বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দেশে বজ্রপাতের ভয়ঙ্কর রুপ দেখা যাচ্ছে। বজ্রপাত ও এতে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছেই। সাধারণত এপ্রিল মাসকে বজ্রপাত শুরুর মাস হিসাবে ধরা হয়। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বজ্রপাত হয়। কিন্তু এবার এপ্রিলেই ভয়ঙ্কর রুপ নিয়েছে বজ্রপাত। গত এক মাসে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে কমপক্ষে ৮৩ জন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় চার গুণ।
করোনাভাইরাসের কারণে চলমান পরিস্থিতিতে এ বছর বজ্রপাতে কম মৃত্যুর আশঙ্কা করেছিলেন সংশ্নিষ্টরা। কিন্তু প্রথম মাসেই অনেক মৃত্যুর ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে তাদের। নিহতদের অধিকাংশই পুরুষ। এর মধ্যে অন্তত ২৫ জন কৃষক। বজ্রপাতে নিহতদের বেশিরভাগই কর্মঠ ব্যক্তি। এদের হারিয়ে একেকটি পরিবার দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। প্রাণহানি কমাতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় মোবাইল ফোনের টাওয়ারে লাইটেনিং এরস্টোর লাগানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তবে কম কাভারেজ ও ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় সরকার এ পদ্ধতির দিকে যাচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসীন বলেন, বিদ্যুতের খুঁটিতে এরস্টোর লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। বজ্রপাতের ভয়ে গত বছর সুনামগঞ্জের হাওরে ধানকাটা শ্রমিক যেতে চায়নি। ভয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত এক দশকে (২০১০ থেকে ২০১৯ সাল) দেশে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৮১ জন। ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৬ সালে চার দিনে ৮১ জনের প্রাণহানির পর নড়েচড়ে বসে সরকার। সে বছরই বজ্রপাতকে দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়।
বেসরকারি সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের হিসাব অনুযায়ী গত বছর এপ্রিলে বজ্রপাতে মারা গিয়েছিল ২১ জন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে সংগঠনটি বলছে, চলতি এপ্রিলে প্রাণহানি হয়েছে ৬২ জনের। তবে এ হিসাব হালনাদ নয়। এপ্রিলে বজ্রপাতে কমপক্ষে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফোরামের সমন্বয়ক মেহেরুন নেসা জানান, তারা এপ্রিলের সম্পূর্ণ তথ্য এখনও হালনাগাদ করেননি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল তিন দিনে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে ৩৬ জন। ২২ এপ্রিল ৬ জেলায় ১৪ জন, ২৩ এপ্রিল ৭ জেলায় সাতজন এবং ২৪ এপ্রিল ১২ জেলায় ১৫ জন মারা যায়। ৪ এপ্রিল শুরু হয় মৌসুমের প্রথম বজ্রপাত। প্রথম দিনেই মারা যায় তিনজন। এ পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগে। এরপর ঢাকা বিভাগে ১৮ জন, বরিশালে ১২, ময়মনসিংহে ১১, খুলনায় ৮, সিলেটে ৬, রংপুরে ৫ এবং রাজশাহীতে ৪ জন।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে পাহাড়ি ঢল এবং বৈরী আবহাওয়ায় গোলায় ধান তুলতে বজ্রপাতের হুমকি নিয়েই মাঠে রয়েছেন কয়েক লাখ কৃষি শ্রমিক। এপ্রিলে মারা যাওয়া অন্তত ২৫জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। যাদের অধিকাংশই ঘটনার সময় মাঠে বা ক্ষেতে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের গবেষণায় দেখা গেছে, এপ্রিলে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে কিশোরগঞ্জ, পটুয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুরে। তিন জেলায় প্রাণ হারিয়েছে ছয়জন করে। গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে পাঁচজন করে মারা যায়। হাওর এলাকা সুনামগঞ্জ এবং খাগড়াছড়িতে মৃত্যু চারজন করে।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবদুল মান্নান বলেন, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বজ্রবৃষ্টি বেশি হয়। বজ্রপাতের সময়সীমা ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। খোলা স্থানে বজ্রপাত হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। এ জন্য হাওরাঞ্চলে বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র বসানো যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব জিওগ্রাফির গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। বিশ্বে মোট বজ্রপাতের এক-চতুর্থাংশ বাংলাদেশে ঘটে বলে জানানো হয়েছে ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনেও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।