Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

২ হাজার বছরের কালো মৃত্যু এবং অন্ধকারাচ্ছান্ন স্মৃতি

মহামারীর শেষ : কবে, কীভাবে ২

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইবোলা রোগীদের দেশ থেকে আসা এক যুবক ইমার্জেন্সি রুমে পৌঁছলে কেউই তার কাছে যেতে চায়নি; নার্সরা লুকিয়ে পড়েছিল এবং চিকিৎসকরা হাসপাতাল ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। তিনি লিখেছেন যে, ড. মারে একা তার চিকিৎসা করার সাহস করেছিলেন, তবে তার ক্যান্সার এতটাই বাড়ন্ত ছিল যে, তাকে আরাম ও যত্ম দেয়া ছাড়া কিছু করার ছিল না। কয়েকদিন পর, পরীক্ষায় নিশ্চিত হয় যে, লোকটির ইবোলা ছিল না; তিনি এক ঘণ্টা পরে মারা যান। এর ৩ দিন পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইবোলা মহামারীর সমাপ্তি ঘোষণা করে।

ড. মারে লিখেছিলেন, ‘আমরা যদি অন্য কোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সক্রিয়ভাবে এবং চিন্তাভাবনার সাথে যদি ভয় ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত না হই, তাহলে ভয় অসহায় লোকদের ক্ষতি করতে পারে, এমনকি এমন জায়গাগুলিতেও কখনো কোনো মহামরীর সময়েও সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।’ তিনি লিখেছেন যে, একটি ভয় সংক্রমণের মহামারী জাতি, অগ্রাধিকার ও ভাষার সমস্যায় জট পাকিয়ে আরো মারাত্মক পরিণতি ঘটতে পারে।

কালো মৃত্যু এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন স্মৃতি : গত ২ হাজার বছরে স্নায়ূতে সংক্রমণ ঘটানো প্লেগ কয়েকবার আঘাত করেছে, লাখ লাখ লোককে হত্যা করেছে এবং ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করেছে। প্রতিটি মহামারী পরবর্তী সংক্রমণ বিস্তারের সাথে সাথে আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলেছে। ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটিরিয়ার এক ধরনের জাত থেকে এই রোগ হয়, যা ইঁদুরের শরীরে থাকা পোকার ভেতর বাস করে। কিন্তু স্নায়ূর প্লেগ, যা ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত হয়েছিল, এটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ফুসফুসের শ্লেষ্মার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। তাই কেবল ইঁদুর মেরেই এটি নির্মূল করা যায় না।

জনস হপকিন্সের ইতিহাসবিদ মেরি ফিসেল বলেছেন, ইতিহাবিদরা প্লেগের ৩টি ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাবের বর্ণনা দিয়েছেন: ষষ্ঠ শতাব্দীতে জাস্টিনিয়ার প্লেগ; ১৪ শতকে মধ্যযুগীয় মহামারী এবং আরেকটি মহামারী যা ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে শুরু হয়েছিল। মধ্যযুগীয় মহামারীটি ১৩৩১ সালে চীনে শুরু হয়েছিল। সেই সময় গৃহযুদ্ধের পাশাপাশি সংঘটিত এই অসুস্থতা চীনের অর্ধেক জনসংখ্যাকে হত্যা করেছিল।
সেখান থেকে প্লেগটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে বাণিজ্য পথে ছড়িয়ে গেছে। ১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ সালের মধ্যে এটি ইউরোপীয় জনসংখ্যার কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ লোককে হত্যা করেছিল। ইতালির সিয়েনার জনসংখ্যার অর্ধেক এতে মারা গিয়েছিল। ১৪ শতাব্দীর লেখক নোলো দি তুরা লিখেছিলেন, ‘মানব জিহ্বার পক্ষে এই ভয়াবহ সত্যটি বর্ণনা করা অসম্ভব।’

তিনি লেখেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, যে এমন ভয়াবহতা দেখেনি তাকে সৌভাগ্যবান বলা যেতে পারে।’
দি তুরা লিখেছেন, ‘সংক্রমিতদের বগলের নীচে এবং কুঁচকিতে ফুলে যেত এবং কথা বলতে বলতেই মারা যেত।’ লাশগুলো গর্তের ভেতর গাদা করে কবর দেয়া হতো। (চলবে)



 

Show all comments
  • sk pollok ১৪ মে, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    করোনা একটা আয়না। সেই আয়নায় আমরা আমাদের নৈতিক প্রতিচ্ছবি গুলো দেখেছি আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চাল চুরির পাশাপাশি ভিক্ষুকের জমানো টাকা দান করার মাধ্যমে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mamun Miah ১৪ মে, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    লেখাটা অনেক সুন্দর । অনেক ইতিহাস এখানে আছে। করোনা পৃথিবীকে অনেক কিছু শিক্ষা দিচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। কারো অস্ত্র আজ কাজে আসছে না। অনেক দেশ দাবী করত তারা স্বাস্থ্যখাত অনেক উন্নত । আজ দেখা যাচ্ছে কার স্বাস্থ্যখাত কত উন্নত । জনগণ যে এক্সফ্যাক্টর তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই করোনায় প্রতিয়মান আজকে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার কি হাল। আমাদের দেশ পুঁজিবাদী অর্থনীতির ফসল । যার কাছে আছে অঢেল সম্পদ, যার কাছে নাই তার চলার মত অর্থ আছে মাত্র; একটা প্রবাদ আছে “নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা”। এই অবস্থা। আজকে দেখেন এই বাংলাদেশে বহু ব্যবসায়ী আছে অর্থের কোন অভাব নেই কয়জন মানুষের পাশে এসে দাড়িয়েছে। খুবই নগণ্য। যা হাতে গুনে বের করা যায়। অবশ্য ব্যবসায়িদের সব সময়ই অভাব থাকেই । পৃথিবী আর আগের মত থাকবে না, যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত/মধ্যবিত্ত আছে তাদের উপর অর্থনৈতিক চাপ আরো বাড়বে, আমার মনে হয় তাদের আয় সীমা আর আগের মত থাকবেনা। স্বাস্থ্য খাতের ঝুকি তো দিন দিন বাড়ছেই তাতে কোন সন্দেহ নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Nirmal roy ১৪ মে, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
    লেখাটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। তবে আমার এক্সপেক্টেশন- করোনা পরবর্তী বিশ্ব অনেকটা মানবিক হয়ে উঠবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Rashed ১৪ মে, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
    ভালো লেগেছে পড়ে । কিছু ইতিহাস জানা গেল অতিসংক্ষেপে । যদি এর প্রতিটি প্রকৃত তথ্য ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে অন্যভাবে আর বিশদ ভাবে লিখিত হয়ে আছে । সবচেয়ে ভাল বিষয় হলো ইতিহাসের এই সব এক একটা বিষয়ের জন্যে পুরো একটা ভলিউম পড়া লাগে সেখানে এখানে ক্ষেত্র বিশেষে এক লাইনে লেখা হয়েছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • MD. TAUHIDUL ISLAM ১৪ মে, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
    করোনা একটা আয়না, সেই আয়নায় আমরা জীবন-মৃত্যু, রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠান, নৈতিকতা ও সম্পর্ক—সবকিছুরই পরীক্ষা হতে দেখছি। আমরা জানছি আমরা কে, কী ও কেন। কঠিন অথচ নির্জলা সত্যি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ