেষ্টায়ও একটা ক্ষুদ্র ইহুদি জাতিকে সমূলে নির্মূল ( যা বর্তমান কালে আদৌ সম্ভব নয়) করতে পারেনি । আর এত বড় একটা বিশ কোটির মুসলিম জনসংখ্যাকে কেন তারা গায়ে পড়ে অনর্থক শত্রু বানাচ্ছে ??? এটা কোন সভ্য, সুচিন্তিত বা কল্যাণকামী লিডারশিপের কর্ম হতে পারে না । ভারত জন্মলগ্ন থেকেই ডাইভার্সিটির দেশ যা সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে অন্তত ২০১৪ সাল পর্যন্ত স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করতো । কিন্তু তারপর এখন পর্যন্ত যা চলছে তা আরএসএস ও বিজেপি কর্তৃক উগ্র ধর্মীয় জাতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে সংখ্যাগুরু হিন্দু ভোট ব্যাংক নিজেদের পক্ষে ধরে রাখা ও ক্ষমতায় টিকে থাকা ছাড়া আর কারোরই কিছুই কাজে আসছে না । সমস্ত ভারতীয় জনগণের জন্য তা লোকসান আর কলংক ছাড়া আর কিছুই নয় । কারণ ধর্ম মূর্খদের হাতে একটা অস্ত্র হলেও শিক্ষিতদের হাতে তা মারণাস্ত্র হয়ে যায় যা ব্যবহার করে সমস্ত ভারতবাসীকে বোকা বানিয়ে বিজেপি দেশ শাসন করছে । এখন দেখার বিষয় ভারতবাসী কখন সে মোহ থেকে মুক্তি পায় ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ