পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনাকালে কলকারখানা, যানবাহনসহ মানুষের চলাচল বন্ধ ও সীমিত হওয়ার কারণে পরিবেশ ও প্রকৃতিতে সতেজতা পরিলক্ষিত হয়। বায়ু নির্মল, নদীর পানি স্বচ্ছ হওয়া থেকে শুরু করে গাছ-পালার সজীবতা এক অনাবিল প্রশান্তি সৃষ্টি করে। প্রকৃতি কবে মানুষের অত্যাচার থেকে এমন অবকাশ পেয়েছিল, তা বোধকরি কেউ স্মরণ করতে পারবে না। ধারণা করা হয়েছিল, করোনার কারণে মানুষের মধ্যে এ উপলব্ধি আসবে, যে নির্মল ও সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, তা যাতে আর নষ্ট না হয়। এ ব্যাপারে সচেতনতা ও সতর্কতা বাড়বে। তবে এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। করোনার মধ্যেও যে আরেক ভয়াবহ দূষণ অপেক্ষা করে আছে, তা কেউ ভাবেনি। করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে মানুষ মাস্ক, প্লাস্টিকের হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজারের বোতল ব্যবহার করছে, এর সাথে নিত্যদিনের প্লাস্টিক ও মেডিক্যাল বর্জ্যসহ অন্যান্য দূষণকারী উপকরণ মিলিত হচ্ছে। এতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ দূষণ কোনো স্বাভাবিক দূষণ নয়, এর সঙ্গে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ দূষণ রয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাভাবিক প্লাস্টিক ও মেডিক্যাল বর্জ্যরে পাশাপাশি করোনায় ব্যবহৃত মাস্ক, গøভস, স্যানিটাইজার বোতল যুক্ত হয়ে গত একমাসে রাজধানীতে সাড়ে ১৪ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে। এ এক ভয়াবহ চিত্র। দেখা যাচ্ছে, করোনা থেকে মুক্ত থাকার উপকরণই করোনা ছড়ানোর উপলক্ষ হয়ে উঠছে। প্রকৃতিকে করে তুলছে বিষাক্ত।
বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, মাটিদূষণ, পানিদূষণ দেশের নিত্যকার বিষয়। বায়ুদূষণে ঢাকা বেশ কয়েকবার বিশ্বের শীর্ষ স্থানে ছিল। এখনও শীর্ষ দশের তালিকায় রয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, করোনাকালে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার সময়ও এ দূষণ অব্যাহত ছিল। তার অর্থ হচ্ছে, দূষণ এমন মাত্রায় চলে গেছে, তা সহজে পরিশোধিত হতে চায় না। তবে শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় এ থেকে যে পরিমাণ তরল বিষাক্ত কেমিক্যাল এবং রাজধানীর গার্হস্থ্য আবর্জনা বুড়িগঙ্গাসহ চারপাশের নদীতে পড়ে পানিকে বিষে পরিণত করেছিল, করোনাকালে তার বেশ উন্নতি ঘটেছে। এসব নদ-নদীর পানিতে স্বচ্ছ পানিপ্রবাহ দেখা যায়। যে বুড়িগঙ্গার পানি এত বিষাক্ত যে, এতে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই, তাতেও স্বচ্ছ প্রবাহ পরিলক্ষিত হয়। স্বাভাবিকভাবে পানিতে প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ৬ মিলিগ্রাম থাকা জরুরি। দেখা গেছে, করোনাকালে দূষণ বন্ধ থাকায় বুড়িগঙ্গার পানিতে অক্সিজেনের পরিমান ৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। শব্দদূষণও কমে এসেছে। ফলে রাজধানীতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আগমন এবং এগুলোর কিচির-মিচির শব্দ ঘরবন্দী মানুষকে মোহিত করে। রাজধানীর পরিবেশে ব্যতিক্রম দৃশ্যও দেখা যায়। আরও ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখা যায়, যখন মানুষ করোনা প্রতিরোধী উপকরণ মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজারের বোতল ব্যবহার করে যত্রতত্র ফেলে রাখে। এ এক ভয়ংকর দৃশ্য। একদিকে করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে এসব উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে, অন্যদিকে সেগুলোই যেখানে-সেখানে ফেলে পরিবেশকে ভয়াবহ দূষণের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অথচ করোনা থেকে বাঁচার প্রথম শর্তই হচ্ছে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা। এ বিষয়টি যেন সকলে ভুলে বসে আছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এসব করোনাবর্জ্য ও সাধারণবর্জ্য সাথে সাথে পরিস্কার করার জন্য সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবার আগে সচেতন হওয়া দরকার ছিল। পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলে বলছেন, করোনা লকডাউনে বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস, টেলিকমিউনিকেশন কর্তৃপক্ষ যদি নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যেতে পারে, তবে বিষাক্ত বর্জ্য অপসারেণে সিটি করপোরেশন কি ঘুমিয়েছিল? তারা কেন এসব বর্জ্য অপসারণে বিশেষ উদ্যোগ না নিয়ে চুপচাপ বসে রয়েছে? এখন এসব বিষাক্ত ও করোনাবাহক বর্জ্যরে প্রতিক্রিয়া ও ক্ষতি কি সিটি করপোরেশন এড়াতে পারবে? যেখানে সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সরকারের সহায়ক শক্তি না হয়ে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য পরিস্কারের উদ্যোগ না নেয়া কি অসহযোগিতার শামিল নয়? যে কোনো দুর্যোগকালে কি কি সমস্যার উদ্ভব হতে পারে তা আগাম ধারণা করে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুতি নিতে হয়। রাজধানীর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ করে সিটি করপোরেশনে এ ধরনের উদ্যোগ খুব কম নিতে দেখা যায়। করোনাকালে যে ওয়ান টাইম ইউজড মাস্ক, গøভস ও স্যানিটাইজারের বোতলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে তা পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে, আগেই সিটি করপোরেশনের এ ধারণা করা এবং এ অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া উচিত ছিল। দুই সিটি করপোরেশন তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
করোনার অবসান কবে হবে, তা নিশ্চিত নয়। সহসা এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে বা করোনা বিদায় নেবে, এমন আশাবাদ দেখা যাচ্ছে না। ফলে মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে যেতে হবে। এতে বিষাক্ত বর্জ্য সৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। এসব করোনাবর্জ্য অপসারণ এবং ডাম্পিংয়ের যথাযথ ব্যবস্থাপনা সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে করতে হবে। এই বর্জ্য কিভাবে, কোথায় সংরক্ষণ করতে হবে, তার সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রণয়ন করে তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা প্রদান জরুরি। পাশাপাশি পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়াকে এ নিয়ে সতর্ককারী প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন প্রচারণা চালাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে যেমন সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে, তেমনি এসব ব্যবহৃত সামগ্রী যাতে পুনরায় করোনার সংক্রমণের বাহকে পরিণত না হয়, এদিকে সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।