Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা পরীক্ষা নিয়ে দাঙ্গা, ভারতে সর্বশান্ত কয়েকশ’ মুসলিম

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

মুসলমানরাই করোনা ছড়াচ্ছে বলে হিন্দুত্ববাদিদের সৃষ্ট গুজবের কারণে ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর জেরে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলী জেলার চন্দননগরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে কয়েকশ’ মুসলমানের বাড়িঘর। সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয় শিবিরে জায়গা হয়েছে তাদের।
ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলোর সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। মঙ্গলবার সেটা চরমে পৌঁছায়। দাঙ্গায় মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দুদের বাড়িঘরও পোড়ানো হয়েছে। তবে যেহেতু ওই এলাকায় মুসলিমদের বসতি বেশি, তাই মুসলিমরাই আক্রান্ত হয়েছে বেশি। ঘরের সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ফলে এখন আশ্রয় শিবিরেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের দু’দিন পরে গত বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ১২৯ জনকে তারা গ্রেপ্তার করেছে, আটক করা হয়েছে আরও ২১ জনকে। ওই এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে যাতে কেউ গুজব ছড়িয়ে অশান্তি না বাড়াতে পারে।
চটকল এলাকার কয়েকশো’ ঘর দাঙ্গায় জ্বলে পুড়ে যাওয়ায় বহু মানুষ এখন স্থানীয় স্কুল বা আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আর তার মধ্যেই কেউ কেউ নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে খুঁজে দেখছেন যে কিছু অবশিষ্ট আছে কি না। দাঙ্গা হয়েছে যে এলাকায়, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা আফতাব সুলতানের কয়েকটি ঘর পর থেকেই শুরু হয়েছিল ঘর-বাড়ি পোড়ানো। সেই সব পোড়া ঘরে তিনি গতকাল গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘ঈদগাহ ময়দানের কাছে আমি যেখানে থাকি, তার পাঁচটি বাড়ি ছেড়ে পরপর তিনটি বাড়ি একদম পুড়ে গেছে। সবগুলোই মুসলমানদের ঘর। দিল্লির দাঙ্গায় যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয়েছিল বলে টিভির খবরে দেখেছি, যেমন অ্যাসিড, পেট্রল আর গ্যাস সিলিন্ডার - এখানেও সেই সবের ব্যবহারের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।’
হিন্দু এলাকার মধ্যে যেমন মুসলমানদের ঘর-বাড়ি জ্বলেছে, তেমনই মুসলমান প্রধান এলাকাতে হিন্দুদের ঘরও জ্বলেছে। তবে মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ওই অঞ্চলেরই বাসিন্দা মুহম্মদ আইনুল হক। একটি দোকানে কাজ করতেন, কিন্তু শারীরিক সমস্যার জন্য সাত মাস কোনও রোজগার নেই। বস্তি এলাকা থেকে উঠে এসেছিলেন একটি সস্তার ফ্ল্যাটে - শান্তিতে থাকবেন বলে। কিন্তু সেই ফ্ল্যাট এখন বিধ্বস্ত, আশ্রয় নিয়েছেন মেয়ের বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফ্ল্যাটে পুলিশ ঢোকে বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ। মেইন গেট ভেঙে তারা প্রত্যেকটা ফ্ল্যাটে ঢুকছিল আর বলছিল আপনারা যদি না বেরিয়ে আসেন তাহলে দরজা ভেঙে ঢুকে খুব মারব। তাই করছিল ওরা। তালা ভেঙে যাকে পেয়েছে, তাকে মেরেছে। তারপর ঘরে ঢুকে যা যা জিনিষ ছিল - টিভি, ফ্রিজ, আলমারি সব তছনছ করে ফেলেছে। আবার সব নতুন করে গড়তে হবে আমাকে।’
তার অভিযোগের প্রসঙ্গে চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘কাউকে গ্রেপ্তার করতে গেলে দরজা যদি না খোলা হয়, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশ দরজা ভাঙ্গতেই পারে। তবে তেলেনিপাড়া থেকে ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করেছে পুলিশ, এরকম কোনও অভিযোগ আমি পাই নি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিশ্চয়ই নেব।’
করোনাভাইরাস পরীক্ষা এবং যাদের ফলাফল পজিটিভ এসেছে, তাদের কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে তেলেনিপাড়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। রোববার প্রথম উত্তেজনা তৈরি হলেও পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর থেকে নতুন করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
তেলেনিপাড়া থেকে পাশের ভদ্রেশ্বরেও উত্তেজনা ছড়ায়। এরমধ্যেই মুসলিম প্রধান এলাকাটি ব্যারিকেড করে দেয়া হয়, যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তার পরেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছয় মঙ্গলবার দুপুরে। ব্যাপক বোমাবাজি চলে, দোকান বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ওই অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে যাতে কেউ গুজব ছড়িয়ে অশান্তি না বাড়াতে পারে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Md Emran ১৬ মে, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
    এখন ভারতের মুসলিমদের উচিত বিড়ালের মত না বেচে বাঘের মত বাচার।এভাবে না মরে সুদু একদিন মরেন, তাদের কে জনমের শিখখা দিয়া দেন।যদি আমরা বাংলাদেশিরা আপনাদের এখন সাহায্য করতে পারতাম নিজেদের কে অনেক ধন্য মনে করতে পারতাম।ভারতের হিন্দু এবং পুলিশরা মানুশ নামের কলংক।এখন অত্যাচার করতাছত,মনে রাখ যে দিন সব মুসলিমরা জাগ্রত হবে সে দিন তরা পার পাবি না।আর পরকালে ত তরা বিনা হিসাবে জাহান্নামি।
    Total Reply(0) Reply
  • Saiful Islam Saif ১৬ মে, ২০২০, ১:২৮ এএম says : 0
    বিশ্বের কঠিন মহামারীর এই সময়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে। আমি বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ভারত সরকার ও পশ্চিম বাংলার সরকার কে এই ধরণের ন্যাক্কার জনক ঘটনা শক্ত হাতে দমনের অনুরোধ জানাই, ভাতৃত্ব নষ্টকারীদের কোন ধর্ম নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Abduz Zaher ১৬ মে, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
    ভারতকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া উচিত। আমরা ভারতীয় পন্য বয়কট করতে পারি।
    Total Reply(0) Reply
  • Tushar Ahmad ১৬ মে, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
    আমরা কিছুই করতে পারিনা,নেপাল হুংকার দিতে পারে,সীমান্তে সেনা মােতায়েন করতে পারে; ফেলানির লাশ কাঁটাতারে ঝুলার সময় আমাদের একটা বিবৃতি দিতে আট/নয়দিন লেগেছিল! আমরা বর্তমানে কােনবিষয়ে টু শব্দ করতে পারিনা,আমাদের লেজ কাটা পড়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abul Kalam Ajad ১৬ মে, ২০২০, ১:২৯ এএম says : 0
    এই দেশের নেতা-নেত্রী, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বুলি আওড়ায়, তা আমাদের দেশের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী এখানে প্রয়োগ করে, ধর্ম নিরপেক্ষ নীতি গান এরা সব সময় অস্থির থাকে,
    Total Reply(0) Reply
  • Md Joynal Abedin ১৬ মে, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
    করোনা ও পবিত্র রমজান মাসে মুসলমানদের উপর যারা আক্রমণ করেছে তাদের বিচার আল্লাহ করবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mobin Zihad ১৬ মে, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
    অমানুষদের হাতে যখন নেতৃত্ব যাবে সেই দেশে আর সম্প্রীতি থাকবে না। সব বদমাইশ বাছাই করে করে সরকার গঠন করেছে মোদী সরকার। শান্তির পরিবর্তে দাঙ্গার উস্কানি দিচ্ছে স্বয়ং সরকার। ফলে উগ্র হিন্দু বাহিনী উস্কানি কে শান্তির বাণী মনে করে দাঙ্গা বাড়িয়েই চলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Franklin James ১৬ মে, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
    আল্লাহ এই রমজানের অছিলায় মুসলিমদের রক্ষা করো।
    Total Reply(0) Reply
  • Moshiur Rahman Sumon ১৬ মে, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
    এ আর নতুন কি??? ওরা জাতিগত ভাবেই হিংস্র. মদ্যপ.. আর আমাদের আর্মি অফিসার মিথ্যা বলেন নি..
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Sumon ১৬ মে, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
    উপমহাদেশের মুমিনরা যতোদিন বন্দুরাস্ট্র চিনবে না,ততোদিন এভাবে চলুক।নিরুপায় মুসলমানদের আর্তনাদ দেখে নিজের অপারগ তারুণ্যকে ধীক্কার জানানো ছাডা পারছি না।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Tamim ১৬ মে, ২০২০, ৮:৩৬ এএম says : 0
    বলার ভাসা হারিয়ে ফেলেছি,মোদির গুষ্টি একের পর, এক নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে, এখন বিশ্ব মুসলিম নেতারা এক হয়ে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে। এখন থেকে তাদের বিরুদ্দে সব ধরনে ধরনের ব্যাবস্তা নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৬ মে, ২০২০, ১০:৪৭ এএম says : 0
    Our muslim countries are not united under the banner of Islam, Muslim Government are expert in killing muslim as such Kafirs are killing muslim all over the world. Our only way at least one country come under the rule of Allah [SWT] then we will have a launching pad to protect the right of muslim in muslim land and also in kafir land.
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৬ মে, ২০২০, ১১:০৪ এএম says : 0
    Allah mentioned in the Qur´an that Kafir´s is not friends of Muslim, they are friends of each other. It is extremely frustrating that not a single so called muslim country rule by the Law of Allah, not even those muslim who live in kafir country. Once muslim were Lion now we are worse than cat as such kafir pigs are killing us, raping us, pushing us out from their home land... there is only one solution that we must rule all the muslim country by the law of Allah, then Allah will instill fear among the kafir and they will not even point a finger towards us.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ